আগের পর্বের লিঙ্ক: Click This Link
সপ্তাহে সাত দিন। প্রতিদিন ছয় ঘন্টা করে। আর যাওয়া আসা এক ঘন্টা।
একমাস চলল অমানুষিক পরিশ্রম। এবার পারিশ্রমিকের অপেক্ষা।
তূর্য ক্লাস করাচ্ছিল। পরিচালক মহাশয় সাড়ে তিন হাজার টাকা তূর্য'র হাতে গুঁজে দিলেন। বললেন, বাকিটা পরে দেবেন।
কথায় বলে "কম শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর"। তূর্য'র পাথর হওয়ার দশা। কোনো কথা বেরোচ্ছে না মুখ থেকে।
সামনে ইদ। পকেটে নেই কানাকড়ি। ধারদেনায় জর্জরিত। এই অবস্থায় সাড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে কী করবে সে?
একটা মেসে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেখানে থাকা-খাওয়া বাবদই পাঁচ হাজারের ওপর যায়। হাতখরচ বা অসুখবিসুখ বা অন্যান্য খরচ বাবদ কমপক্ষে হাজার তিন যায়।
ছোটন স্যারের কাছ থেকে হাজার পাঁচেক টাকা ধার নেওয়া। ইদের আগে শোধ দেওয়ার কথা। ওনি নিজেও ধার করে টাকা টা তূর্যকে দিয়েছেন।
বান্ধবী রনিয়ার কাছ থেকে হাজার দুই ধার নেওয়া। তাকেও টাকা টা ফেরত দেওয়া প্রয়োজন।
এখন এসব টাকা সে ফেরত দেবে কীভাবে?বাড়ির জন্যও তো কিছু কেনাকাটা প্রয়োজন।
ঘরের ভেতর পায়চারি করছে তূর্য। প্রেশার লো হয়ে গেছে। টেনশন বাড়লে মাঝেমধ্যে এমন হয় তার।
"প্রাণ" এ সপ্তাহখানেক চাকরি করার স্মৃতিটা মনে পড়ল।
মালিবাগ থেকে টানা সাত দিন রামপুরা গিয়েছে। প্রতিদিন ডিউটি ছিল নয় ঘন্টা। যাওয়া আসা বাবদ বা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা সহ সময় গিয়েছে মোট দশ ঘন্টার ওপর।
সাত দিন ডিউটি করার পর চাকরিটা ছেড়ে দেয় সে। শরীর কুলায় নি। আবার বেতনও ছিল মাত্র দশ হাজার।
সাত দিন ডিউটি করায় কানাকড়িও পায় নি সে। পণ্ডশ্রম গেছে।
তূর্য ভাবে এই সাত দিনে সত্তর ঘন্টা অহেতুক ডিউটি না করে ঘুমালেও উপকার হতো। আবার মনকে প্রবোধ দেয় এই বলে যে "টিকে থাকার চেষ্টা তো কম করলাম না"।
বাড়ি থেকে ফোন আসে, "কবে বাড়ি আসবি"?
তূর্য সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি যাবে না। শুধু শুধু খরচ। ইদের সময় ভাড়াও তো বেশি।
কিন্তু যাওয়া ছাড়া উপায় যে নেই। একা একা ঢাকায় থেকেই বা কী করবে?
ট্রেনে যাওয়ার বন্দোবস্ত হলে ভালো হয়। কম পয়সায় যাওয়া যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ট্রেনের টিকিট শেষ। অগত্যা বাসে যাওয়াই স্থির।
শেষ ভরসা ছিল টিউশন তিনটে। টিউশন ভাগ্য বরাবরই খুব খারাপ তূর্য'র। কোনো সময়ই সব টিউশন থেকে টাকা পায় না।
ঢাকায় এসেছে ছয় মাস। আগে এলাকায় থেকে টিউশন করত। এখনও অনেকের কাছে টাকা পাওনা।
তূর্য টাকা চাইতে পারে নি, টাকাও উদ্ধার হয় নি। চাইলেও পেত কি না কে জানে।
একবার এলাকায় যাওয়ার পর ছেলেমেয়েরা তাকে কিছু উপহার দিল। খুশি হওয়ার কথা অথচ খুশি হওয়ার সুযোগ কই? তার পাওনা টাকা থেকেই তো উপহার।
যাহোক, ইদের সময় ঘনিয়ে আসে। কবে টিউশনির টাকা হাতে আসবে সে আশায় বসে আছে তূর্য। ইদ তিন তারিখ। হাতে সময় মাত্র দুই দিন।
ইংলিশ ভার্সনের স্টুডেন্টের বাসা থেকে পেল চার হাজার টাকা। সাথে শার্ট এবং প্যান্টের পিস উপহার। মনটা ভরে গেল তূর্য'র। সপ্তাহে পাঁচ দিন করে পড়াতে হয়। রাতের খাবারটাও দেওয়া হয়। মোটামুটি পুষিয়ে যায়।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পড়িয়ে পেল হাজারখানেক। বেশিদিন হয় নি অবশ্য। পনেরোদিন পড়িয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন। আর
মুগদার টিউশনি থেকে এল চার হাজার। সপ্তাহে চার দিন পড়াতে হয়।
১ তারিখ সকালে তূর্য গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সেখানে তার বৃদ্ধ মা-বাবা তার অপেক্ষায় বসে আছে। চিরচেনা গাঁয়ে ফিরে গিয়ে মাটির সোঁদা গন্ধ নিতে মন আনচান করছে তার।
২৬ বৈশাখ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
মালিবাগ, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫৩