somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রেজাউল করিম সাগর
হাড্ডি খিজিরের মত ঠোঁটকাটা হইতে চাই শেষমেশ ওসমান অরফে রঞ্জু হয়াই দিন কাটে। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছা কী আছিলো সেইটা অনুভব করার খুব শখ আছিলো, জীবনদা তো আর নাই। তার কথা মনে হইলেই শোভনার ব্যর্থ প্রেমিক, লাবণ্যের ব্যার্থ স্বামী মনে হয়।

মেঘে ঢাকা তারা।। মুভি রিভিও।। ঋত্বিক ঘটক

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঋত্বিক ঘটকের বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'মেঘে ঢাকা তারা' - র নামেই তার বায়োগ্রাফিকাল মুভিটি পরিচালনা করেন কমলেশ্বর মুখার্জি। এখানে মূল চরিত্র নীলকণ্ঠ বাগচী মানে ঋত্বিক ঘটকের ভুমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন শাশ্বত চ্যাটার্জি। তার অভিনয়ের মধ্যে পুর্ববাংলার ভাষায় কথা বলা ব্যর্থ চেষ্টাটা বেশ শ্রুতিকটু লেগেছে। আর কিছু কিছু জায়গায় ওভারএকটিং মনে হয়েছে, যুক্তি-তক্কো-গপ্পে ঋত্বিক ঘটক স্বয়ং অভিনয় না করলে হয়তো তুলনা করতে পারতাম না আসলে এখানে ওভারএকটিং হইছে কিনা। মানসিক হাসপাতালের ডাক্তারের ভূমিকায় আবির চ্যাটার্জি আর নীলকণ্ঠ বাগচীর স্ত্রী দুর্গার চরিত্রে অনন্যা চ্যাটার্জি ছিলেন অনবদ্য । আবির চ্যাটার্জির সাথে আলাপে আলাপে মানসিক হাসপাতালে বসে বয়ান করা হয় নীলকণ্ঠ বাগচীর গল্প।

সাওতাল মেয়েটার অভিনয় ভালো লেগেছে। ঋত্বিকের মুভির ফিলোসফি, মানবিক চরিত্রের বেশিরভাগই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক মশাই। পাশাপাশি উঠে এসেছে তৎকালীন থিয়েটারের অবস্থা, শিল্পীর রাজনৈতিক অবস্থান, সামাজিক আর রাজনৈতিক অস্থিরতা। তবে ঋত্বিকের চলচ্চিত্রের কিছু সিন এই চলচ্চিত্রের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়াটা এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে পছন্দের অংশ। ব্যর্থ কবিদের আদর্শ সম্ভবত জীবনানন্দ দাশ, যেসব নতুন ফিল্মমেকার নিজের পয়সা খরচ করে বড় স্বপ্ন নিয়ে মুভি বানিয়ে দর্শকের সাড়া পাননি তাদের জন্য ঋত্বিক ঘটকই প্রেরণা হতে পারেন।




ঋত্বিক ঘটকের তেজি, প্রতিবাদী, সমাজকে কাটাছেড়া করে দেখানো চলচ্চিত্রগুলো সেরকমভাবে দর্শকপ্রিয়তা পায়নি। আর বর্তমান সময়েও সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা তার কিয়দংশও ঋত্বিককে নিয়ে নাই। তবে চলচ্চিত্র যাদের ধ্যানজ্ঞান তাদের কথা আলাদা। বাংলা সিনেমা নিয়ে কাজ করবেন আর ঋত্বিকের কড়া আচে ঝলসাবেন না এইটা সম্ভব না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং দেশভাগ পরবর্তী সময়ে বাংলার মানুষের দুর্দশা তাঁর চলচ্চিত্রে একদম নগ্ন বাস্তবতার মত দৃশ্যমান। গল্প লেখা দিয়ে শুরু, মাঝখানে থিয়েটার করা তারপরে চলচ্চিত্রে আসা। নিজের এই মাধ্যম পরিবর্তন নিয়ে তাঁর অভিমত হচ্ছে যে মাধ্যমে নিজের আইডিওলজি বেশি মানুষের মগজে পৌছে দেয়া যায় ততই ভালো, আর তাঁর কথা হচ্ছে চলচ্চিত্রের মত ভালো কোন মাধ্যম এখন নেই। থাকলে একে লাথি মেরে তিনি চলে যেতেন সেই মাধ্যমে। কারণ আগাগোড়াই একজন বিপ্লবী শিল্পী ঋত্বিক ঘটক।

তাঁর মেঘে ঢাকা তারা, সূবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, বাড়ি থেকে পালিয়ে, অযান্ত্রিক, যুক্তি-তক্কো-গপ্পো সবগুলো চলচ্চিত্রই তীব্রতম সুন্দর জীবনের কথাই বলে। মানুষের ধুলোমলীন, ব্যর্থ, আধপেটা জীবন আর তার উপর রাজনৈতিক লালসার বলি হয়ে তছনছ হয়ে যাওয়া জীবনের আপনার শিল্পী ঋত্বিক। দেশভাগের সিদ্ধান্তে পাগল্প্রায় বুদ্ধিজীবী ঋত্বিক আমাদের হ্যামার করে বোঝাতে চান অনেককিছুই। আমরা কেউ কেউ বুঝি, কেউ বুঝিনা। কিন্তু শিল্পীর চেষ্টা থামেনা, থামতে পারেনা। 'নিজের পায়ে নিজের পথে' বইতে ঋত্বিক তার চলচ্চিত্র নিয়ে বলেন -


" “ আমি কোন সময়ই একটা সাধারণ লুতুপুতু মার্কা গল্প বলিনা - যে একটি ছেলে একটি মেয়ে প্রেমে পড়েছে প্রথমে মিলতে পারছে না, তাই কষ্ট পাচ্ছে। পরে মিলে গেল বা একজন পটল তুলল - এমন বস্তাপচা সাজানো গল্প লিখে বা ছবি করে নির্বোধ দর্শকদের খুব হাসিয়ে - কাঁদিয়ে ঐ গল্পের মধ্যে involve করিয়ে দিলাম। দু মিনিটেই তারা ছবির কথা ভুলে গেল, খুব খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল - এর মধ্যে আমি নেই।

আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব it is not an imaginary story. বা আমি আপনাকে সস্তা আনন্দ দিতে আসিনি। প্রতি মুহূর্তে আপনাকে hammer করে বোঝাব , যা দেখছেন তা একটি কাল্পনিক ঘটনা, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে যেটা বোঝাতে চাইছি সেই thesis টা বুঝুন। সেটা সম্পূর্ণ সত্যি। সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্যই আমি আপনাকে alienate করবো প্রতি মুহূর্তে।

যদি আপনি সচেতন হয়ে ওঠেন, ছবি দেখে বেরিয়ে এসে বাইরের সেই সামাজিক বাধা বা দুর্নীতি বদলানোর কাজে লিপ্ত হয় ওঠেন, আমার protest কে যদি আপনার মধ্যে চারিয়ে দিতে পারি, তবেই শিল্পী হিসেবে আমার সার্থকতা।

--------- ঋত্বিক ঘটক ( নিজের পায়ে নিজের পথে)


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×