
করোনার সময়টায় এলাকায় ছিলাম। সেখানে ব্যবসা শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত হই। টিউশনিতেও টাকা নেই। একসময় মনে হলো ঢাকায় গিয়ে কিছু করা দরকার। চলে এলাম ঢাকায়। এবং স্কুল ও হাউজ প্রোপারটিজের অ্যাকাউন্টটেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করলাম। মালিকের অবর্তমানে তার ছেলের অধীনে কাজ করি। ডিউটি ১০-৫। কিন্তু দেখা গেল আমাকে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত থাকতে হয়। বেতন মাত্র ১৫ হাজার।
বিল তৈরি করি। টাকা নিতে হয়, চেক নিতে হয়, ব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আলাদা খরচ পাই না। তাই টাকা বাঁচাতে হেঁটে এখানে সেখানে যাই।
চাকরিটা দরকার ছিল। কিছু চিনি না, জানি না। যাব কই? তাই ধৈর্য ধরে রইলাম। ভাবলাম ঠিকমতো কাজ করলে ভালো করতে পারব। অফিসের কাজ তো বটেই। মালিকের বাসায়ও কাজ করতে হয়। ছাদ পরিষ্কার। কেয়ারটেকার বাথরুম পরিষ্কার করে আর আমাকে তার দেখাশোনা করতে হয়। অতিরিক্ত কোনো পারিশ্রমিক নেই।
বিশেষ দিবসেও কোনো ছুটি নেই। অফিসের কাজ না থাকলে নিচে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দাড়োয়ানকে সাহায্য করতে হয়।
মালিকের ব্যবহার জঘন্য। সবার সাথে দুর্ব্যবহার করে। নিজের মায়ের সাথেও সম্পর্ক ভালো না। বনানীতে ওনাদের বাসায় গেলে মহিলা একবার নাস্তা দিয়েছিলেন। ওনার ছেলে এটা পছন্দ করেনি। এরপর নাস্তা তো দূরে থাক, বসতেও বলেনি। একবার অবশ্য বলেছিল। সদর দরজার কাছে একটা টুলে। মনে হয় ফকিরকেও কেউ এখানে বসতে দেয় না।
লেবাসে ধার্মিক মনে হয়। প্রথমদিন সালাম দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এটা নিয়ে অনেক কথা বলল। দেয়ালে দেয়ালে দোয়া টাঙানো। যে কেউই বলবে এরা চ্যালচ্যালাইয়া বেহেশতে যাবে।
একবার ওনার রুমে গেলাম। বসতে বললেন। কাজের মহিলা চা দিল আমাকে। কয়েক চুমুক দেওয়ার পর ওনার কাছে মনে হলো চা খেয়ে বেয়াদবি করছি। কাজের মহিলাকে ডেকে চা নিয়ে যেতে বললেন। পাশের রুমে অন্যরা সব শুনছে। বেশিরভাগই আমার জুনিয়র। এমন লজ্জায় খুব কমই পড়েছি। শুনেছি খাওয়ার সময় আজরাইলও জান কবচ করে না অথচ...
খাওয়ার বিষয় বাদ। জীবনে বহু রাত না খেয়ে থেকেছি, কিন্তু লাঞ্ছনার বিষয় বাদ দেই কেমনে? একসময় অসুস্থ হয়ে পড়লাম। কিন্তু বিরাম নেই। মালিককে বললাম, অফিসের একটা রুম মাঝেমাঝে ব্যবহার করতে চাই। এত লম্বা সময় বিশ্রাম ছাড়া থাকা যায় না। রাজি হলেন না তিনি। আমাকে অন্য চাকরি দেখতে বললেন।
আমার বদলি হিসেবে একজন এলো। তাকে কাজ বুঝিয়ে দিলাম। কিন্তু সে করবে না। মালিক হয়তো ভেবেছিল আমি তাকে না করেছি। যখন জানল এ নিয়ে আমি কিছুই বলিনি, তখন আমাকে বলল চাইলে থাকতে পারি।
স্কুলের একটা তলা ভাড়া দেবে। আমি যেন আমার নাম্বারটা টু লেটে দেই। আমি না করলাম। আজাইরা প্যারা নেওয়ার মুড নেই। মালিক বলল, “তোমাকে কেন রাখব তাহলে?” “আমি থাকতেও চাই না।” মুখের ওপর বলে দিলাম। আমার এমন জবাব শোনার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না। এরপর আর ওই চাকরিতে যাইনি। কিছুদিন পর দুই হাজার টাকা কেটে রেখে ১৩ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়। ২ হাজার কম দেওয়ার কারণ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




