somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাত-নাড়া বীরেরা

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বীরেরা রাস্তায় থাকেন। তারা হাত তুলে থামিয়ে দেন নানান বেগে ছুটতে থাকা গাড়ী, মোটরযান। চাইলে তারা থামাতে পারেন প্রদক্ষীণরত উপগ্রহদের, ছুটে যাওয়া উল্কা, টর্পেডো। নাহ! এটা হলিউডি সিনেমার কোন দৃশ্য নয়। এনারা আমাদের পথচারী। গোটা বাংলাদেশ জুড়েই এনাদের পথ।

জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন, এখানে একদমই নেই, জাতিগত বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, বয়স আর শ্রেণীর বিভাজন কিছুই এখানে কাজ করেনা। এই বীরত্ব সবত্রগামী-সাম্যের। এই যেমন আজকেই রাজপথে দেখা হল নানান বীরদের সাথে। এরকম প্রতিদিন দেখা হয়। প্রথম জন আসাদ গেট যাবার আগে মিরপুর সড়ক আর লেক রোডের ইন্টারেসেকশনের একটু পরেই, রাতের অন্ধকারে রাস্তা পার হচ্ছেন। নেহাত হাই বিম দিয়েছিলাম বলে এই বীরের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে পারলাম। গতি ছিল চল্লিশ। এরপরের জন ঠিক মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে। বিরাট লম্বা। উনি কেবল বীর নন বীর বীরন্দাজ বাহুবলী, ষাট ফিট পেরিয়ে ডানদিকের সরু রাস্তাটা ধরে দশ নম্বরের দিকে এগুতেই তিনি জাস্ট মাছি তাড়ানোর মত করে হাত নাড়লেন। ঈশ! বেঁচে গেলাম এদফা, মার্ভেলের থ্যানোস তিনি। মাথা নীচু না করে বাম দিকে সরে না গেলে একদম মারাই পড়তাম।

আমরা যারা রাজপথে নিজেদের ভিহিকিল নিয়ে যাতায়ত করার দুঃসাহস করি তাদের সাথে নিয়মিত এমন বীরদের দেখা হয়। এনাদের হাতে অসীম শক্তি। সেই শক্তির উপর তাঁদের বিশ্বাসও অগাধ। এই হাত দিয়ে তাঁরা চড় ভঙ্গি, মাছি তাড়ানো, বাতাস করা, আয়রণ ম্যানের মত হাতে পাতা দেখানো, শক্তিমানের মত হাতের ঘূর্ণী, ওয়ান্ডার ওমেনের মুঠি পাকানো, মারিয়া ক্যারি ও মাইকেল জ্যাকসনের মত হাতের খেলা দেখান। এই তালিকা শেষ করা যাবে না। কেউ হাত দিয়ে রিতিক রোশনের মত নীচের দিকে পাম্প করা দেখান, কেউ আবার রয়্যাল ফ্যামিলির সদস্য হিসেবে রুমাল ছেড়ে দেবার মত করে ওয়েভ করেন শুধু। আর বিশ্বব্রম্মান্ড জাস্ট থেমে যায়।

কারো কারো হাত দেখানো আবার উল্লম্বিক ধরণের, মনে হয় যেন বাতাসেই পেইন্ট করছেন কিছু, আবার মাঝে মাঝে মনে হয় লাস্ট এয়ার বেন্ডার। দুই হাত গোল করে এখনি কিছু একটা করবেন। সামনের দশটনি ট্রাকটাকে নিমিষেই উড়িয়ে দেবেন।

এরা আমরাই। এই আমরাই পথচারী পারাপারের রাস্তায় বাইক উঠিয়ে সারাক্ষণ পথচারীর পশ্চাৎ এ লেগে থাকি। নির্বোধের মত হর্ণ বাজাই। নির্বোধের মতই হর্ণ শুনিনা। ন্যুনতম সতর্ক না হয়ে আশেপাশের কারো প্রতি লক্ষ না করে ইচ্ছেমত বাইক, গাড়ী, ট্রাক, বাস দিয়ে ঠেলতে থাকি। কি ঠেলি আমরা? আমরা আসলে এক অচলায়তনকে ঠেলি। এরজন্যই বেঁচে থাকার ন্যুনতম অধিকার বারংবার বাজি রাখি। বীরত্ব দেখানোর চেষ্টা করি। বীরত্বের এই মুখোশের আড়ালে ভীতি, শংকা আর একরাশ ক্ষোভ আর ঘূণা নিয়ে এগিয়ে চলি। দেশের রাস্তাঘাট বড় হয়েছে অনেক। পথের সাইনগুলো দেয়া হয়েছিল কোন এককালে, উপেক্ষা আর না-মানার চাপে ক্ষয় হয়ে মৃত পড়ে আছে রাস্তায়। তাই এই দেশের রাস্তায় মানুষ পড়ে থাকে, ক্ষতবিক্ষত লাশ হয়ে। বাসের চাপে ঝুলতে থাকে ছিন্ন হাত। আসলে আমরা জানি আমাদের নিয়ে কেউ ভাবেনা। আমাদের কিছুতেই কারো এসে যায় না। তাই আমরা আরো আরো বড় গাড়ী কিনি, হয়ত নিরাপত্তা হবে। বড় বড় গাড়ীর জন্য আরো বড় বড় দুর্নীতি করি। দেশের রাস্তাঘাট বড় হবে আরো, ট্রান্সপোর্ট স্টাডির নানান কৌশলও আরো প্রয়োগ করা হবে। যদিও মানুষের ট্রাফিক শিক্ষার পেছনে একটি পয়সাও ব্যয় হবে না। মাওয়া হবে, এক্সপ্রেস হবে কিন্তু মানুষের কি হবে? একথা কেউ ভাবেন না। মানুষকে কি ছোটবেলা থেকে শিক্ষিত করা হয়েছে? যথার্থ জায়গায় সুব্যবস্থাপনা বহাল রাখা হয়েছে? কেবল স্পিড ব্রেকার দিয়ে এসবের সমাধান হয় না। রাস্তা চুরির মচ্ছবে ম্যানহোল খোলা রাখতে যেয়ে যে অসংখ্য পটহোল বানিয়ে রেখেছেন, সেদিকে কি খেয়াল আছে?

মানুষের আচরণ পাল্টানোর জন্য তাকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি, সুব্যবস্থাপনাও দিতে হবে। সেখানো বিনিয়োগ করুন। এটা আর টাকার অভাবের বিষয় না, সদিচ্ছার অভাবের বিষয়।
ফলে এই বীরত্ব আসলে আত্মহত্যাকারীর ভণীতা। এই আমরাই পথচারী, গাড়ীচারী, বাইকচারী, রিকশাচারী। আমাদেরকেই আমাদের হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কৌশল ভয়ানক। আমরা পথে পথে বীর চাইনা। আপনার ক্ষতির জন্য নিজেকে দায়ী করার ভয়ানক কষ্ট থেকে দয়া করে আমাকে অব্যহতি দিন। নিজের ক্ষতি না করার দায় থেকেও। আপনার আমার আমাদের কারো কোন পথ আসলে দেয়া হয়নি। জঙ্গল বানিয়ে পথের নাম দিয়ে দিয়েছে।
দয়া করে সত্যিকারের বীর হয়ে উঠুন। পরস্পরকে বাঁচিয়ে চলুন। কেননা নিজেদেরকে হত্যা করার জন্য আমাদের অনেক আগেই রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×