somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

প্যারিস থেকে আমি
স্বপ্ন দেখি সত্য ও সুন্দরের।আহত হই সত্যের পরাজয়ে।মনের মাঝে কতশত এলোমেলো ভাবনা এসে জড়ো হয়।ভাবনা গুলো চাই সকলের সাথে শেয়ার করতে,কিন্তু সীমাহীন অযোগ্যতায় আর লিখা হয়না।ভাবনা গুলো গুমড়ে মরে সমাধিত হয় নীরবে।

গল্প: মায়ের পালকি (পর্ব এক)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দু'বারই আমি আমার মা'য়ের পালকির পিছু পিছু দৌড়িয়েছি।কিন্তু আমি আমার মাকে ছুতে পারিনি। ধরতে পারিনি তার কোমল হাতখানা। বলতে পারিনি,মা তুমি আমায় ছেড়ে যেওনা। দু'বারই আমি কেঁদেছি, অনেক কেঁদেছি। আমার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হলেও আমার মায়ের মন ভারী হয়েছে কি না আমি জানিনা। প্রথমবার, তা ও না হয় পালকিতে দেয়া পর্দা সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার, একটিবারের জন্যও পর্দা সরিয়ে আমার দিকে তাকান নি। কেন তাকান নি তা ও জানি না।

আমার বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন আমার বাবা কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারী হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডাক্তারের অবহেলা আর ভুল চিকিৎসায় কাতরাতে কাতরাতে মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর দাদার বাড়িতে আমার ও আমার মায়ের ঠাই হয় মাত্র একমাস। বাবার চল্লিশা হওয়ার আগেই তলপি তলপা সহ আমার মাকে স্বামীরবসতভিটা ছেড়ে হতদরিদ্র তার বাবার গৃহে চলে আসতে হয়,সাথে আমাকেও। ওখানে আমাকে কে রাখবে । বাবার সৎ ভাইয়েরা আমাকে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন নি। তাছাড়া আমি বিদেয় হলেই তাদের জন্য ভালো। যেটুকু জমি জমা আমার বাবার রয়েছে তারা সেগুলো ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিতে পারেন।

আমার নানার দুই ছেলে। অর্থাৎ আমার মামা দুইজন। দু'জনই আমার মায়ের বয়সে ছোট। তারা তাদের বোনকে খুব ভালবাসে। ভালবাসেন বলেই জমি বিক্রি করে তাদের থেকে অপেক্ষাকৃত ধনি পরিবারে তারা তাদের বোনকে বিয়ে দেন।যাতে করে তাদের বোন আরামে আয়েশে জিন্দেগী পার করে দিতে পারে। বিয়ের পর সেভাবে চলছিলোও। আমার বাবা মা কে খুব ভালবাসতেন,মা'ও। বাবা মায়ের ভালবাসা আর সুখে শান্তিতে দিন যাপন দেখে আমার নানা,মামুরাও খুব খুশি। তারা খুশি, অন্তত তাদের জমি বিক্রি করে মেয়ে- বোনকে বিয়ে দিয়ে তারা ঠকেন নি।

আমার বাবা আহামরি ধনি ছিলেন না।কিছু জমি জমা ছিলো ।আর ছোটখাট ব্যাবসা করেই চালাতেন তার মায়া মমতাময় ছোট্ট সংসারটি।তার বুকে ভালবাসাও ছিলো অফুরন্ত।তাই তার যা ছিলো এই সামান্য থেকে সৎ ভাইদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন।কিন্তু মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া একমাত্র সন্তানের ঠাই হয়নি তার হাতে গড়া বাড়িতে।

বলেছিলাম,বাবা মায়ের ভালবাসার কথা। আমার বাবা মা দুজনই দুজনকে খুব ভালবাসতেন। তাদের বিয়ে ও ভালবাসাবাসির মাখামাখির একবছরের মাথায় আমার জন্ম হয়। খুব খুশি আমার বাবা।জন্মের দিনই কয়েক কেজি জিলাপি পাড়াপ্রতিবেশিদের খাইয়েছেন। সাতদিন হতে না হতেই ঘটা করে দুইটা ছাগল জবাই করে আমার নামে আক্বিকা করেছেন।আমার বাবা আবার খুবই ধর্মপরায়ন ছিলেন। আমাদের নবী মুহাম্মদ (স)বলেছেন, মেয়ে হলে একটা ছাগল আর ছেলে হলে দুইটা ছাগল জবাই করে আক্বিকা করতে। তাই আমার বাবা নবীর কথানুযায়ি দুইটা ছাগল জবাই করেছেন। মসজিদের হুজুর খাইয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করিয়েছেন। বাবার খুশিতে মা'রও খুশি যেন আর ধরছেনা।খুশি আমার নানা ও মামুরাও।

আমার জন্মের বছর বাবার জমিতে ভালো ফলন হয়। বাবার ব্যাবসায়ও আয় উন্নতি হতে লাগলো।সবাই বললো, আমি নাকি খব লক্ষি। এমন লক্ষি সন্তান নাকি সচরাচর জন্ম নেয় না। আমার বাবা তার সফলতার কেন্দ্রবিন্দু আমাকে বানিয়ে ফেললেন। আমার প্রতি আদর মহব্বতও দিনদিন আরো বাড়তে লাগলো। প্রতিদিনই আমার বাবা আমার জন্য নতুন নতুন জামা কাপড় কিনে নিয়ে আসেন। আমার মা আমাকে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে দেন। আমার হাতে,গায়ে,মাথায় তেল মাখিয়ে দেন।মুখে ক্রীম লাগিয়ে,মাথার চুল আছড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে কপালে একটা চুমো দেন। তারপর বাবার সামনে নিয়ে গেলে বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন।কি যেন পড়ে আমার শরীরে ফু দিয়ে তার বুকের সাথে লেপটে ধরেন। আমার মা কে বলেন,বড় হলে আমার বেটা সাহেবদের মত হবে। আমাকে এটা সেটা খেলনাও কিনে দেন। নতুন কোন খেলনা দেখলে তা আমার জন্য কিনে আনবেনই। সারাদিন কাজের শেষে রাতে বাড়ি ফেরে আমাকে কিছুক্ষণ আদর যত্ন না করলে, আমার সাথে খেলা না করে আমার বাবা ভাত পর্যন্ত মুখে দেন না।

চলবে...........।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×