somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

দারুন উপভোগ্য লাংকাউই কেবলকার ভ্রমন,মালয়েশিয়া ।

২৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



লাংকাউই পৃথিবীর অন্যতম সেরা ভ্রমন কেন্দ্র। আর তাই সেটি ভ্রমনের পরিকল্পনা ছিল মালশিয়াতে আসার পরপরই। সুযোগ পাওয়া মাত্র সেটির সৎব্যবহার করেছি। ২৪ তারিখ রাত্রেই বাস যোগে লাংকাউই ভ্রমনে বেড়িয়ে পরি।পথে সমুদ্র পারি দিতে হয়েছে তারপর দুটি গাড়ি রিজার্ভ করে আমাদের কাঙ্খিত হোটেলে।সেই ভ্রমন বৃত্তান্ত পরে দেয়া যাবে।

২৬ তারিখে লাংকাউই কেবল কার ভ্রমনের সুযোগ এল । আগেই বলে নেই যে কয়টি চমকপ্রদ ভ্রমন স্পট আছে এই দ্বীপটিতে তার মধ্যে এই কেবলকার ভ্রমন অন্যতম।তেলেগা হারবারের ঠিক উত্তরে লাংকাউই কেবল কারের অবস্থান।লাংকাউই বিমান বন্দরটির খুব কাছাকাছি এর অবস্থান।কুয়াহ শহর থেকে প্রায় ৪০মিনিট বাসযোগে ভ্রমন শেষে এখানে পৌছানো সম্ভব।

সকাল এগারোটার দিকে সূর্যোজ্জল আবহাওয়াতে আমরা সদলবলে রওয়ানা দেই কেবল কার স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌছে চারপাশটার উপভোগ্য দৃশ্য অবলোকন করতে থাকি।একটা শপিং কটেজ এর পাশে হঠাৎ চোখ পড়ে টেকো মাথার একজন লোক গলায় অজগর সাপ পেচিয়ে বসে আছে। আর সাপটি জিভ বের করে তার বেঁচে থাকার প্রমান দিচ্ছে।আর একটু সামনে এগুতে দেখি সুন্দর করে লিখা লাংকাউই এলিফেন্ট এডভেঞ্চার।সেখানে বিশালাকৃতির হাতি।বড় বড় দাত সম্বলিত মাথা শুড় নাড়িয়ে কাছে ডাকছে। জানা গেল ওটাতে ওঠতে দুইজন মানুষের ১০০ রিঙ্গিত গুনতে হবে । আমারতো আর দ্বিতীয়জন নেই। আর অন্যরা এত রিঙ্গিত ঢেলে হাতি বিহারে যেতে রাজি নয়।




সহযাত্রী শাওন আর অনিমেষ একটা পারিবারিক ছবি ওঠাবে।তাতে বাগড়া দিল অর্ক।তাদের একমাত্র সন্তান। সে তো ছবি তুলবেই না বরং তার বাবা মাকেও ছবি ওঠাতে দিবেনা। এই নিয়ে পারিবারিক ক্লাইমেক্স। অর্ককে সঙ্গে নিয়ে গেলাম সামনের একটা জায়গায় যেখানে লিখা আছে ফিশ ফিডিং।পাশেই ফিস ফুড পাওয়া যাচ্ছে। ফিসফুড কিনে পানিতে ফেলা মাত্র মাছের দল এসে উপস্থিত।তারা প্রচন্ড উদ্যোমে খাবার খাচ্ছিল আর আমি আর অর্ক প্রাণভরে মাছগুলো দেখছিলাম ।



ঠিক পাশেই একটা ছোটমত স্টলে নানান ধরণের প্রজাপতির দর্শনী টুকরো।চমৎকার সব প্রজাতির প্রজাপতির মডেল চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে।আমার মনে তখন সেই গানটি বাজছে প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে তুমি এমন রঙিন পাখা ।সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতন।

যাইহোক হাতে সময় কম ।কেবল কারের টিকিট কাটা হলো। জনপ্রতি ত্রিশ রিঙ্গিট।আমার মোট চোদ্দজন।এর মধ্যে তিনজন শিশু। সবাই টিকেট কেটে শরু করলাম বহুকাঙ্খিত এক ভ্রমন ।



শুরুতেই আমাদের প্রায় পঞ্চাশজনকে একটা কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো ।সেটা অন্ধকার করা হলো।তারপর শুরু হলো স্পেশাল এফেকটের লোমহর্ষক আর বিস্ময়কর সব প্রদর্শনী।একটু না বললেই নয়।

শুরুতেই মনে হলো আমরা সবাই সাবমেরিনে সমুদ্রের অতল তলে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সাগর তলদেশের গুল্ম লতাগুলি পানিতে দোলছে।আর বিভিন্ন ধরনের মাছ ভেসে চলছে।কয়েকটা আমাদের দিকে তেড়ে আসলো।বিশাল আকৃতির শার্ক। কিছুটা টেনশন হলো।দূর্বল কাচের ঘর সেটি ভেঙে যদি চলে আসে শার্ক।শার্ক যদি নাও খায় পানিতে ডুবে শেষ।
একটা শার্ক গ্লাসে আঘাত করলো ।গ্লাসটা ভাঙেনি ।সমস্যা হলো আরও বড় শার্ক আসছে।একটা তো প্রচন্ড আঘাত করলো।গ্লাস ফেটে গেছে।ওটা দেখে কলিগের মেয়ে ইশ্বরা প্রচন্ড কান্না জুড়ে দিয়ে আমাদের ট্রাজেডিকে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলল।শার্ক আঘাতে আঘাতে সব ভেঙে শেষ করলো ।প্রচন্ড ভয় থেকে মুক্তি মিলল যখন নিশ্চিত হলাম এটা একটা শর্টফিল্ম মতো ।তারপর একের পর এক বিস্ময় আর ভীতিজাগানিয়া সব ব্যাপার স্যাপার চলতে লাগলো ।তবে প্রথম শো দেখে মনে ব্যাপক সাহস সঞ্চয় করে ফেলেছি ।সাহস নিয়ে সব দেখা শেষ করলাম ।




ওটা শেষে শুরু হলো কেবল কারে ওঠা।এক সঙ্গে ৬ জন মানুষ ওঠতে পারবে ।ওঠলাম তার বেয়ে কেবল কার ক্রমশ উপরে ওঠতে থাকলো। এটি আমার প্রথম কেবল কার ভ্রমন।ক্যাবল কারের ক্যাবল বেয়ে ওপরে উঠার সঙ্গে সঙ্গে আমার কৌতুহুলী দৃষ্টি সীমা বাড়তে থাকলো ।চমৎকার সব মানব সৃষ্ট অবকাঠামো আর সমুদ্র দ্বীপটি ঘিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপরুপ সব রূপসুধা লেহন করতে করতে সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম ।সেই রূপে মুগ্ধ হতে হয়।সেটি বর্ণণা করা আমার সাধ্য নয়। বিশাল নীল জলরাশি্ ।সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে চমৎকার সব জলযান।ছোট ছোট দ্বীপ।সেগুলো সমতল নয় ।পাহাড়। মনে হবে সাগর ভেদ করে দাড়িয়ে আছে পাহাড়গুলো্ ।সেগুলোর আকৃতি বৈচিত্রময় ।মাথার উপরের আকাশটাও ভাসিয়েছে শাদা মেঘের ভেলা নীলে বুক চিড়ে।সেখানে পাখা মেলে উড়ছে শঙ্খ চিল।আমরা ছুটে চলছি মুক্ত হাওয়ায় কেবল কারে।অনেক নিচে সবুজের সমারোহ।বৃক্ষগুলি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে। রাস্তায় ছুটে চলা গাড়ি গুলিকে মনে হচ্ছে ক্ষুদ্র পোকাড় মত ।প্রথম স্টেশনে নামলাম ।সেখানে অনেক পর্যটক দৃশ্যধারণে ব্যস্ত; নিজেদের, প্রকৃতির অপরূপ রূপের । প্রকৃতির রূপ গায়ে মেখে বেশ কিছু ছবি তুললাম ।



আবার কেবল কারে ওঠলাম ।এবারো নতুন নতুন দ্বীপ আর নতুন সব রূপের সমাহার চোখের সামনে ভেসে ওঠলো ।মোটকথা আনন্দ আর উপভোগের কোন সীমা রেখা নেই।কষ্ট বলতে শুধু মাত্র উচ্চতাজনিত কারনে বায়ুর চাপপরিবর্তণে ছোট মতন ঝাটকা কর্ণকুহরের পর্দায় ।ব্যাস ।বাকীটুকু শুধু মুগ্ধতা আর বিস্ময়ে ঘেরা ।



প্রতিটি স্টেশনে আমাদের ছবি তুলছিল ফটোগ্রাফাররা । ফেরার সময়ে সেগুলি ফ্রেমে বন্দী হয়ে গেছে ।সেগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়ামূল্যে ।একটি কিনে ফেললাম ত্রিশ রিংগিত দিয়ে।ক্যাবল কারট্যুর শেষ হলো ।


ইশ্বরার কান্নাকাটি শেষ। আইচ ক্রিম খেয়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।


পরবর্তী ভেন্যু ছিল ম্যাংগ্রোভ ফরেস্ট ট্যুর । সুন্দর বন বৃহত্তম ম্যাংগ্রোভ হলেও সেটি কিন্তু পাহাড় ঘেরা নয়। এটি পাহাড় ঘেরা ।ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ম্যাংগ্রোভ ফরেস্ট হয়ে আন্দামান সাগরের জুতা দ্বীপ ছিল পরবর্তী ভ্রমন স্পট। সেটির প্রস্তুতি নিতে থাকলাম ।সেখানে একটা স্পটে নাকি ঈগলকে খাওয়ানোর সুযোগ আছে !





কেবল কার ট্যুর
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×