somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূত-পেত্নি বা জ্বিন-পরীতে বিশ্বাস করেন কে কে?

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে দয়াকরে নিচের কয়েকটি ঘটনা পড়ুন



• কুদ্দুস মিয়ার স্ত্রী হালিমা প্রেগনেন্ট। পেটে সন্তান আসার পর থেকেই হালিমার কেমন কেমন জানি লাগে। ঘুমালেই মনে হয় কাক পক্ষী তার পেট ঠোকরে দিতে আসছে। ভয়ে সে ঘুমায় না। বিয়ের পর কুদ্দুস ছাড়া শ্বশুর বাড়িতে কেউ তার সাথে ভাল ব্যবহার করেনি। বাবার বাড়িতেও হালিমা অভাব অনটনে বড় হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে তার ধারণা কেউ তাকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে চায়। তার মনে হয় শ্বাশুড়ি আর ননদেরা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঘুমিয়ে গেলেই পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করে দিবে।

• মুরাদ এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছে। পরীক্ষার আগে এতো পড়েছে যে এখনকার অবসরটা জঘন্য ভাবে কাটছে। একা একা থেকে নানান চিন্তা আসে তার মাথায়। গত কয়েকদিন থেকে মনে হল কেউ একজন তার মনের গোপন কথাগুলো জেনে যাচ্ছে। সে যা ভাবছে তাই তরঙ্গ আকারে কোন এক শক্তি জেনে যায়। মনে হয় অজানা কোন গ্রহের অজানা কোন শক্তির সাথে তার যোগাযোগ হচ্ছে। কাল সন্ধ্যায় একজন সাদা পোশাকের অদ্ভুত চেহারার মানুষ দেখেছে বারান্দায়। ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় মুরাদ। তারপর থেকে খুব জ্বর।

• ধার-দেনায় জর্জরিত আসাদ। এমএলএসএসের চাকুরী করে দুই মেয়েকে কলেজে পড়ায় সে। একটা ছেলে না থাকায় এমনিতেই হতাশ। বংশটা বুঝি রক্ষা হলো না। তবু দুই মেয়ের জন্য অনেক কষ্ট করেছে সে। নিজে যা হতে পারেনি দুই মেয়েকে দিয়ে সে স্বপ্ন পূরণ করবে। প্রায় বার লাখ টাকা ধার হয়ে গেছে তার। গতমাসে ব্যাংক নোটিশ পাঠিয়েছে। লোনের টাকা সুদ সহ পরিশোধ না করলে ভিটা বাড়ি কেড়ে নিবে। পরশু থেকে আসাদের কি যেন হয়েছে। বাড়ির বড়ই গাছটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একদিন খুব সকালে আসাদের স্ত্রী উঠে দেখে আসাদ বড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তার শরীরে কেরোসিন ঢালছে।

• ঘরে একলা থাকে মীরা। একটা এনজিওতে পাবলিকেশন অফিসার। সারাদিন পর ঘরে এসে তার অতীতের কথা মনে পরে যায়। কত স্বপ্ন নিয়ে বাবা মার অনুমতি ছাড়াই সোহেলকে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়। মীরা আর ঘরে ফিরে না। একা একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে। আজ ঘরে ফিরে মনে হলো এই ঘরে সে বাদেও আরো কেউ আছে। চোর ডাকাত না। অশরীরি কেউ। রান্না ঘরে ঢুকে মনে হলো সকালে রেঁধে যাওয়া মাছের টুকরা কম আছে। বিড়াল নয় অন্য কেউ চেটে পুটে তার খাবার খায়। বেডরুমে এসে লাইট জ্বালতেই গরম একটা বাতাস তার কানের কাছ দিয়ে চলে যায়। চিৎকার দেয় মীরা।

• সকাল থেকেই শহরের সেরা ধনী রাজীব সাহেবের সারা শরীরে জ্বলুনি হচ্ছে। মনে হচ্ছে চামড়ার নিচে অসংখ্য পিপড়ে হাটছে। অফিসের মিটিং কেনসেল পরিচিত ডাক্তার আলীমকে ফোন দিলেন রাজীব সাহেব। ডাক্তার বললেন একজন বন্ধু বা আত্মীয়কে নিয়ে ক্লিনিকে চলে আসতে। রাজীব সাহেব নিজের সবেচে কাছের বন্ধুটির কথা মনে করতে চেষ্টা করলেন। আশ্চর্য্য ছোটবেলা থেকে তার সত্যিই কোন বন্ধু নেই। যৌবনে শাহেদ নামের এক বন্ধু ছিল। শাহেদের মায়ের গয়না বিক্রির টাকা নিয়ে এসেছিল রাজীবের কাছে। লোভে পড়ে শাহেদকে খুন করে রাজীব। লাশটাও গুম করে ফেলে। এটাকা আজ বহুগুন হয়ে রাজীব এখন কোটিপতি। হঠাৎ করে তার গায়ের জ্বালাপুড়া কমে যায়। ঘরের ভেতর কেমন জানি উৎকট গন্ধ ভেসে আসে। আয়নায় হঠাৎ শাহেদের প্রতিবিম্ব দেখে রাজীব। বিছানায়ও আরেকটা শাহেদ বসে আছে। দরজায় আরেকটা শাহেদ দাঁড়িয়ে। এবার সবগুলো শাহেদ তার দিকে এগিয়ে আসছে।

হালিমা, মুরাদ, আসাদ, মীরা বা রাজীব সাহেবের ঘটনা আমাদের আশে পাশেই ঘটছে। সামান্য কিছু কাকতালীয় সমস্যা হলে আমরা তিলকে তাল বানিয়ে ভূতের গপ্পো হিসেবে অন্যের কাছে বলি। আগে গ্রামে বিদ্যুত ছিলনা। রাতের অন্ধকারে চাঁদের আলোতে নানানে আকৃতির ছায়া তৈরী হতো। বাতাসে তাল গাছের পাতা নড়লেও মনে হতো মামদু ভূতের ছানারা নাচানাচি করছে। আমার খালাতো ভাই একবার হুজুরের মার খেয়ে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়। আসলে বেচারা ঐ পরিবেশটা সহ্য করতে পারছিল না। সারা রাজ্য রটে যায় তাকে জ্বীনে ধরে নিয়ে গেছে। আমিও ছোটবেলায় একবার তিনতলা থেকে পড়ে গিয়েছিলাম। নিচের বড়বড় ঘাস ফোমের মতো কাজ করায় বেঁচে যাই। কিন্তু রটে যায় এক জ্বিন আমাকে ফেলে দিয়েছে আরেক জ্বিন লুফে নিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমার খুব রাগ বা জিদ ছিলো। একবার কাঁদতে কাঁদতে ভরা কলসী উঠিয়ে ফেলে দিই। ঐটুকুন শিশু কি করে কলসী উঠালো তা ভেবে সবাই মনে করতো আমার বুঝি আলগা দোষ আছে।

উপরের গল্পগুলো আর আমার জীবনের কিছু ক্ষুদ্র ঘটনার সাথে সত্যিকার অর্থে ”আলগা দোষের” কোন মিল নেই। বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত আমরা। সিজোফ্রেনিয়া বা ইনসোমনিয়া সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনি? বিজ্ঞান একটু ঘেটে দেখুন প্রয়োজনে ডাক্তারের সহায়তা নিন। জ্বিন ভূত বলতে সত্যিই কিছু নেই। এ চরিত্রগুলো মানুষেরই তৈরী। জানি কেউ হয়তো বলবেন ধর্মে আছে এসব প্রেতাত্মার কথা। বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন ধর্ম গড়ে উঠেছে। মানুষ তার প্রয়োজনেই ধর্ম তৈরী করেছে। আদিম চিন্তা চেতনা থেকে ২০১৭ সালে ফিরে আসতে হবে। বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে তাই অলৌকিকতার কোন স্থান নেই। ভূত-পেত্নি গল্প সিনেমায় ভাল লাগে, বাস্তবে সবই ভোগাস..
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২৪
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×