আয়কর বা Income Tax - কথাটা শুনলেই সবার কেমন যেন একটু অন্যরকম একটা ভাব চলে আসে। একটা "নিয়ে গেল, শেষ করে ফেলল" টাইপের অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
ব্যাপারটা আসলে কিন্তু স্থান, কাল, পাত্রভেদে অনেক ভিন্ন হয়। ছোটবেলায় যখন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হত, তখন কিছুই বুঝতাম না। এখন বুঝি। আর আমাদের দেশে ব্যাপারটায় অনেকটা ট্যাবু টাইপের অবস্থা এখনও রয়েছে। এব্যাপারে কেউ কথা বলে না, তর্ক করে না। অর্থনীতি পড়তে গিয়ে বুঝলাম যে কেন অদক্ষ লোকদের পোষা হয়। মূলত ২ টা কারণঃ
১। না খেয়ে মরবে
২। উদাহরণের ও শিক্ষা দেবার জন্য অন্যদের
এর বাইরে আরও কারণ বিদ্যমান, সে আলোচনায় না যাই।
এবার আসি, মূল কথায়। আমরা ট্যাক্স নিয়ে এত সংকায় কেন? - অনেক কারণই আছে, এর মধ্যে আইনগত জটিলতা, প্রশাসিনক ও পদ্ধতিগত জটিলতা, লোকবলের অভাব ও সর্বোপরি সমষ্টিক অর্থনীতি ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে।
যেমন, একজন ব্যক্তিকে ১০%-৩০% সরাসরি কর দিতে হয় তার আয়ের উপর। আর তার ব্যয়ের উপর ০%, ১৫%-৬০০% বা ততোধিক কর দিতে হয়। এতে করে তার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে মান কমে যাচ্ছে। ফলে, সমষ্টিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি, যেটা কেউ দেখছে না। কোম্পানিগুলোও ৩৫%, বা ততোধিক সরাসরি করসহ আরও কর দিচ্ছে। ফলে, তার নিট আয় মোট আয়ের ৫% - ১০% এর মধ্যেই থাকছে, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। দারস্থ হচ্ছে ঋণের।
যদি সরাসরি ও অন্যান্য কর আরও কম হত, ধরুন ব্যক্তি কর, যাইই আয় হোক না কেন, ২%, কোম্পানির ৫%, তাহলে সরকারি রাজস্ব কিছুটা শুরুতে কমলেও সমষ্টিকভাবে অনেক বাড়ত। কারণ, লোকজন তখন আরও বেশি আয় ও ব্যয় করতে পারত নিজেদের জন্য। বিভিন্নখাতে ভর্তুকি দেয়া লাগত না। কারণ, জনগণই নিজের খরচ চালাতে পারত।
আমি অনেককে চিনি যারা ব্যবসায় আসেন না এই কর সংক্রান্ত জটিলতার জন্য। যে পরিমাণ লাইসেন্স, অনুমতি নেয়া লাগে, এরসাথে যে পরিমাণ ঝামেলা ও ঘুষ দেয়া লাগে, সেটা বলার আর কোন অপেক্ষাইই থাকে না।
সরকারি সেবা নিতে গেলে কি পরিমাণ দুর্ভোগ, সেটা সবারই জানা, আর বেসরকারি খাতে খরচ বেশি। মোট হিসেবে - ২টাই সমান।
সামনেই আসছে ৩০ নভেম্বর, ট্যাক্স ডে। যারা জমা দিতে যাবেন, তারাই বুঝেন কি পরিমাণ লাইন থাকে।
যাইই, হউক, মোদ্দাকথা, বিভিন্ন করহার যদি সর্বোচ্চ ৬ বা ৭ টির মধ্যে হত, তবে এ নিয়ে ঝামেলা হতই না। জনগণ ও সরকারের ঝামেলা কম হত। জনগণও কর নিয়ে উদ্বিগ্ন হত না।
সাজ্জাদ হোসেন
ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিসনার
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫