প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
হৃদিতার হাত ধরার পর বেশ ভালো ই চলছিল আমাদের। প্রতি সেমিস্টার এ একসাথে কোর্স নিতাম ক্লাসের ব্রেকে পুরা শহরটা চষে বেড়াতাম দুজনায় । পড়াশুনার প্রতি আমার আজীবন অনীহা . পাগলীটা তারপরও পরীক্ষার আগে আমাকে জোর করে পড়াত । শেষ পর্যন্ত দেখা যেত ওটুকু পড়েই বেশ ভাল রেজাল্ট চলে আসতো ।
পাগলী আর আমি দুইজন ই দুজনকে ভালবাসি এটা আমরা দুজন ই জানি কিন্তু কখন হৃদিতা কে প্রপোজ করা হয় নি! হঠাৎ একদিন পাগলীর কি এক ভূত চাপল , অগ্নিমূর্তি নিয়ে আমার সামনে আসলো !
- ঐ তুমি আমাকে প্রপোজ করবা কবে ?
- প্রপোজ ? প্রপোজ করার কি আছে ?
তুমি তো জানো যে আমি তোমাকে ভালবাসি , জানো না ?
- এসব বললে হবে না, তোমাকে আমি এক সপ্তাহ টাইম দিলাম . এই এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে প্রোপোজ করতে হবে। আমি কিছু শুনতে চাই না।
- আরে বললেই হলো নাকি ? নেক্সট উইক থেকে সেমিস্টার ফাইনাল , এর মধ্যে এতো কিছু কিভাবে করবো ?
- আমি কিছু শুনতে চাই না ! আমি যা বলসি তাই করতে হবে ।
- কালকে রাতে কোন মুভি দেখসো বলো তো !
- " The Vow " , কত জোশ মুভিটা ! কত ভালবাসে ছেলেটা মেয়েটাকে !
- কেন কি করসে ? মাইয়াটার জন্য সুইসাইড খাইছে ?
- না , মেয়েটার মেমরি চলে গিয়েছিল ! তাও হাল ছাড়ে নি ছেলেটা । কত্ত ভালবাসে আর তুমি !! তুমি আমাকে মোটেও ভালবাসো না !
- আরে আজব! কি পাগলামী শুরু করছো ! মুভিতে যা যা করে তাই করা লাগবে নাকি আমার এখন ?
- নাহ! খালি প্রপোজ করতে হবে নাহলে ব্রেকআপ !
- এই সামান্য বিষয় নিয়ে তুমি আমার সাথে ব্রেকআপ করবা !
-আমি কিছু শুনতে চাই না ! প্রপোজ করতে বলসি করবা , নাহলে আমি তোমার কেউ না !
- আচ্ছা মা ! করবো প্রপোজ তোকে ! এখন ক্লাসে চল !
ওকে তো বললাম প্রপোজ করবো কিন্তু এরপর কয়েকদিন প্রপোজ কিভাবে করবো সে চিন্তায় আমার রাতের ঘুম হারাম হলো । কি থেকে কি করবো কিছু বুঝতে পারলাম না । এক এক ফ্রেন্ড এক এক রকম আইডিয়া দিল । অনলাইনে আবার হাজার রকম আইডিয়া ! এতো আইডিয়া পেয়ে বুঝতে পারলাম না কোনটা রেখে কোনটা করবো ।
শেষ পর্যন্ত ভাবলাম সাধারণ কিছু করা ই ভাল হবে!এজন্য নূপুর কিনলাম সুন্দর দেখে , এর সাথে হৃদিতার পছন্দের চকোলেট আর ১ টা লাল গোলাপ ! তারপর একটা বক্স এ সবকিছু রেখে বক্সটা ব্যাগে রাখলাম ।
সেদিন ক্লাস ছিলো না আমাদের । হৃদিতাকে ফোন দিলাম ,
-বনানী আসো তো !
-কেন ?
- আসতে বলছি তাই আসবা !
- আজকে তো ক্লাস নাই আমাদের !
- সেটা মনে হয় আমি জানি ।
- তো ?
- এমনি ভালো লাগতেছে না , তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করতেছে !
- আচ্ছা ! আসতেছি স্যার
হৃদিতা আধা ঘন্টার মধ্যে চলে আসলো । এসেই শুরু করলো
- তোমাকে না বলসি এই সপ্তাহের মধ্যে প্রপোজ করতে ! সপ্তাহ তো শেষ !
- কিসের প্রপোজ ? আমার দ্বারা এগুলা হবে না !
- না হতেই হবে !
- না আমার দ্বারা এসব ন্যাকামি হবে না ! মাফও চাই , দুয়াও চাই!
- আচ্ছা !
বুঝতে পারলাম ম্যাডাম রাগ করেছে ! রাগে গজগজ করতে করতে আগে আগে হাঁটতে লাগলো ! একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকলাম দুপুরের খাবার খেতে , এরপর গেলাম একটা পার্ক এ । পুরো রাস্তায় মেয়েটা আমার সাথে একটা কথা ও বলে নি ! রাগলে আমার পাগলীটাকে যা লাগে না!!! সব কিছু আমার ব্যাগের বক্সটাতে ছিল , হৃদিতাকে নিয়ে পার্কের একটা বেঞ্চে বসলাম , চুপিসারে বের করে নিলাম গোলাপটা , আর নূপুর জোড়া পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম । এরপর হৃদিতা যখন রাগে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল , তখন আস্তে করে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলাম
- হৃদিতা !!
- কি? তুমি এভাবে বসছো কেন ?
- ( পিছন থেকে গোলাপ টা নিয়ে )
আমার আমি হবে ?
আমার সত্ত্বা হবে ?
দিন শুরু করে দিন শেষে ?
সবটা জুড়ে ?
(এরপর পকেট থেকে বের করে নূপুর পরিয়ে দিলাম পায়ে )
দেখি পাগলীটার চোখে পানি ! হঠাৎ করে কান্নার আওয়াজ শুরু হল ! তারপর উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো !
- না হবো না কিছু! তোমার জীবন তছনছ করো দিব একদম !
- কি?
- আজ থেকে যদি কোন মেয়ের দিকে তাকাইছো তাহলে তোমার চোখ খুলে আমি বাস্কেটবল খেলবো!
- কি পাপ করলাম আমি প্রোপজ করে?
- চুপ থাক! নড়বে না !
তারপর এরকম কতক্ষণ কেটে গেল আমি আর হৃদিতা টের পাই নি , আস্তে আস্তে যখন দিনের অ্যালো কমতে থাকল তখন হুঁশ ফিরলো ! তাঁরপর হৃদিতা কে বাসায় দিয়ে এসে আমিও বাসায় ফিরলাম ! শেষ হল জীবন এর এক অন্যতম স্মৃতিমুখর দিন ! এখন যখন দিনটা নিয়ে ভাবি , হাসি চলে আসে মুখে , অফিস এ বসে সেদিনের কথা ভাবছিলাম আর হৃদিতার ফোন আসলো
- আসার সময় এক কেজি আলু আর এক কেজি লবণ নিয়ে আইসো তো!
- আর কিছু?
- সাথে নিজেকেও একটু নিয়ে আইসো তাড়াতাড়ি!
- কেন ? আমি তো এমনিতেই ফ্রি আসি !
- আজ কতো তারিখ মনে আছে?
- ও তাই তো আজকে তো ১৪ মে, এই দিনেই তো আমি তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম!আমি এক্ষুনি আসতেছি !
- জ্বি জনাব, আপনার বৌ আপনার ওয়েট করতেছি আপনার প্রিয় খাবার নিয়ে
(লেখাটি আবেগ আর কল্পনা নিয়ে লেখা । বাস্তব জীবনের সাথে মিল থাকতে পারে । ভবিষ্যৎ কেমন হবে কেও বলতে পারে না , কল্পনা করতে পারে মাত্র ।আর আমার বাংলা ভাষায় অনেক ভুল ত্রুটি আছে , আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )