নিজের ভাষা বলে আগে কখনো বুঝতে পারেনি।
বাংলা ভাষা আসলে আমরা যত সহজ মনে করি এটা তত সহজ নয়। যারা দেশের বাইরে প্রবাস জীবন যাপন করেন তারাই বুঝতে পারেন সন্তানদের কে বাংলা শিখানো কত কঠিন কাজ।
প্রথমতঃ এক সাথে এতগুলো বর্ণ দেখে তারা ভড়কে যায়। তার উপর যদিও হাতে-পায়ে ধরে বর্ণগুলো শেখানো শুরু করা যায় তখন প্রশ্ন আসে এইটা দুইটা কেন, ওইটা তিনটা কেন ইত্যাদি।
আমার মনে আছে আমি যখন ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুলে প্রথম গিয়েছি তখন আমার একটি মাত্র বই ছিল। সেই বইটির নাম আদর্শলিপি ।
সেই বইয়ে আমিও এই জাতীয় সমস্যায় পড়েছিলাম। আমাদের সময় একটা অক্ষর ছিল। ওটা বর্তমানে সংখ্যায় নয় (৯) লিখলে যেটা হয় সেইটা । ওটাকে বলা হত লি। আবার পরপর দুইটা ৯ ছিল প্যাচ দিয়ে। ওটাকে বলা হত (৯৯) ডাবলি।
আদর্শলিপি বইতে আমি ব পেয়েছিলাম দুইটা। এ ছাড়া কতগুলি অক্ষর আছে তা সবাই জানেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমি হঠাৎ করে দেখতে পেলাম বর্ণমালা তে ব একটা বাদ দেওয়া হয়েছে।
যাই হোক অনেক কষ্টে বর্ণমালাগুলো যদিও বা শেখানো যায় । তারপরে আরেক ঝামেলা হল কার সমস্যা নিয়ে। আ কার, ই কার ইত্যাদি। তারপর আবার কিছু অক্ষর আছে যেগুলো বর্ণমালার তালিকাতে নেই যেমন ক্ষ।
বর্ণমালা শেখানোর পরে আসে সংখ্যা শিখানো। সংখ্যা শেখানোর আসলেই মে জটিল সেটাও বুঝতে পারছিলাম না।
বেশির ভাগ ভাষায়ই 1 থেকে 9 পর্যন্ত শেখার পরে বাকিগুলো মোটামুটি কৌশলে শিখে ফেলার উপায় আছে। বাংলা ভাষায় দেখি এই কৌশলটা বের করতে পারলাম না।
যেমন ইংরেজিতে 1 থেকে 10 পর্যন্ত শেখার পরে শিখতে হবে টিন নাম্বার গুলো। ইংরেজি টিন নম্বর গুলোর মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা আছে। যেমন এক থেকে দশ পর্যন্ত মুখস্ত করার পরে নতুন একটা শব্দ মুখস্থ করতে হবে ইলেভেন। এর পরের গুলো মুখস্থ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। যেমন টুয়েলভ, থার্টিন , ফোরটিন, ফিফটিন ইত্যাদি। এরপর 20, 30, 40 ইত্যাদি শিখে নিতে পারলে বাকিগুলি অনেকটা একাই পারা সম্ভব।
বাংলা সংখ্যা শেখার ক্ষেত্রে এরকম কোনো সুযোগ রাখা পেলাম না। অবশ্য বাংলা ভাষার এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে আগে কখনো ভাবি নি কেননা নিজের ভাষা বলে কথা। আগে কখনো এই সমস্ত প্রশ্ন মনেও আসেনি। কিন্তু আজ কাল সন্তানদের শেখাতে গিয়ে এই সমস্ত ঝামেলায় পড়েছি।
তার পরেও আমার কাছে মনে হয়, ভালো মন্দ সব মিলিয়ে বাংলা ভাষাই সেরা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:১৮