প্রতিবারই পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের কিছু সময় আগে, ফল প্রকাশের সাথে সাথেই আমরা শুনতে পাই কিছু ফুলকলির অকালবোধনের অনাকাঙ্খিত খবর। শুনে আমরা খুব দুঃখ প্রকাশ করি, দোষ দিই, দু-চার লাইন লিখিও। তারপর হয়ত ভাবি এটা আমার কারও সাথে হলে কি হত। এখানেই এই উপলব্ধির খতম, খেল শেষ। তারপর অনেক বছর পর যখন নিজের বাচ্চার পালা শুরু হয় তখন স্বীয় অপ্রাপ্তি, না করা সব চাপিয়ে দিই নিজের কচি কচি বাচ্চার উপর। ওমুক এটা করছে, সে এই করে, সেই করে, এত কিছু করে, আর তুই আমার ছেলে/মেয়ে হয়ে কি করতেছিস? আমার মান সম্মানটা কই থাকে?
এসব কিছু মহৎ অমূল্য বয়ান দিয়ে খতম।
একটা কথা বলুনতো, আপনি এটা দেখেছেন কি যে, যে কাজ আপনি নিজে মজার সাথে করেন নাই, নিজে মা-বাবার কথা না শুনে যাতে জীবন বৃথা না হয় সেজন্য স্কুল পালাইছেন, পড়া ফাঁকি দিছেন, তারপর যারপর নাই সবই সাহসিকতার সাথে করে বীরত্ব দেখাইছেন, সেই মহা বীরের সন্তান আজ সেই বীরত্বের নয়া গাঁথা বিরচন করলে কেন আপনার সবকিছু ব্যথা করে? বিশেষ করে মানসম্মান?
এবার আসুন আত্মহনন প্রসঙ্গে। একাজটা একদিনে হয়না। যখন আপনার বাচ্চা একথাটা বুঝতে পারে যে, আপনার কাছে সে থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল পরীক্ষার ফলাফল। তখন ফলাফল করা বা না করাটাই মূখ্য হয়। এবার আসি জোরাজুরির ব্যাপারে। পিতামাতারা যে পরিমাণ জোরাজুরি করেন এসব নিয়ে তাতে বাচ্চাদের মন সদা টটস্ত থাকে ফলাফল নিয়ে। তাদের সাধ আল্লাদ বলে কিছু থাকে না। তাদের কোন প্রকার ভাল লাগা খারাপ লাগাকে প্রাধান্য না দিয়ে শুধু ফল করাটাই আসল হয়। ফলে প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকে। যারা এটা আর মেনে নিতে পারে না, তারাইই আত্মহননের পথে এগিয়ে যায়। তাই, এটা কোন হুট করে হওয়া বিষয় নয়।
আপনি বুঝান যে, ফলাফল নয়, শিক্ষাটাই আসল। যদি শিখতে পারে, ভাল ফল এমনিই হবে, কোন অবৈধ পথও দরকার নাই, আর কারও সাথে কোন তুলনার দরকার নাই। আপনার সন্তানের তুলনা কেবল সেইই, অন্য কেউ নয় – এটা বুঝলে তার ভাল বৈ অন্য কিছু হবে না। তাই, সুস্থ্য মানসিকতার খুব দরকার। ধন্যবাদ।
সাজ্জাদ হোসেন
লেখক একজন হিসাববিদ ও সনদপ্রাপ্ত আয়কর পেশাজীবি
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৩৩