somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম খরচে আবার ভারত পর্ব-১২ ( আধিক্য সিমলা থেকে মানালি-১)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্ব
পরের পর্ব
অন্য পর্বগুলো
২৩শে সেপ্টেম্বর’১৫
বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। সকালে সিমলা থেকে মানালি যাবার শেষ বাস সাড়ে নটায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে আমি রেডি। কিন্তু সেতু আর নিয়নের যেন কোন তাড়া নেই। তারা দুজনে বিছানায় ছাড়তে চাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত নটার সময় তারা রহস্য খোলসা করলো। তারা আমাকে জানালো যে তারা মানালি যাবে না। এমনকি আমাকেও যেতে দেবে না। আমাকে নিয়ে আজ বিকালে তারা জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। সেখান থেকে কাশ্মীরের শ্রীনগরে তাদের পরিচিত এক ডাক্তার আঙ্কেলের বাসায় উঠবে। সেখানে সবাই একসাথে কুরবানি ঈদের নামাজ আদায় করা হবে।

তাদের পরিকল্পনা শুনেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। বুঝলাম যে এদের সাথে আর কিছুক্ষন থাকলে আমার পুরো ট্যুরটাই একেবারে মাটি হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে আমার ব্যাগপত্র উঠিয়ে রওনা দিলাম। পরে আমি টের পেয়েছিলাম জীবনে যে কয়টা বড় বড় ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল এটি।



আমার পিছু পিছু নিয়নও আসলো। সে আমার সাথে নিউ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাবে। তার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে সিমলা থেকে জম্মু যাবার বাসের টিকিট কাটা। আর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার মানালি যাওয়া ঠেকিয়ে তাদের সাথে জম্মু যাবার ব্যাপারে রাজি করা।

হোটেল থেকে বের হয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম লোকাল বাস ধরার উদ্দেশ্যে। ওল্ড বাসস্ট্যান্ডের দিকে না গিয়ে শর্টকাট রাস্তা ধরলাম। কিছুদূর হাটার পর তিন রাস্তার মোড়ে এসে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দেখে দৌড় দিলাম তার দিকে। জানতে চাইলাম নিউ বাসস্ট্যান্ড যাবার বাস কোনটা। স্যার সম্বোধন করে মিষ্টি হেসে সে সবকিছু বুঝিয়ে দিল। আহ জীবনটা ধন্য হয়ে গেল!


বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছি তো দাড়িয়েই আছি। আমাদের যে বাসটা দরকার শুধুমাত্র সে বাসটারই দেখা নেই। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ওল্ড বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা শুরু করলাম ঝুলন্ত ফুটপাত দিয়ে। কিছুক্ষণ পর রেল স্টেশন পার হলাম।



আর এখানেই দেখা হলো আমাদের হোটেলের মালিকের সাথে। দূর থেকে আমাদের দেখে এগিয়ে এসে সে হাসিমুখে আমাদের সাথে গল্প শুরু করলো। আমি তখনও হতভম্ব। কাল রাতে ঐ ঘটনার পর সে আমাদের সাথে এভাবে গল্প করছে! সত্যিই সেতু যে কি জিনিস তা আল্লাহই জানে!

রেল স্টেশন পার হয়ে এসে ওল্ড বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠলাম। দুজনের ভাড়া ১৪রুপি হলেও কন্ট্রাকটার ব্যাটা খুচরা না থাকার অজুহাতে ১৫রুপি নিলো।নিউ বাসস্ট্যান্ডে নেমে ইনফরমেশন ডেস্কের দিকে দৌড় দিলাম। ততোক্ষণে সাড়ে দশটা বেজে গেছে। ডেস্ক থেকে জানালো মানালি যাবার সব বাস চলে গেছে। পরের বাস বিকাল তিনটার পর থেকে। তথ্যটা শুনে নিয়ন খুব খুশি হয়ে উঠলো। সে আমাকে আবার তাদের সাথে জম্মু যাবার জন্য প্ররোচিত করতে লাগলো।

কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না। বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন লোকের কাছে শুনে শুনে যা জানলাম তা হচ্ছে সিমলা থেকে মান্ডি পর্যন্ত লোকাল বাস যায়। আর মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত সহজেই বাস মিলবে। মান্ডি যাবার বাসের কন্ট্রাকটার আমাকে খুঁজে খুঁজে বের করে হাতে ২১৫ রুপির একটা স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বাসে উঠিয়ে দিলো। সে আমাকে জানালো যে সে আমাকে মান্ডি থেকে মানালি যাবার বাসে উঠিয়ে দেবে।

নিয়নের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। খুবই খারাপ লাগছে। নিয়নের অবস্থাও একইরকম। আসলে তিনদিনেই আমরা খুব আপন হয়ে উঠেছিলাম। এখন ছেড়ে যেতে খুবই কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে কি হতো ওদের সাথে জম্মু গেলে!

আমিই সর্বশেষ ব্যাক্তি হিসেবে বাসে উঠলাম। আমার ওঠার সাথে সাথে বাস ছেড়ে দিলো। কোন দুরপাল্লার লোকাল বাস যে এতো সুন্দর হতে পারে তা আমি এই প্রথম দেখলাম। সামনের দিকে দরজার পাশে একটা সিট পেয়েছি। পাশের সহযাত্রীর সাথে গল্প শুরু করে দিলাম। কন্ট্রাকটার এলে তাকে ২১৫ রুপির স্লিপ না দেখিয়ে ৫০০রুপির নোট দিলাম। সে আমাকে ৩০০রুপি ফেরত দিলো। আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার! ব্যাটা আমাকে বোকা পেয়ে ১৫রুপি হাতিয়ে নেবার তালে ছিলো! স্লিপ দেখালেই আমি ১৫রুপির ধরা খেয়ে যেতাম।



সিমলা থেকে মান্ডির দূরত্ব ১৪০ কিঃমিঃ। পেচিয়ে পেচিয়ে রাস্তা শুধু নামছে আর নামছে। আসলে সিমলা শহরটা যে এতো উঁচু তা আগে বুঝতে পারিনি। আসার সময় কালকা থেকে টয় ট্রেনে এসেছি বলে বুঝতে পারিনি। এখানকার বাসগুলো দেখি খুবই আইন মানে। কন্ট্রাকটার বাঁশি বাজালে ড্রাইভার বাস চালায় অথবা বাস থামায়। এখানে বাস থাবড়ানোর কোন ব্যাপারই নেই। তাছাড়া প্রত্যেক যাত্রী ওঠা বা নামার পর নিজ দায়িত্বে বাসের দরজা বন্ধ করে। বাসের মধ্যে কোন প্রকার হইচই গোলমাল বা গালাগাল নেই।

কিন্তু আমার সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। সিমলা থেকে মানালি যাবার পথ এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে নেমেছে যে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। মাথা যন্ত্রণা করে ভয়ানক বমি পেতে লাগলো। বাস পাহাড়ের পাকদন্ডি বেয়ে নেমে চলেছে আর আমার পেটের পাকদন্ডি বেয়ে কি যেন গলার কাছে ঠেলে উঠছে। আমি খুব কষ্ট করে চেপে বসে আছি।

এসময় দেখলাম দাঁড়িয়ে থাকা এক বুড়ি উল্টি আরাহিহে বলে আমাকে কি যেন বোঝাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝলাম না। শেষ পর্যন্ত বুড়ি নিজেই আমার পাশের জানালা খুলে বমি করা শুরু করলো। ও আল্লাহ, উল্টি আরাহিহে মানে হচ্ছে বমি আসছে! আর এজন্যই বুড়ি জানালা খুলতে বলছিল যেন সে বমি করতে পারে।

এমনিতে নিজের অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে আমি অস্থির তারপর দেখি সামনে একজন বমি করছে। কি অবস্থা! শেষ পর্যন্ত না পেরে ব্যাগ থেকে খুঁজে খুঁজে এভোমিন বের করলাম। ঔষধটা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি আমি চোখ মেলতে পারছি না। পাশের লোকটির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। হায় আফসোস, দুপাশে এতো সুন্দর জায়গা, আমি কোন ছবি তোলা তো দূরে থাকুক চোখ মেলে একটু দেখতেও পারছি না।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×