somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের তুই (To The Child) – শেষ পর্ব

১০ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২৪ শে জানুয়ারি ২০১২, ১১ মাঘ ১৪১৮, ২৯ সফর ১৪৩৩, মঙ্গলবার তোর মামনির চেক আপের ডেট দিয়েছিলেন ডাক্তার। তোর মামনি আর ফুফু বাসা থেকে ডাক্তারের চেম্বারে চলে যায় , আর আমি অফিস থেকে তাদের সাথে যোগ দিলাম। ডাক্তার অনেকক্ষন চেক করার পর বলল তুই নাকি পৃথিবীতে আসার জন্য প্রস্তুত । আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি বলব, ডাক্তার বলেন কি ? আবার এক দিক দিয়ে ভেবে ভাল লাগছে কারন তোর মামনির এই ডাক্তার এক্সপেক্টেড যে ডেট দিয়েছিলেন সেসময় তিনি ঢাকায় থাকবেননা, অন্য একজনকে রেফার করে যাবার কথা বলেছিলেন। সো তিনি থাকতে পারছেন ভেবে আমরা খুশিই হলাম। ডাক্তার তোর মামনিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে বললেন।

তোর মামনিকে ভর্তি করিয়ে স্যালাইন দিয়ে দেয়া হল, ডিউটি ডক্টর জানালেন বিকেলের আগে কোন নিউজ হবার সম্ভবনা নেই। এই কথা শুনে আমি আবার অফিসে চলে আসলাম, আমার অফিস থেকে যেহেতু দশ মিনিটের পথ । সেখানে ছিল তোর ফুফু, তোর নানিও চলে আসার কথা কিছু সময়ের মাঝে ।
অফিসে অস্হির সময় কাটাচ্ছি, তিনটের দিকে তোর মামি ফোন দিয়ে বললেন তুমি তাড়াতাড়ি আস, আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলেন। আমি যাবার পর জানালেন তোর মামনিকে ওটিতে নিতে হবে তাই কিছু কাগজে সাইন করার দরকার ছিল, তিনি সব করে দিয়েছেন ততক্ষনে।

তোর মামনির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উত্তেজনায় ভরপুর একটা মুখ, উচ্ছাস- ভয় সবই আছে সেখানে। ডাক্তার জানালেন চারটার সময় তাকে ওটিতে নেয়া হবে। আমার কেমন লাগছিল সেটা আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলামনা। তোর মামনি, তুই- আমার যে সবই চায়।

তোর মামনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে খুব চাচ্ছিল আমিও তার সাথে ওটিতে যায়। এ নিয়ে তোর মামনি আমার সাথে অনেক আগে থেকেই কথা বলে রেখেছে, আমাকে নাকি তার সাথে যেতে হবে, আমি বলেছিলাম উহু, রক্ত টক্ত এইসব আমি সহ্য করতে পারবোনা। তোর মামনি উপস্হিত ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করল আমাকে সাথে নিয়ে যেতে পারবে কিনা। ডাক্তার জানিয়ে দিল এটা সম্ভব নয়। তার মনটা হালকা বিষন্ন হল আমি দেখতে পাচ্ছি। তোর মামনিকে নিয়ে সিস্টাররা যাচ্ছে, তোর নানির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে, তিনি সেটা মুছতেছেন, আমার পুরো পৃথিবীটা কেমন যেন টলছিল। তোর মামনির জন্য আমার কেমন জানি লাগছিল। টেনশন, ভয় উত্তেজনায় আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিলাম, পুরো শরীর অসাড় হয়ে পড়ছিল।
চারটা তেইশ মিনিট। আমরা বাইরে সবাই অপেক্ষমান, তোর নানি দাদি দোয়া দরুদ পড়ছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এমন সময় শোনা গেল তোর কান্না, পুরো পৃথিবীকে তুই জানিয়ে দিল তোর আগমনী। ওটি থেকে একজন এসেও জানিয়ে গেল।

এ অনুভূতি কেমন আমার পক্ষে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, তোর দাদি জানতে চাইল তোর মামনি কেমন আছে, তারা জানাল সে ভাল আছে। আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসল, সবার সামনে থেকে একটু আড়ালে চলে গেলাম। নিজেকে কেমন অচেনা মনে হতে লাগল। সে সময়ের অনুভূতি টুকু কেমন ছিল সেটা এখন মনে করতে পারছিনা সেভাবে , বলা যায় আসলে সেটা লিখে প্রকাশ করতে পারছিনা । কিছুক্ষন পর আমাদেরকে ডাকা হল তোকে দেখার জন্য ।

প্রথম তোকে দেখার অনুভূতি !! নারে , আমি লিখে বুঝাতে পারবোনা, লিখে বুঝানো সম্ভব না । নিজের অস্তিত্বের এ নতুন বহিঃপ্রকাশ কাউকে বোঝানো সম্ভব না। এটা বুঝতে হলে এ প্রকৃয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। তুই যেদিন বাবা হবি কেবল সেদিনই তুই বুঝতে পারবি।

তোর দাদা আমাকে জড়িয়ে ধরল। তোর নানি দাদি একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে তারপর শুরু করল সবাইকে জানানোর কাজ। পরিচিত সবাইকে একে একে ফোন করে জানানো হচ্ছে তোর আগমনি সংবাদ।

কিছু সময় পরে তোর মামনিকে ওটি থেকে নিয়ে আসা হল, তখনও সে ঘুমিয়ে পড়েনি, তোকেও দেয়া হল তার পাশে। সবাই আমরা তখন তোকে আর তোর মামনিকে ঘিরে। তুই চুপচাপ চোখ খুলে তাকিয়ে আছিস, তোর দাদা ভাই তোর পাশে গিয়ে আযান দিলেন। একে একে অনেকেই আসা শুরু করল তোকে দেখার জন্য ।তোর মামনি একবার তোর দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার আমার দিকে, আমিও তার দিকে তাকিয়ে আছি । কেউ কিছু বলছিনা কিংবা কি বলা যায় সেটাই আসলে মাথায় আসছেনা ।

পুরো সময়টাই আমি একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমি জানিনা আমার কি করা উচিত, এদিক ওদিক হাঁটছি, কিছুক্ষন পরপর তোকে দেখছি, তোর ছবি তুলছি।
নিজের অনুভূতি নিয়ে কিছু বলা সম্ভব না হলেও তোর চাচার অনুভূতিটা দেখে খুব মজা পেলাম। সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে- " কিছুক্ষন আগে আমার ভাইয়া আর ভাবির একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে, আমি চাচা হয়ে গেলাম।অস্হির ব্যাপার, চাচা হবার এই ভাব নিয়ে হাসপাতালের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি " ।

আমাদের তুই এখন আল্লাহর রহমতে আমাদের সাথে, পৃথিবীতে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারেনা ।


আমাদের তুই (To The Child) – দ্বাদশ পর্ব
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×