somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মস্কোভিচ (একটি করুন রস কাহিনী - শেষ পর্ব

২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হোস্টেলে ফিরে কাউকে কিছুই বললাম না ভাবলাম একবারে সবাইকে চমকে দিব। পরদিন প্রায় পুরোটাই রুমের দরজা বন্ধ করে একা একা ফ্যাশান শো করলাম। অন্যান্য হোস্টেলবাসী আমার এহেন আচরনে কিছুটা শংকিত হল! অতি উৎসাহী দু’য়েকজন এস দরজা নক করলে,বলেছি শরীর খারাপ।
দুপুরের খাবার সময় মত খাইনি কিন্তু রাতের খাবার ওদের পীড়া পিড়িতে একসাথেই খেতে হল। ডাইনিং রুমে ঢুকতেই আমার চেহারা দেখে একসাথে কয়েকজন আঁতকে উঠল! কি খবর দাদা-তোমার কি হয়েছে? একদিনে চেহারা দেখি ঝড়ে পড়া বকের মত করে ফেলেছ!
আমি উপরে বিষন্ন ভাব দেখালেও মনে মনে ফুলে ফুলে হাসছি!আজকের রাতটা পোহাতে দে,তারপর দেখবি?
সেরাতে ভাল ঘুম হলোনা। আশ্চর্য কিছুতেই তার চেহারা মনে করতে পারছি না। শুধু মনে আছে রক্তলাল পোশাক পরা লাস্যময়ী সুন্দরী তরুনী সে।ব্যাস এই টুকু!
শঙ্কা জাগছে মনে যদি সে না আসে? আচ্ছা আমি ভুল শুনিনিতো কালকেই যেতে বলেছে না আজকের কথা বলেছিল?
দুঃশ্চিন্তা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ে।
সে কি ওই সিনেমা হলের কথাই বলেছে, নাকি অন্য কোথাও? সময়টা ঠিক আছেতো? ধ্যাৎ এত তাড়াহুড়ো করে বিদায় নিল যে ভাল করে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না।
যদি আগে এসে সে ফিরে যায় অথবা আমি সময় মত না পৌছুতে পারি? তারতো কোন ঠিকানা আমার কাছে নেই, তবে আর কি দেখা হবে না?
এসব ভাবতে ভাবতে একরাস দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়লাম। শো শো শব্দে ঘুম ভাঙ্গল সাড়ে এগারটার দিকে। আড়মোড় ভেঙ্গে ঘড়ি দেখতেই ধরমড় করে উঠে বসলাম। শব্দের উৎস খুজতে পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই আমার পিলে চমকে উঠল! বাইরে প্রচন্ড তুষার ঝড় হচ্ছে। ঝড়ের তোড়ে এক ফুট দুরের কিছু দেখা যায়না। এখন কি হবে? এ ঝড় যদি দুপুরের আগে না থামে ?
সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু ঝড় থামার লক্ষন নেই। এদিকে আমি নাস্তা সেরে পোষাক -আশাক পরে ফিটফাট হয়ে জানলার ধারে হুতোম পেঁচার মত মুখ করে বসে আছি। অবশেষে দেড়টার দিকে ঝড়ের প্রকোপ কমে এল। এখন আর দেরি করা যায়না, তাড়াহুড়ো করে রুমে তালা লাগিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম।
বাইরে পা দিতেই সজোরে বাতাসের ঝাপটা এসে আমার মুখে আছড়ে পড়ল। বালির মত বরফের কনা গুলো যেন সূচের চমত বিঁধছে! চোখ মেলে চাওয়া দুস্কর-ওদিকে রাস্তায় যেন বুক উচু বরফ জমে আছে।
কুঁজো হয়ে কচ্ছপ গতিতে তীব্র বাতাস আর বরফ কণা ঠেলে এগিয়ে প্রধান সড়কের দিকে।
বাস স্ট্যান্ডের কাছে যেতেই দেখি ওই রুটের একটা বাস সবে স্টপেজ ত্যাগ করল।এখন যত জোরেই চিৎকার করে ডাকিনা কেন তাদের কানে আমার কন্ঠ গিয়ে পৌছুবে না। এই রুটে এমনিতেই বাস কম চলে নেক্টট বাস যে কখন আসবে আল্লা মালুম? নাঃ আর হোলনা-লাভ ইন মস্কো’র মনে হয় এখানেই সমাপ্তি! ততক্ষনে হাল ছেড়ে দিয়েছি।
বিধাতা বললেন সেটা কেমনে হয় এখনো যে,অনেক খেলা বাকি রয়ে গেছে।
দুর থেকে একটা ট্যাক্সিকে আসতে দেখেই হৃদয়খানা আবার নেচে উঠল – ট্যাক্সি... হাত বাড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠতেই ক্যাঁচ করে ব্রেক কষে বরফের উপর কিছুটা স্কিড করে ট্যাক্সিটা আমার সামনে এসে থাম। কিছু না জিজ্ঞেস করেই গাড়িতে উঠে বসলাম।
সবে ঝড় শেষ হয়েছ। রাস্তায় উচু হয়ে বরফ জমে আছে। এ বরফ পরিস্কার করতে এখনো অনেক দেরী। গাড়ি চলছে হচ্ছে ঢিমেতালে। বারবার তাগাদা দেয়া সত্বেও ঘন্টায় বিশ কিলোমিটারের বেশী গতি বাড়েনি।
ওখানে গিয়ে পৌছালাম দুটো বেজে দশে। মনে মনে আস্বস্ত হলাম খুব বেশী দেরী হয়নি। ঘড়ির কাঁটা ধরে সময়মত মোলাকাত করে-এমন প্রেমিক জুটি পৃথিবীতে ক’জোড়া আছে?
কম্পিত বক্ষে দরজা ঠেলে ওয়েটিংরুমে ঢুকে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখি,সে নেই! ঘাবড়ালাম না,এই ঝড়ে তারও আসতে হয়তো দেরী হচ্ছে।
ঘড়ির কাটা এগিয়ে চলছে... কিন্তু যার আশায় বসে আছি তার দেখা ন।।। কেউ একজন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই ভাবছি এই বুঝি সে এল। বৃথাই সে অপেক্ষা- ইভেনিং শো শেষ হতে চলল প্রায়,কিন্তু তার টিকিটির দেখা নেই।
দুয়েকবার বাইরে গিয়েও তালাশ করে এলাম? নেই-নেই সে কোথাও নেই।
বিকেল পাঁচটার দিকে হতাশ-বিদ্ধস্ত আমি রক্তহীন মুখে বের হয়ে এলাম। তাকে দেখার আশা ফুরিয়েছে তবুও শেষবার তাকে চারপাশ ভাল করে খুঁজে দেখলাম কোথাও সে আছে কিনা? রুমে ফিরলাম সন্ধ্যের মুখে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চুপি চুপি!
মাস দুয়েক পরের কথা... শহরের মধ্যিখানে এক ‘আদিনিক’(আদি আমলের)শপিং মল আমার অভ্যাসমত ঘুরে ঘুরে দেখছি? মওকামত দুয়েকটা জিনিস কিনছিও। একতলা হয়ে দো’তালা ঘুরে তিন তলার সিড়ির শেষ ধাপে পা দিয়েই কেন যেন পিছনে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলাম! দেখি এ্যালোনা ..হ্যা এ্যালোনাই হবে তার সেই বোনের হাত ধরে উপরে উঠে আসছে। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে সিড়ির পাশে রেলিং ধরে দাড়ালাম। সে আমার দিকে একবার ফিরেও তাকাল না,সেভাবেই বোনের সাথে গপ্পো করতে করতে ঠিক নাকের ডগা দিয়ে হেটে চলে গেল।
ভুল করলাম নাকি? এই কি সেই? একটু কনফিউজ!
কাছে কাছে হাটছি আর লক্ষ্য করছি তার হাটা চলা হাসি কথা। ঠিকই আছে একদম অবিকল তার মত, তা ছাড়া সাথে থাকা ছোট বোনটা?
খুব কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করতে করতে কয়েকবার চোখাচোখিও হয়ে গেল কিন্তু কেন যেন সে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল?
বুঝতে পারলামনা,কেন সে আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে? কিছুটা আত্মঅহংকারে লাগল। ফাজলামী পেয়েছ, সেদিন যেচে আমার সাথে আলাপ করে, একদিন পরে ঝড় বৃস্টির মধ্যে সারাদিন অপেক্ষা করিয়ে এখন ভাব দেখাচ্ছ আমাকে চেননা না।
দোতালার সিড়তে নামার মুখে তাকে ধরলাম।
‘কেমন আছ? চিনতে পেরেছ আমাকে’? সে একটু চমকে আমার দিকে কেমন ঘোলা চোখে চাইল।
‘দুঃখিত। তোমাকেতো চিনতে পারলাম না’? কি নির্জলা মিথ্যে প্রতিউত্তর।
‘মানে? সেদিন তোমার সাথে না পরিচয় হল অমুক কিনো থিয়েটারে(সিনেমা হল)’?
‘কোথায়’? এমন ভাবে বলল যেন মস্কো শহরে আজকেই প্রথম এল! ‘তোমার ভুল হচ্ছে’।
দিশেহারা আমি তার স্মৃতি উদ্ধারের শেষ চেস্টা করলাম,’তুমি এ্যালোনা না? আর ও তোমার বোন ওল্যা..’?
‘দুঃখিত- তোমার ভুল হচ্ছে’! তার ছোট বোনটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়ল।
হতভম্ভ আমি লজ্জিত অপমানিত আমি রক্তিম মুখে স্তানুর মত সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম... শেষ
আগের পর্বের জন্য ক্লিক করুন; Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৩০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×