হুবহু তুলে দিলাম
সূত্র: প্রথম আলো (02/03/2010)
তিনি এখন ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষক। এখনো ছাত্রলীগের পদ ছাড়েননি তিনি। বরং দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক।
শিক্ষক ও ছাত্রনেতার দুটো পদ অলংকার করা এই ছাত্রনেতার নাম অমিত চক্রবর্তী। তাঁর বিরুদ্ধে বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলের ক্যানটিনের তত্ত্বাবধায়ক লিখিতভাবে চাঁদা দাবির অভিযোগ করেছেন। এরপর ক্যানটিনটি বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগের নেতারা।
ডুয়েটে সূত্রে জানা গেছে, পুরকৌশল বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সিন্ডিকেট যে তিনজনের নাম চূড়ান্ত করে, এর মধ্যে অমিত কুমার ছিলেন দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথম জনকে বাদ দিয়ে অমিতকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন অমিত চক্রবর্তী।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান, ওই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মো. শওকত ওসমান প্রথম আলোকে প্রথম জনকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানান, ওই প্রার্থী ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছিলেন। কিন্তু অমিত পুরকৌশল বিভাগ থেকে পাস হওয়ায় তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনেকের ফল অমিতের চেয়ে ভালো থাকা সত্ত্বেও অমিত কেন নিয়োগ পেলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌখিক পরীক্ষায় অমিত ভালো করেছিলেন।
ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম সবদার আলী প্রথম আলোকে জানান, সবার মতামতের ভিত্তিতেই অমিতকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অমিত শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগও দিয়েছেন।
এদিকে গত মঙ্গলবার অমিত কুমার চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ করেন বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলের ক্যানটিন তত্ত্বাবধায়ক মাকসুদুর রহমান। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, বুয়েটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও নজরুল ইসলাম হলের প্রাধং্যক্ষের কাছে পৃথক চারটি অভিযোগপত্র দেন তিনি। এতে তিনি বলেন, ১৭ জানুয়ারি নজরুল ইসলাম হলের ক্যানটিন খোলা ও নিরাপত্তার বিপরীতে মাসিক ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার চক্রবর্তী ও ড. এম এ রশিদ হলের সাবেক ছাত্র মতিউর রহমান শামীম। পরে তা ১০ হাজার টাকায় রফা হয়। সে অনুযায়ী তিনি ওই টাকা শহীদ স্মৃতি হলের ২৩০৯ নম্বর কক্ষে গিয়ে দিয়ে আসেন। লিখিত এ অভিযোগ দেওয়ার পর বুধবার রাতে ছাত্রলীগের নেতারা ক্যানটিনে গিয়ে তাঁকে হুমকি দেন। এরপর ভয়ে ক্যানটিন ছেড়ে চলে যান তিনি।
মাকসুদুর রহমান বলেন, ১৯৬৩ সাল থেকে তাঁর পরিবারের কেউ না কেউ এই ক্যানটিনটি চালিয়েছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর পাঁচ বছর ধরে তিনি ক্যানটিনটি চালাচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির কারণে নানা পরিস্থিতিতে আর পারছেন না। বরং বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়ে তিনি ডুয়েটে যেতে পারছেন না। তবে কারা হুমকি দিচ্ছে, তিনি সে নামগুলো প্রকাশ করতে সাহস পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অমিত চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কখনো নোংরা রাজনীতি করেননি। আর এটা করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারতেন না। শিক্ষক হওয়ার পরও কেন পদত্যাগ করছেন না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের তিনি এ বিষয়ে জানিয়েছেন। তাঁরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘অমিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন, সেটি জানাননি। আর শিক্ষক হওয়ার পর তাঁর এমনিতেই পদ ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি যদি একবারও বলেন যে পদ ছাড়তে চান, অবশ্যই তা গ্রহণ করা হবে।’
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



