somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

*কালজয়ী*
গবেষক, পাঠক ও লেখক -- Reader, Thinker And Writer। কালজয়ী- কালের অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা Time। কালজয়ী অর্থ কোন নির্দিষ্ট সময়ে মানুষের মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতা ও লেখনীর বিজয়। বিজয় হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী চিন্তার বিজয়।

বিপন্ন সৈকতের পাখী

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখির দেখা মেলে বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে। আমাদের দেশে যেসব সৈকতের পাখী দেখা যায় তার বেশীরভাগই পরিযায়ী। নান্দনিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।





বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ উপকূল। উজান থেকে বয়ে আসা পলি মাটি জমা হয়ে এই উপকূলীয় অঞ্চলে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ও উপকূলীয় চরাঞ্চল বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরনে মুখরিত থাকে। স্থানীয় পাখির পাশাপাশি শীতকালে প্রচুর সংখ্যক পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে এই চরগুলোতে। স্থানীয় ও পরিযায়ী এসব পাখির কিছু প্রজাতি জলাশয়ের পাশে সৈকতে বিচরণ করে। এদেরকে সৈকতের পাখী বলা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির জিরিয়া (Plover), জৌরালি (Godwit), গুরিন্দা (Curlew),গাঙচিল (Seagull), পানচিল (Tern), বাটান (Sandpiper) সহ আরো অনেক পাখী। এরা সারাদিন কিচিরমিচির শব্দ আর প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে তোলে উপকূলের দ্বীপগুলো। একসাথে কয়েকশ পাখির ওড়াউড়ি আকাশে দু-এক চক্কর দিয়ে আবার এসে পানিতে নামা কিংবা পানিতে ডানা ঝাপটানোর অসাধারণ সেই দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। তবে আবাসস্থল কমে যাওয়া, খাদ্যাভাবসহ বিভিন্ন কারণে সৈকতের পাখির বেশীরভাগ প্রজাতি বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।



সৈকতের বিচরণকারী ছোট আকারের পাখী জিরিয়া (Plover) বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এরা লোনাপানির ধারে নদীর মোহনায় বালুচরে বিচরণ করে। বেশ চঞ্চল এই পাখিগুলো ছোট বা বড় ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। কালো লেজ জৌরালি (Godwit) এদেশের পরিচিত সৈকতের পাখিদের মধ্যে অন্যতম বিপন্ন পাখী। সৈকতের কাদাময় স্থানে বা অগভীর পানিতে কয়েকশ জৌরালি (Godwit) একসাথে বিচরণ করে। সৈকতের পাখির অপর একটি দলে আছে বিভিন্ন প্রজাতির বাটান (Sandpiper)। অন্যান্য সৈকতের পাখির দলের সাথে মিশে থাকে পাতি বাটান, সবুজ বাটান, গুলিন্দা বাটান ও নুড়ি বাটান। একসময় বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্র সৈকতে এদেরকে প্রচুর দেখা গেলেও এখন কমে গেছে। শীতকালে আমাদের দেশের উপকূলীয় চরে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন চামুচ ঠুঁটো বাটান পাখী পরিযায়ী হয়ে আসে। ভাঁটার সময় সিক্ত সৈকতে ছোট ছোট বাটানের দল খাবার খোঁজায় ব্যস্ত সময় পার করে। উপকূলীয় অঞ্চলের আরেকটি বিপন্ন পাখী কালা মাথা কাস্থেচরা। এর দেহ সাদা তবে গলা, মাথা এবং কাস্থের মত বাঁকানো চঞ্চু দেখতে কালো। শীতকালে উপকূলীয় জলের পাড় ঘেঁষে পানিতে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কাস্থে চড়ার মত লম্বা চঞ্চুধারি আরেকটি পাখী পাকরা উলটিঠুটিও বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ঘন কালো চঞ্চু অত্যন্ত সরু এবং উপরদিকে বাঁকানো। তুষার শুভ্র দেহে লম্বা কালো দাগ এদেরকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এই পাখিরাও সাধারণত দল বেঁধে থাকে এবং সৈকতে খাবার খুঁজে বেড়ায়। সৈকতের অন্যান্য পাখির মধ্যে পাতি সবুজপা (Common Greenshank)এবং পাতিলালপা (Common Redshank) পাখিও বিপন্ন। সরু লম্বা পায়ের রং সবুজ ও লাল হবার কারণে এদের এমন নাম। এদের লম্বা ঠোটের অগ্রভাগ উপরের দিকে কিছুটা বাঁকানো। এরা উপকূলের বালিয়াড়িতেই বেশি বিচরণ করে।



গাঙচিল (Seagull) ও পানচিল (Tern) আমাদের উপকূলীয় জলচর পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে প্রায় ১৮ প্রজাতির গাঙচিল (Seagull) ও পানচিল (Tern) দেখা যায়। এদের মধ্যে খয়রামাথা গাঙচিল, কালামাথা গাঙচিল, পাল্লাসি গাঙচিল উপকূলীয় সৈকতে বিচরণ করে। উপকূলীয় সৈকতে আরো দেখা যায় ছোট পানচিল, নদী পানচিল, কালোঠোঁট পানচিল সহ বেশ কয়েক প্রজাতির পানচিল। এই গাঙচিল ও পানচিলের বেশীরভাগ প্রজাতিই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এরা শিকারের সন্ধানে পানির কাছাকাছি উড়ে বেড়ায়। কখনো কখনো একঝাক গাঙচিল সৈকতে দাড়িয়ে বিশ্রাম নেয়। গাঙচিল, পানচিল পরিবারের আরেক সদস্য দেশী গাংচশা (Indian Skimmer)। শীতকালে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দেশী গাংচশার আগমন ঘটে এবং নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দেখা মেলে। কমলা-হলুদ রঙের লম্বা আকর্ষণীয় ঠোঁটের এই পাখিটিও বিপন্ন। বিশেষত সৈকত ও বালুচরই এদের আবাসভূমি এবং সেখানেই প্রজনন করে। সৈকতের এই পাখিরা ইকোসিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অথচ আমাদের অসচেতনতা ও বিরুপ কর্মকাণ্ডের কারণে এসব পাখির আবাসস্থল ও প্রজননভুমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সৈকতের পাখীদের জন্য বিপদসংকুল হয়ে উঠছে উপকূলীয় চরাঞ্চল। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, জলাশয় দূষণ ও সৈকতে মাছ ধরার ঝাল পেতে রাখার কারণে বেশ কিছু সৈকতের পাখির অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। তাই জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সৈকতের পাখী রক্ষা করা সম্ভব। উপকূলীয় ইকোসিস্টেম সুস্থ রাখার মাধ্যমে বিপন্ন সৈকতের পাখী সংরক্ষনের পাশাপাশি নিশ্চিত করা সম্ভব সেখানকার সুস্থ পরিবেশ।



লেখক ও প্রকৃতিপ্রেমী

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০২
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×