somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলকাশ –পর্ব ১৩

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
আলকাশ প্রথম পর্বঃ Click This Link
লিয়েনা এই প্রথম খানিকটা ভ্যবাচ্যকা খেয়ে গেল।তার শরিরটা আচমকা কেঁপে উঠল-মুখ জুড়ে রক্তের ছোপ! সে তখুনি নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু হেসে বলল,‘লাদনা-উভিদ্বেম স্কোরা’(ওকে –দেখা হবে শীঘ্রী)।
সে মুহূর্তেই লারিসার ঝটিকা আগমন! মিশু, তোমার কাছে সিগারেট আছে। ওর চেহারা দেখে বুঝলাম, বিষয় গুরুতর! তার সিগারেট টা ধরিয়ে দিতেই, ধপ্‌ করে ডিভানে বসে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে জোর দমে টানতে লাগল।
ওকে কিছু জিগ্যেস করা ঠিক হবে না।লিয়েনাকে ইশারা করে পর্দা সরিয়ে রুমে ঢুকে দেখি, মইন অপরাধী চেহারা নিয়ে বসে আছে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।
দেখি ভাই এক পেগ ঢালেন-গলাটা তো শুকায় গেছে। পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য আমার প্রস্তাব।
মইন নিঃশব্দে উঠে গিয়ে চারজনের গ্লাসেই ওয়াইন ঢেলে- দুটো গ্লাস আমার হাতে দিয়ে ইশারায় বলল, ওদের দুজনকে আগে এ দুটো দিয়ে আসতে। আমি গ্লাস দুটো নিয়ে লিয়েনার হাতে একটা গ্লাস দিতেই সে বেশ খূশী মনে ধন্যবাদ দিল।
লারিসার দৃষ্টি আকর্ষন করতেই, সে মুখ না ঘুরিয়েই বলল, সামনে রেখে যেতে। মনে তো মেঘ জমেছে- ওমা এ দেখি চোখেও জলের আভাস!
-স্তো উস্তাবোই সিস্ত্রা ( কি হয়েছে তোমার বইন)?
সে সিগারেট ধরা হাতের তালুতে নাকের পানি ঘষে বলল,- নিচুভ( কিছুনা)
কি আর করার, উত্তর না পেয়ে; ফের মইনের দরবারে।
লারিসা নিজের শরির নিয়ে ভীষণ সচেতন! প্রেমিকের সাথে একটু আধটু ঘনিষ্ঠ হতে আপত্তি নেই কিন্তু পুরো শরিরকে উন্মুক্ত করতে সে নারাজ! ওদিকে মইনের ভাষ্য হল ; এ মেয়েকে পটিয়েছি খুব কষ্টে, কখন হাত ফস্‌কে যায় বলাতো যায় না-তাই তার পুরোটা চাই। ফাঁদে আটকানোর অপকৌশল।
লারিসা বার বার সতর্ক করার পরেও সে আজ একটু বেশি জোরাজুরি করেছে!
বাপুরে, একে আমি কেমনে বোঝাই, পর্দার ওপাশেই জলজ্যান্ত দু’জন মানুষ বসে আছে, আর সে আছে তার ...
মইনকে মুখোমুখি করলাম, লারিসা-লিয়েনার আদালতে। মইন কিছুটা রুশীয়,কটা শব্দ রোমানিয়ান আর ইংরেজি মিলিয়ে মাপ চাইল।
লারিসার মান ভাঙ্গানো কি আর সহজ কথা।সে মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,ও শুধূ ওইসব চায়! প্রেম ভালবাসা, বিয়ে সব ফালতু।
লিয়েনা সব দেখে শুনে মুচকি মুচকি হাসে।লারিসার শারিরিক শুচিতা তার কাছে যেন কৌতুক মনে হয়। চোখে চোখে আমাদের সরস বার্তা বিনিময় হল।
সেদিনের পরে বেশ কিছুদিন লিয়েনা আর এমুখো হয়নি। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হয়। কিন্তু আসবে আসবে করে আর আসা হয় না। ওর বাবা অন্য শহরে ব্যাবসা করে। তিনি দু/চার মাসে এক আধবার আসেন- তখন লিয়েনা বাবাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। এখানে লিয়েনার মায়েরও নাকি কিসের ব্যাবসা আছে। পড়া শুনার ফাকে ফাঁকে- মেয়ে তার মাকে সাহায্য করে। সব ঠিক আছে, কিন্তু আমি যে ভেসে গেছি- আমার কি হবে?
লারিসার ওইদিন রাগ আর অভিমান কাজে দিয়েছে। মইন এখন তাকে সমঝে চলে। যা করে আমার সামনে! আমি যেন এলেবেলে ডন ডং।
কিন্তু আরেকটা সমস্যা হল ইদানিং মইনের মদ খাওয়া বেড়ে গেছে- মাঝে মধ্যেই মাতলামো করে!
আমিতো এমনিতেই নেশার ঘোরে- মদের নেশায় সে ঘোর কাটবে না।
মইনের মাতলামি বাড়ে আর আমার মদ্যাসক্তি কমতে থাকে। লারিসাও বিরক্ত হয়! খুব বেশী মেজাজ খারাপ হলে সে আমার কাছে এসে চুপ চাপ বসে থাকে বা গল্প করে।
কিন্তু আমার মন বলছে মইনের এই অতি মদ আসক্তির কারন ভিন্ন। আমি চুপি চুপি তাকে অনুসরন করি...
এর মাঝেই আমার কয়েকজন বন্ধু হুট করেই আসল মলদোভিয়া ভ্রমনে। মইনের সাথে তাদের পরিচয় নেই।
তারা এসে উঠল এক বড় ভায়ের বাসায়।
তারা এসেই আমাকে খুঁজে বের করল। আমাকে ছাড়া নাকি আড্ডা জমছে না।বহুদিন বাদে একা একা গর্ত থেকে বের হলাম। বন্ধুদের সাথে দেখা হতে চরম উষ্ণ আন্তরিকতায় বরণ।
গল্পে কবিতায় গানে আর কার্ড খেলায় গভীর রাত অবধি চলল আমাদের আড্ডা। কারো কথাই যেন ফুরাতে চায়না।এর মধ্যে একজনকে যদিও বড় ভাই বলে সন্মোধন করতাম কিন্ত আমাদের সম্পর্ক ছিল অনেক বেশী বন্ধুত্বপূর্ন। আমাদের সখ ও পছন্দের মিল ছিল বিস্ময়কর। বাকপটু সদালাপী লাস্যময় সেই বড়ভাইরুপী বন্ধুর সাথে জমত বেশ। গল্পে গল্পে মেলা রাত হয়ে গেলে সে অনুরোধ করল রাতটা সেখানে থেকে যেতে।
আমারও ফিরে যাবার তাড়া নেই। দিনের পর দিন এক জায়গায় থাকতে থাকতে কেমন যেন একঘেয়ে লাগছিল। দু-য়েক রাত একটু ভিন্ন পরিবেশে কাটাতে পারলে মন্দ কি,তাই সানন্দেই রাজী হয়ে গেলাম।
মইনকে ফোন করে একথাটা জানাতেই সে যেন একটু মনক্ষুন্ন হল ,বলল‘ কি ব্যাপার পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে আমাদের ভুলে গেলেন?’ তার এই আবেগী কথার প্রশ্রয় না দিয়ে অট্টহেসে রিসিভার রেখে দিলাম।
সেদিন ব্রিজ খেলা বেশ জমেছিল। তিন গেমের বাজিতে শ্রেয়তর ব্যাবধানে দু—গেমের রাবার জিতে রাতের খাবার সেরে উৎফুল­ চিত্তে যখন বন্ধুর বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম তখন ঘড়িতে প্রায় রাত সাড়ে বারোটার মত বাজে । বাস স্টপেজে গিয়ে একটু ধন্দে পড়লাম ট্যাক্সি না বাসে যাব এই নিয়ে। ফুটপাথের ধারে গিয়ে ট্যাক্সির জন্য হাত উচু করতেই হুশ..শ করে আমারই রুটের একটা বাস এসে ভিড়ল। সামান্য দোনমনা করে বাসেই উঠে বসলাম। যাত্রী বলতে সাকুল্যে সাত— আটজন হবে,প্রায় সবাই নেশায় চুর। যে যার মত নিজেকে নিয়ে মশগুল,আমার দিকে কেউ ফিরেও চাইলনা। আমিও সিটে বসে বিশাল জানালা দিয়ে প্রকৃতির দিকে চোখ রেখে নিজের মধ্যে হারিয়ে গেলাম।
বেশী দুরের পথ নয়,মিনিটি পঁচিশেকের মধ্যেই আমার গন্তব্যে পৌছে গেলাম। বাস থেকে নেমে দু—পা বাড়াতেই শিহরিত হলাম,আজো ফের পুর্নিমার চাঁদের আলোয় যেন চারিদিক ভেসে যাচ্ছে।
‘উলিতসা ফ্লোলিওর’ এর চারিপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কাউকে বিমোহিত করবে,শরতের এই হালকা শীতের রাতে পূর্ন চন্দ্রের আলো এই সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুন! বয়ে চলা মৃদুমন্দ বাতাস রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ বার্চ,এলম্,ওক,এ্যাম্পেনের পাতায় পাতায় পরশ বুলিয়ে মরম ঐকতানের সুর ছড়াচ্ছে।ওদের সাথে তাল মেলাতে আমিও বেসুরে গলায় গুনগুন করে একখানা গান ধরলাম। হঠাৎ নিচুকন্ঠ আর মৃদু হাসির শব্দে ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছন ফিরে দেখে আমার থেকে বেশ খানিকটা দুরে দুটো ছেলে নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে এগিয়ে আসছে,স্বাভাবিক দৃশ্য,ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে আমি আবার নতুন একটা গানের সুর ভাজতে ভাজতে এগিয়ে চললাম।
বাস স্টপেজ থেকে শ’দুয়েক মিটার এগিয়ে গেলে আচমকা পথ খানিকটা নেমে গেছে,সেখানে কয়েক ধাপ সিড়ি দিয়ে নামতে হয়,ডানে মোড় নিয়ে সামান্য একটু এগুলেই বিশাল উচু একটা ইজ্বদানী (বাড়ি — মালদোভানরা বলে ‘আকাসা’)যেন পথ আগলে দাড়ায়,সে বাড়ির ছায়াটা মাড়িয়ে ঘাড় বেকিয়ে তাকালেই আমাদের ছোটখাট বাড়িটা নজরে আসে।
সিড়ির ধাপ গুলি পেরিয়ে ওই উচু বাড়িটার সামনে আসতেই পিছন থেকে ছেলে দুটো মালদোভান ভাষায় (আদপে রুমানিয়ান) ডাক দিল ‘বন্ধু একটু দাড়াবে?’

পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×