হরতালে আগুনে ঝলসে যাওয়া কিশোর মনির হোসেনের অবস্থার কোনোই উন্নতি নেই। শরীরে ৯৫ ভাগ ঝলসে যাওয়া এই কিশোর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। চিকিত্সকেরাও কোনো আশার আলো দেখছেন না। আর মনিরের বাবা রমজান আলীও সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন সবকিছু।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ৬০ ঘণ্টার হরতাল চলাকালে গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ঝলসে যায় এই কিশোরের শরীর। গাজীপুরের বড় কাঞ্চনপুর গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মনির।
বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিত্সক রেবেকা সুলতানা প্রথম আলো ডটকমকে জানালেন, মনির হোসেনের অবস্থা খুবই গুরুতর। তার শরীরের ৯৫ শতাংশই ঝলসে গেছে। তার ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না চিকিত্সকেরা। ‘আমরা এখন তার কষ্টহীন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি’, জানালেন চিকিত্সক রেবেকা। তাঁর ভাষায় মনিরের অবস্থা এখন ‘হোপলেস’।
মনির হোসেনের বাবা রমজান আলী জানান, হাসপাতালে চিকিত্সার কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। সবকিছুই সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিলেন তিনি। গাড়িচালক রমজান আলী জানালেন, তিন সন্তানের মধ্যে একজন বেশ আগে মারা গেছে। এখন মনিরের এই অবস্থায় সব সময়ই হাসপাতালে থাকছেন তিনি। আর্থিক সামর্থ্যও নেই। সবার কাছে আর্থিক সহায়তাও চাইলেন তিনি। অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই বললেন, ‘আমার গাড়ি তো পার্কিং করা ছিল। আমি তো হরতাল অমান্য বা ভঙ্গ করি নাই। তাইলে ক্যান আমার গাড়িতে গান পাউডার দিয়া গাড়ি জ্বালাইয়া দিল? আমার পোলাডারে জ্বালাইয়া দিল?’
হরতালে আগুনে ঝলসে যাওয়া এবং বোমাবাজির শিকার বেশ কয়েকজন রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিত্সা নিচ্ছে। তাদের এবং স্বজনদের চিত্কার আর আহাজারিতে বার্ন ইউনিটের পরিবেশ অনেকটাই থমথমে। ওয়ার্ডগুলোতে শুধুই পোড়া মাংসের গন্ধ।
বার্ন ইউনিটের পরিচালক সামন্তলাল সেন বললেন, ‘সারাটা জীবনই আমি পোড়া রোগীদের নিয়েই কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু এমন পোড়া দেখলেই কষ্ট লাগে। গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া!’
এদিকে বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন রোগীদের দেখতে আজ বুধবার সেখানে এসেছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ। মেহের আফরোজ তাঁর মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
খবরের লিংক

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



