somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-১৩ ( আধিক্য সিমলা থেকে মানালি-২)

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব
পরের পর্ব
অন্য পর্বগুলি

শেষ পর্যন্ত বেলা তিনটার দিকে চোখ মেলতে পারলাম। বাস তখন সমতল জায়গা দিয়ে চলা শুরু করেছে। আর তার কিছুক্ষণ পরই বিখ্যাত বিপাশা নদীর দেখা পেলাম। যার হিন্দি নাম হচ্ছে বিয়াস। সারে তিনটার দিকে বাস পৌছাল মান্ডি বাস স্ট্যান্ডে। কন্ট্রাকটার ব্যাটা দেখি মানালি যাবার যাত্রীটি অর্থাৎ আমাকে খুঁজছে। আমার চেহারা তার মনে নেই। ব্যাটা বুঝি আমার কাছ থেকে কিছু হাতানোর চেষ্টা করছে! তাকে সে সুযোগ না দিয়ে টুক করে আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম।

বাস স্ট্যান্ডে নেমে আমি পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এখানে আসার আগ পর্যন্ত আমি কখনো মান্ডির নাম পর্যন্ত শুনিনি। অথচ কি বিশাল একটা বাস স্ট্যান্ড। গাদা গাদা বাস আসছে আর যাচ্ছে। প্রথমেই গেলাম দ্বোতলায়। সেখানে টয়লেট থেকে ফ্রেশ হয়ে খাবার ঘরে ঢুকলাম।

দুটো বড়বড় লুচি আর ডাল, দাম নিল ১৫ রুপি। খেয়ে দেয়ে নীচতলায় নামলাম মানালির বাস খোজার জন্য। এসময় সেই কন্ট্রাকটার ব্যাটা আমার ব্যাগ চিনে আমাকে খুঁজে খুঁজে বের করলো। আমাকে পেয়ে হাঁপ ছেড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এতোক্ষণ ধরে সে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তারপর সে আমাকে মানালি যাবার বাসে উঠিয়ে ঠিকঠাক ভাবে বসিয়ে দিয়ে দৌড়ে তার নিজের বাসে উঠলো। হুশ করে তার বাসটা বেরিয়ে গেল। আমি পুরোপুরি বিস্মিত! লোকটা আমার কাছ থেকে ১৫ রুপি হাতিয়ে নেবার ধান্দা করেছিল সত্যি, কিন্তু আমার জন্য সে তার নিজের চলন্ত বাস আধাঘন্টা থামিয়ে রেখেছিল। সত্যি মানুষ কি বিচিত্র!





সাড়ে চারটার দিকে মান্ডি থেকে মানালির উদ্দেশ্যে বাস চলা শুরু করলো। এটিও লোকাল বাস। মানালি পর্যন্ত ভাড়া ১৫০রুপি। বাস চলা শুরু মাত্রই আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। সাড়ে পাচটার দিকে ঘুম ভেঙে গেল। বাস অনেকক্ষণ থেমে আছে। কোন রকমে চোখ থেকে ঘুম সরিয়ে নিচে নামলাম কি অবস্থা দেখার জন্য। সামনে দেখলাম একটি ট্রাকের সাথে প্রাইভেট কারের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। রাস্তা বন্ধ।





তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিসের গাড়ি এসে রাস্তা পরিষ্কার করে দিলো। বাস আবার চলা শুরু করলো আর আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

এক সময় জোর করেই ঘুম থেকে উঠলাম। আসলে সকালে এভোমিন খাওয়ার কারণেই এতো ঘুম লাগছে। এবার চোখ ডলে ডলে ঘুম তাড়িয়ে আশপাশ দেখতে লাগলাম।





সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে বাস একটা টানেলে ঢুকে পড়লো। টানেল ধরে যাচ্ছি তো যাচ্ছি, তবু যেন শেষ হয় না। শেষ পর্যন্ত টানেল যখন শেষ হলো তখন কুল্লু জেলায় পৌছে গেছি। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে বাস পৌছালো কুল্লু বাস স্ট্যান্ডে। যেহেতু এই বাসটাতে যাত্রী কম সেজন্য এটি আর মানালি পর্যন্ত যাবে না। আমরা যে ৬/৭ জন যাত্রী ছিলাম তাদেরকে মানালিগামী একটি বাসে উঠিয়ে দিলো।

এতোক্ষণ তো আরামে বসে ছিলাম কিন্তু এই নতুন বাসটাতে বেশ চাপাচাপি করে বসতে হলো। তাছাড়া আমার মোটা ব্যাগটা রাখার ফলে আশেপাশে সবারই বেশ কষ্ট হতে লাগলো। কিন্তু আমি কাউকে এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখিনি। আগের বাসের টিকিট দেখানোতে এ বাসে আর নতুন করে ভাড়া দিতে হলো না। বাস চলা শুরু করলো। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি শুধুই অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় নামার ফলে বাস ফাঁকা হওয়া শুরু করেছে। কিন্তু আমি অধৈর্য হয়ে গেছি, রাস্তা যেন আর ফুরায় না।

অবশেষে রাত সাড়ে নটার দিকে প্রায় এগারো ঘন্টার জার্নি শেষে আমি এসে নামলাম মানালি বাস স্ট্যান্ডে।



বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে কতগুলি দালাল এসে ছেকে ধরলো আমাকে। আমি আসলে এদেরকেই খুজছিলাম। একজনের পিছু পিছু চললাম। মানালি বাসস্ট্যান্ডের সঙ্গেই মানালি ম্যাল। দালালটা আমাকে সেখানের এক হোটেলে নিয়ে গেল। HOTEL PAWAN. এর দ্বোতলায় একটা ডাবল বেডের রুম নিলাম। এটাচট বাথরুমে চব্বিশ ঘন্টার ঠান্ডা পানি গরম পানি সহ। ভাড়া চাইল চারশো রুপি। পরে অবশ্য দুনম্বরি করে আমার কাছ থেকে ৫০রুপি বেশি নিয়েছে।





রুমে ব্যাগ রেখে খাবার খেতে বের হলাম। এক জায়গায় দেখি বাংলায় লেখা রয়েছে “হোটেল শান্তিনিকেতন”,আর তার নিচে রয়েছে কি কি খাবার পাওয়া যায় তার লিস্ট। ঢুকে পড়লাম সেখানে। অনেকদিন মাছ খাওয়া হয়না ভেবে মাছের একটা থালি অর্ডার দিলাম। থালিতে রয়েছে আলু ভাজি, ডাল, কুমড়োর একটা ঘ্যাট, ছোলার একটা তরকারি, একপিছ রুই মাছ আর যতো ইচ্ছে ভাত। দাম ১৫০রুপি। বেশ তৃপ্তি সহকারে খেলাম।



খাওয়া দাওয়া শেষে ম্যালে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ালাম। আমি মানালির যে সৌন্দর্যের কথা শুনেছিলাম এখানে এসে সে তুলনায় কিছুটা হতাশ হয়েছি। জায়গাটা কেমন যেন স্যাতস্যাতে আর কাঠ পচা টাইপ গন্ধ। হয়তো এ সিজনটায় এরকম। এর চাইতে সিমলা কতো সুন্দর। যাকগে, হয়তোবা রাত হয়ে গেছে বলে বেশি কিছু দেখতে পারছি না।





ম্যালে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। দেখলাম এক ধরনের ছোট ছোট মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। খুব লোভ লাগলো। কিন্তু ভাবলাম এইমাত্র যেহেতু ভরপেট ভাত খেয়ে উঠেছি আর যেহেতু এখানে আরো দুদিন আছি পরেও খাওয়া যাবে। কিন্তু হায় তখন যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতেম যে ভোরবেলায় উঠেই আমাকে দৌড় দিতে হবে তবে কি ওই মিষ্টির স্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতাম!





যাই হোক রাত প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেছে। সারাদিনের এতো লম্বা বাস জার্নিতে আমি খুবই ক্লান্ত। তাছাড়া তিন বার বাস বদলাতে হয়েছে। আর এভোমিনের প্রভাব এখনো কাজ করছে। হোটেলের রুমে ফিরে এসে কম্বলের তলায় ঢুকে গেলাম।

খরচঃ
১। সকালের খাওয়া হয়নি।
২। সিমলাতে লোকাল বাস ভাড়া (আমার আর নিয়নের)=১৫রুপি।
৩। সিমলা থেকে মান্ডি পর্যন্ত বাস ভাড়া=২০০রুপি
৪। দুপুরের খাওয়া= ১৫রুপি
৫। মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত দুটি বাসে ভাড়া=১৫০রুপি
৬। হোটেল ভাড়া= ৪৫০রুপি
৭। রাতের খাওয়া=১৫০রুপি
মোট=৯৮০রুপি।
১০০টাকায় ৮২ রুপি হিসাবে আধিক্য সিমলা থেকে মানালি মৌলিক পর্বের মোট খরচ ১,১৯৫টাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×