somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরাপত্তাহীন আমি , তুমি কিংবা আমরা-১ ম পর্ব

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঠোঁটের পাশে কেমন জ্বালা জ্বালা করছে। কপালের এক পাশটা ফুলে আছে , একটা চোখ ভাল করে খুলতে পারছে না , কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ, ঠিক মত হাঁটা যাচ্ছে না। পা টা টেনে টেনে হাটতে হচ্ছে। ওরা ও কে এমন ভাবে যত্র তত্র মেরেছে যে শরীরের ঠিক কোন জায়গায় ব্যাথা করছেনা বলা মুশকিল । রাত ক'টা বাজে ? মধ্যরাত মনে হয়, চারদিকে শুনশান নীরবতা, ল্যাম্পপোস্টের জন্ডিসরুগীর চোখের মত আলোগুলো জলছে ঠিকই, কিন্তু খুব একটা আলো রাস্তা পর্যন্ত আসেনা । দুরে একটা কুকুর ডেকে উঠলো, গা ছমছমে নিস্তব্ধতা । কাজল চোখ রগড়ে নিল বহুক্ষন বাধা থাকায় চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে। বুঝতে পারছেনা যারা ও কে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তারা ও কে না মেরে ছেড়ে দিলো কেন ? তাও মাঝরাতে এমন নির্জন রাস্তায় । ব্যাথায় শরীর কেঁপে কেঁপে জানান দিচ্ছে কাজল ভাল নেই ।
এই রাস্তা টা কোথায় গিয়ে মিশেছে, কোন দিক দিয়ে হাঁটা দিবে আশে পাশে কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার, দুরে কিছু দালান কোঠা দেখা যাছে মাঝে মাঝে জমাট বাধা কাল আধাঁর। ওগুলো যে আসলে কি এত দুর থেকে ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না ।
কাজল হাঁটা শুরু করল, হাটছে হাটছে হাটতে হাটতে পড়ে যাচ্ছে,
বেকে -কুকড়ে যাচ্ছে,ঘেমে যাচ্ছে তবুও পিপাসার্ত কাজোলের পথ ফুরোয় না। হাতের বায়ে ট্রাক স্ট্যান্ড, কিছু লোক ঘুমাচ্ছে আর কিছু মদ খেয়ে বিলাপ বকছে । অন্য কোন সময় হলে এ দৃশ্য দেখে বিরক্ত হত কাজল কিন্তু আজ এতক্ষন পর মানুষের দেখা পাওয়ায়
খুব খুশী হল, তার মানে সে লোকালয়ের দিকে এগুচ্ছে, বেঁচে যাবে কাজল মরবে না পথের পাশে তার লাশ উপুড় হয়ে পড়ে থাকবে না !কবি মহাদেব সাহার একটা কবিতা মনে পড়ছে কাজলের

ভুলে-ভরা আমার জীবন, প্রতিটি পৃষ্ঠায় তার
অসংখ্য বানান ভুল
এলোমেলো যতিচিহ্ন; কোথাও পড়েনি ঠিক
শুদ্ধ অনুচ্ছেদ
আমার জীবন সেই ভুলে-ভরা বই, প্রুফ দেখা
হয়নি কখনো।

আমার জীবন এ আগাগোড়া ভুলের গণিত,
এই ভুল অঙ্ক আমি সারাটি জীবন ধরে কষে কষে
মেলাতে পারিনি
ফল তার শুধু শূন্য, শুধু শূন্য, শুধু শূন্য।

আমার জীবন একখানি স্বরচিত ভুলের আকাশ
আমি তার কাছ থেকে কুড়াই দুহাত ভরে
কেবল স্বপ্নের হাড়গোড়।

হা হা হা একেই বলে মানুষ, মৃত্যুর মুখ থেকে সদ্য ফিরে আসা যুবকের মনে এখন কবিতা ! একটা ভাত ও মাছের হোটেল , সামনের বেন্চিতে ২/৩ জন লোক বসে গল্পে মশগুল হয়ে চা খাচ্ছে।
ভিতরে বেন্চিজোড়া দিয়ে দোকানের ২ কামলা অঘোরে জড়াজড়ি করে ঘুমাচ্ছে। বড় তাওয়ার ওপাশে বৃদ্ধ একজন চা বানাচ্ছেন আর রেডিও তে ভুতের গল্প শুনছেন । কাজল কোনোমতে যেয়ে বেন্চিতে বসল , আর পা চলেনা , খালি পায়ে এতটা পথ হেটে এসেছে ক্ষিধা আর পিপাসায় কাতর ছেলেটি,টাকা পয়সা তো আর নেই, ঘড়ি, মোবাইল কিছুই তো নেই, এক কাপ চা খাবার পয়সা কই পাবে ? মনে করতে পারছে না শেষ কখন কবে সে খেয়েছে ।

রাত ৩ টায় ছেড়া জিন্সের প্যান্ট আর রক্তে মাখা টি শার্ট পড়া খালি পা, মুখে মারাত্মক জখমের চিহ্ন নিয়ে ভদ্র ঘরের ছেলের মত দেখতে একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে দোকানের বেন্চিতে বসতে দেখে পাশের চা খাওয়া রত লোকগুলো উঠে গেলো,বুড়ো দোকানদার বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল কিছু খাবে কিনা । কাজল বলল ক্ষিধা আছে কিন্তু টাকা পয়সা নেই । দোকানদার কিছুক্ষনের মধ্যে ১ টা কলা,বনরুটি আর গরম চা দিয়ে গেল আর যেতে যেতে বলল বাবা কেন যে ছিনতাই করতে যাও দেখলাতো পাবলিকের প্যাদানি খাইতে কেমন লাগে ? এইসব ছাইড়া বাসের হেলপারি কর আর কিছু না হক রাইত বিরাইতে এমুন মাইর তো খাইতে হইব না। কজল উনার ভুল ভাঙ্গাতে চাইল না, চুপচাপ খাবার খেল। দোকানদারের কাছ ঠেকে জেনে নিল জায়গাটার নাম জিরাবো বাজার, শামনেই আশুলিয়া ব্রীজ । "তুমি কই যাইবা বাবা"
দোকানদার জিঙ্গেস করল। "মিরপুর কালশী " ছোট্ট উত্তর কাজলের।
বৃদ্ধ তাকে আসস্ত করলেন , সকাল ৫ টার দিকে এখানকার এলাকার গার্মেন্টসের স্টাফ বাসগুলো ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটে অফিসারদের আনতে যায়, এগুলোর যে কোন মিরপুর রুটের বাসে করেই সে বিনা পয়সায় যেতে পারবে । ততক্ষন কাজল একটু বিশ্রাম নিল, দোকানের পিছনের বাথরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে এল। চোখে দুটোতে রাজ্যের ঘুম, না ঘুমাবেনা সে ঘুমিয়ে গেলে যদি দেখে আসলে ওরা ওকে মেরে ফেলেছে , কাজল আসলে বেঁচে নেই, এসবই মিথ্যা ওর মনগরা কাহিনী।
ভোর ৫ টায় হামিম গার্মেন্টেসের স্টাফ বাস এ পথ ধরেই মিরপুর যাচ্ছিল বৃদ্ধ দোকানদার কাজল কে উঠিয়ে দিল তাতে, কোনোমতে সিটে হেলান দিয়ে বসে ছিল কাজল। বাস বর্ষার এই ভরা মৌসুমে
থৈ থৈ পানির বুকে এক চিলতে পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যায়। আশুলিয়ার এই রাস্তায় পর পর ৩ টি ব্রীজ একে বেকে গেছে সরু নদীটি যা বর্ষায় হয়ে উঠে পূর্নযৌবনা । যেদিকে চোখ যায় সাদা পানি আর পানি মাঝখানে ভয়ঙ্কর সুন্দর এক চিলতে রাস্তা। বেড়ী বাধ পেড়িয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা ছাড়িয়ে বাস এগুতে থাকে ধীরে ধীরে, ভোরের বৃস্টিতে খুব বেশীদুর চোখ যায় না তবুও কাজলের চোখে ভেসে উঠছে একের পর এক সব ঘটনা,মনে পড়ছে সবকিছু।

++++++++++++++++++++++++চলবে ।
কৃতঙ্গতা : অনেকদিন আমি লিখতে পারিনি , মনে হত আমার দ্বারা আর যাই হোক লেখা হবে না, কিনত্ত আমি বুঝতে পারিনি আমার মত একজন ক্ষুদ্র মানুষেরও কিছু পাঠক বন্ধু আছেন যাদের অনবরত উৎসাহ আমাকে লেখার অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে । ধন্যবাদ দিয়ে আপনাদের ছোট করবার ধৃষ্টতা দেখালাম না ।
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই লেখা বলা নয়....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩১



বকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই বলা/ লেখা নয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জনসংহতি নষ্ট করা রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণবিপ্লব পরবর্তী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী তবে সেটা আমাদের মন মতো হতে হবে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮

সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। সামু কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ পুজা উপলক্ষে সুন্দর ব্যানার আপলোড এর জন্য।


হিন্দু ভাই বোনদের বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। আমাদের এই বাংলাদেশ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান... ...বাকিটুকু পড়ুন

A Journey by Rickshaw with Rakeen and Rakeen’s Mom!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৪০

ছোট বেলায় আমাদের এই রচনাগুলো বাংলায়, ইংরেজীতে নোট করে মুখস্থ রাখতএ হতো, পরীক্ষায় আসবে বলে। একটা না একটা এসেই যেত!

রচনা আরো ছিল, একটি বটগাছের আত্মকাহিনী, একটা রেললাইনের আত্মকাহিনী, একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×