somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি রাজকন্যার জীবন কাহিনী (পর্ব : ৪) – মিশর ও ইতালি ভ্রমণ

১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মার্কিন লেখিকা জিয়ান সেসন (Jean Sasson) এর বই Princess: A True Story of Life Behind the Veil in Saudi Arabia তে বর্ণিত রাজকন্যা সুলতানার জীবন কাহিনী অবলম্বনে।

সবার বড় বোন রাজকুমারী নুরা ও তার স্বামী আহমেদের পরিবারের সাথে রাজকুমারী সুলতানা ও সারা, রাজকুমার আলী, আলীর বন্ধু হাদি ও দুইজন ফিলিপিনো গৃহপরিচারিকা সব মিলে ১১ জন মিশর ও ইতালি ভ্রমনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হোল। সুলতানার বয়স তখন ১৪, আলীর বয়স ১৬ বছর আর আলীর বন্ধু হাদির বয়স ১৮ বছর। হাদি মুতাওয়া ( পুলিশের মত বাহিনী যারা ধর্মীয় শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলি দেখভাল করে ) হওয়ার জন্য একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষন নিচ্ছে। নুরার স্বামীর নিজস্ব উড়োজাহাজে ওরা ভ্রমণ করবে। সুলতানা আর আলীর সম্পর্ক সাপে নেউলে তাই উড়োজাহাজে ওঠার আগ মুহূর্তেও দুজনে কিছুটা হাতাহাতি করে নেয়।

প্রথমে তারা মিশরের রাজধানী কায়রোতে পৌছুলো। নুরার স্বামী আহমেদের নিজস্ব এপার্টমেন্টে ওরা উঠলো। প্রথম দিন সন্ধ্যায় আহমেদ, নুরা, আলী, আলীর বন্ধু হাদি একটা নাইটক্লাবে গেলো বেলি ড্যান্স দেখার জন্য। কায়রোতে অনেক এলাকাতে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বাস করে। সৌদি আরবেও দরিদ্র মানুষ আছে তবে তাদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মৌলিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেক দরিদ্র পুরুষ নাগরিককে গৃহ, চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসার জন্য সুদ বিহীন ঋণ এমনকি প্রয়োজনে খাবারের জন্য অর্থ দেয়া হয়।

পরের দিন সকালে নুরা, সারা ও সুলতানা মার্কেতে গেলো কেনাকাটা করতে। আহমেদ গেলো বন্ধুর বাসায় আর বাচ্চারা আর পরিচারিকারা গেলো সুইমিং পুলে। এপার্টমেন্টে আলী আর হাদি একা রয়ে গেল। সারা আর সুলতানা গরমে ক্লান্ত হয়ে মার্কেট থেকে আগে ফিরে আসলো। তারা এপার্টমেন্টে ঢোকা মাত্রই উপর তলায় আলী আর হাদির কক্ষ থেকে চিৎকার শুনতে পেল। ঘরের দরজা খোলা ছিল। তারা কাছে গিয়ে দেখে যে হাদি ৮ বছর বয়সের একটা মেয়েকে ধর্ষণ করছে আর আলী মেয়েটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। কক্ষের সর্বত্র রক্ত ছড়িয়ে আছে। আলী আর হাদি হাসাহাসি করছে। এই দৃশ্য দেখে সারা হিস্টিরিয়া রোগীর মত চিৎকার করতে করতে দৌড়ে পালাল। সুলতানাকে দেখে আলী তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। ফলে সুলতানা মেঝেতে পরে গেলো। সেও সারার মত দৌড়ে উপর তলায় তাদের কক্ষে চলে গেল।

তাদের কক্ষে যাওয়ার পরেও তারা অনেকক্ষণ যাবত বাচ্চা মেয়েটার চিৎকার শুনতে পাচ্ছিল। সুলতানা আবার সিঁড়ির কাছে আসলো। সে দেখলো যে আলীর রুমের সামনে একজন বছর ৪০ এর মহিলা কলিং বেল বাজাচ্ছে। আলী এসে দরজা খুললো। আলী মহিলাকে ১৫ মিশরীয় পাউন্ড দিল এবং তাকে জিজ্ঞেস করলো তার আরও কোন কন্যা আছে কি না। ঐ মহিলা বললো যে তার আরেকটা মেয়ে আছে এবং পরের দিন সে নিয়ে আসবে। হাদি ছোট মেয়েটাকে মহিলার কাছে হস্তান্তর করলো। মহিলার মধ্যে কোনও আবেগ দেখা গেলো না। সে বিধ্বস্ত মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেলো।

আলীর দুলাভাই আহমেদ যখন ব্যাপারটা শুনল তখন তার মধ্যে তেমন ভাবান্তর দেখা গেলো না। সে নুরাকে বলল যে ব্যাপারটা সে খতিয়ে দেখবে। পরের দিন সে খবর নিয়ে বললো যে ঐ মহিলাই তার নিজের সন্তানকে এই কাজে দিয়েছে তাই তার পক্ষ থেকে কিছু করার নাই। এই ঘটনার পরও আলী আর হাদিকে দেখে মনে হতে লাগলো যেন কিছুই হয়নি। সুলতানা বিস্ময়ের সাথে হাদিকে জিজ্ঞেস করলো তুমি কিভাবে মুতাওয়া হবে। হাদি হেসে উড়িয়ে দিল তার কথা। সুলতানা আলীকে বললো যে আমি বাবাকে বলে দেব। আলী আরও জোরে হেসে উড়িয়ে দিল এবং বলল যে বাবা তাকে এই ধরণের কাজের জন্য একটা লোকের ঠিকানা দিয়েছে। সে বললো যে ছোট মেয়েই ভালো এবং বাবা নিজেও কায়রোতে এসে এই কাজ করে। এগুলি শুনে সুলতানার মনে হোল সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। অবাক বিস্ময়ে সে আলীর দিকে তাকালো। কয়েক দিন পরে সে ঐ মহিলাকে বিল্ডিঙের আরেকটা এপার্টমেন্টের দরজার সামনে তার মেয়েকে নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো। সে মহিলাকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল কিভাবে সে নিজের মেয়েকে এই কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু তার মনোভাব বুঝে ঐ মহিলা দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।

একদিন নুরা, সুলতানা ও সারাকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো যে আহমেদ বলেছে যে পৃথিবীর অনেক জায়গাতে এইভাবেই এই ধরণের কাজ চলে। নুরা বললো যে অভাবের তাড়নায় এই ধরণের মহিলারা এই কাজ করে। মিশর ভ্রমণ শেষে তারা ইতালি পৌছুলো। সেখানে ভেনিস, ফ্লরেন্স ও রোম শহর তারা ঘুরে দেখলো। সারা ইতালি দেখে মুগ্ধ হোল। ইটালির সৌন্দর্য তার কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। মিলান শহরে বড় বোন নুরা কেনাকাটা করে কয়েক দিনে এত টাকা খরচ করলো যা অনেক মানুষ সারা জীবনেও করতে পারে না। হাদি আর আলী ইটালির মেয়েদের ভাড়া করাতে ব্যস্ত ছিল। ইটালির পথে-ঘাটে তারা সহজেই অনেক সুন্দরী মেয়ে পেয়ে গেলো ভাড়ার জন্য।

৪ সপ্তার ভ্রমণ শেষ করে তারা পুনরায় রিয়াদে ফিরে এলো। ফিরে এসেই সুলতানা জানতে পারে যে তার মায়ের ভীষণ অসুখ এবং সে মৃত্যুপথ যাত্রী।

রাজকুমারী সুলতানার সাদাসিধা ও পরহেজগার মায়ের মৃত্যু দিয়ে শুরু হবে পরের পর্ব।
ছবি- ইন্টারনেট
সৌদি রাজকন্যার জীবন কাহিনী - ১ম পর্ব
সৌদি রাজকন্যার জীবন কাহিনী - ২য় পর্ব
সৌদি রাজকন্যার জীবন কাহিনী- ৩য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৪৫
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×