somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন ভক্তি-বিরক্তি ও বন্দনা

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে সম্ভবত ২০০১ সালের দিকে। আমার এক পড়ুয়া বন্ধুর টেবিলে। হুমায়ূন আহমেদের একটি ঢাউস সংকলনের মাধ্যমে। সেই ঢাউস সংকলনের নাম ছিলো ‘হুমায়ূন ৫০’। সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ায় সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সংকলন পেয়ে আমার স্ফূর্তির শেষ নেই! একসঙ্গে এতো লেখা! অনেক দিন ধরে পড়া যাবে। যদিও তার আগেই শরৎ, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ গেলা হয়ে গেছে।

বন্ধুর কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই ‘হুমায়ূন ৫০’ বইটি নিয়েছিলাম। তারপর একটানা পড়তে থাকা। ভালো-মন্দ হিসেব করে যারা বই পড়ে তাদের মতো বোধ তখনও সম্ভবত তৈরি হয়নি। মনে হচ্ছে- এখনো সে ভাবনায় পিছিয়েই আছি কিছুটা। সে কারণে পাওয়া মাত্রই অনেক বই পড়ে শেষ করি। যদিও এখন আর সেই আমি নেই, যে কিনা একসময় আড়াই কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে প্রতিদিন লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে আসতাম।

এখন এই ব্যস্ত ঢাকায় জীবনের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছি। বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। ‘হুমায়ূন ৫০’ পুরোটাই পড়েছিলাম। একটানা। কতো দিন লেগেছিল মনে নেই। একসঙ্গে অনেক লেখা পড়ার যে সুবিধা, সেটা আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। কিছুদিন পরই এতো লেখা, এতো ভিন্ন ভিন্ন গল্প ভুলে গেছি! কিন্তু আসলে সব তো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। আর সে জন্যই এখনো মনে আছে, ‘চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ এরকম নামের একটি উপন্যাসের কথা। খুব ভালো লেগেছিল।

আমার উপন্যাস পড়া শুরু হয়েছিল কাজী নজরুল ইসলামের ‘মৃত্যুক্ষুধা’ দিয়ে। এক বড় ভাই বইটি পড়তে দিয়ে বলেছিল, ‘এটা পড়ো। অনেক ভালো বই।’ আমি দু’দিনে পড়ে শেষ করেছিলাম। তারপর থেকে মেঝ বৌ চরিত্রটি আমার মনে গেঁথে থাকে। এখনো আছে। আমি মৃত্যুক্ষুধাকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উপন্যাস মনে করি। পড়ার পর মনে হয়েছিল, মানুষ এতো সুন্দর করে লিখতে পারে!

হুমায়ূন আহমেদ এসে মনের মধ্যে আর সেই অলৌকিকতা থাকেনি। মনে হয়েছে, এই তো আমার পাশের মানুষের চরিত্র এটি। আমার চেনা-জানা গল্প! কিন্তু আমি জানি না কিংবা আমি এর সবই জানি।

পরবর্তী সময়ে লিটলম্যাগ আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে হুমায়ূন আহমেদের অনেক গুণ (!) জানতে পেরেছি। তারা বোঝাতো হুমায়ূন আহমেদ আসলে সস্তা শ্রেণির লেখক। আমারও মাঝেমধ্যে মনে হতো, হুমায়ূন আহমেদ তার সাধ্যের সবটুকু না দিয়ে বাংলাদেশের পাঠকের চাওয়া পূরণ করতে তার স্তর থেকে নিজেকে নামিয়ে নিয়েছিলেন।

তার প্রতিভা ও পরিশ্রমের প্রমাণ তিনি ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘মধ্যাহ্ন’ উপন্যাসে রেখেছেন। আর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসের মধ্যে তার কিছু একটা করার চেষ্টা প্রতিফলিত হয়েছে। পুরোপুরি সফল হয়েছেন সেটা বলতে পারছি না। কারণ এরকম একজন হুমায়ূন আহমেদের কাছে দেশ, জাতির অনেক প্রত্যাশা থাকে।

তারপরও মাঝেমধ্যে হুমায়ূন আহমেদ পড়া হতো। কখনো কখনো নিজের ক্লান্তি দূর করতে হুমায়ূনকেই বেছে নিতাম। কখনো মুগ্ধ হতাম। আবার কখনো হিমুর মতো পাগলা, খাপছাড়া চরিত্র পড়ে বিরক্তও হতাম। কিন্তু প্রকৃত সত্য তো এই যে, আমাদের প্রত্যকের মধ্যে একজন মিসির আলি ও একজন হিমু বাস করে। কিন্তু নানা কারণে আমরা সেই চরিত্রদের সামনে আনতে পারি না। হিমু পড়তে গিয়ে কখনো কখনো নিজেকেই হিমু মনে হয়েছে। হারিয়ে গেছি হিমুর মধ্যে।

একজন হুমায়ূন আহমেদকে অনেক কিছুই করতে হয়। তিনি সেটাই করেছেন। বাংলাদেশের নাটকের ইতিহাসে বাকের ভাই একটি ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের জনক হুমায়ূন আহমেদ। তার দরদে বাংলা সিনেমা সমৃদ্ধ হয়েছে। তিনি তৈরি করেছেন ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘চন্দ্রকথা’সহ আরো বিখ্যাত সব সিনেমা।

হুমায়ূন আহমেদ নাটক বা সিনেমার প্রয়োজনে গান রচনা করতেন। তার গানের মধ্যেও থাকতো গল্প। সেই গল্পের মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে নিজেকে খুঁজে পাওয়া।

বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে আমাদের একজন হুমায়ূন আহমেদ আছে। এরকম একজন জাদুকরকে আমরা পেয়েছি। এর থেকে গর্বের আর কী হতে পারে? প্রিয় হিমু, দূর দেশে ভালো থাকুন। অনেক ভালো। আর…
‘যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…’

[ প্রথম প্রকাশ: জাগোনিউজ/২০১৮ ]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×