somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ সময়ে এসে সরকারের দেশের স্বার্থ বিরোধী বিশেষ কিছু পদক্ষেপ এবং প্রথম আলর সম্রাজ্যবাদীদের নির্লজ্জ তোষণ - চোষন নীতি।

১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকার সাথে টিকফা চুক্তি সম্পাদনে নীতিগত সম্মতি এবং তা মন্ত্রীসভায় গতকাল অনুমোদন দেয়া হয়েছে ( এখানো সময় আছে সরকারকে চুক্তি সম্পাদনে বিরত রাখার)।
>> প্রথম আলো টিকফা চুক্তি সম্পাদন বিষয়ে লেখেছে, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের অনেক লাভ হবে।
লাভ কি কি হতে পারে তার একটি সামান্য নমুনা দিলামঃ

* এখন আমরা পাইরেটেড ইউন্ডোজ ব্যাবহার করি । একটা উইন্ডোজের সিডি/ ডিভিডি ফুটপাথেও পাওয়া যায় মাত্র ২০-৪০ টাকার মধ্যে। টিকফা চুক্তি সম্পাদন হলে আমরা আর পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যাবহার করতে পারব না। আমেরিকান কোন নাগরিক/ অবজারভার/ স্পাই যদি আপনার শহরের কোন মার্কেটের ডিভিডির দোকানে দেখে যে সেখানে ডিসপ্লেতে পাইরেটেড উইন্ডোজ, এডোবি ফটোশপ কিংবা অন্য কোন সিডি আছে এবং ক্রেতারা দেদারছে তা কিনছে তাহলে সে ওই দোকান মার্ক করে রাখবে এবং আমেরিকান দূতাবাস কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। ফলাফল হবে সরকার আমেরিকান দূতাবাসের অনুরোধে টিকফা চুক্তির ধারার ক্ষমতার বলে ওই দোকান মালিক এবং যেসব ক্রেতা ওই দোকান থেকে পাইরেটেড সফটওয়ার কিনেছে তাদের গ্রেফতার করে আইটি আইনে জেলের ভাত খাওয়াবে।

তখন আমাদের ৭০০০- ১০০০০ টাকা দিয়ে অরিজিনাল উইন্ডোজ কিনতে হবে। অন্য সফটওয়ারের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপারটি ঘটবে।
* আমরা এখন ডিভিডির দোকান থেকে সুপারবিটের ডিভিডি কিনতে পারি পার পিস ৬০-৮০ টাকার মধ্যে। সুপারবিটের ডিভিডি গুলো পাইরেটেড। অরিজিনাল ডিভিডি ওরা এক কপি ইমপোর্ট করে সেটা থেকে এনকোড করে কপি করে বাজারে ছাড়ে। টিকফা চুক্তি সম্পাদিত হলে আমাদের ওই সুযোগ আর থাকবে না। তখন আমাদের ওয়ারনার ব্রাদার্স, প্যারামাউন্ট, ইউনিভার্সালের অফিসিয়াল ডিভিডি রিলিজ পাওয়ার পর আমাদের আমদানীকারকরা সেগুলো দেশে ইমপোর্ট করার পর আমরা পাব। দাম পড়বে পার পিস মাত্র ৫০০-১০০০ টাকা। ব্লু-রে তে মুভি দেখা স্বপ্ন হয়ে যাবে তখন।

অনেকে বলতে পারেন আমরাতো মুভি ডাউনলোড দেই। ডিভিডি কে কেনে? টিকফা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মেধাসত্ত্ব আইনের ধারায় আমেরিকা সরকারকে চাপ দেবে পাইরেটেড মুভি/ সফটওয়ার / ই-বুক ইত্যাদি ডাউনলোডের সাইট গুলো স্থায়ীভাবে ব্যান করে দেয়ার জন্য। সরকার যেভাবে ইউ-টিউব বন্ধ করেছে ঠিক সেভাবে এসব সাইটও বন্ধ করবে। দরিদ্র ডট কম, দি পাইরেট বে এবং এর সব প্রক্সি, কিক এস টরেন্ট এবং এর সব প্রক্সি থেকে মুভি/ বই/ মিউজিক নামানো বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকে প্রক্সির কথা বলতে পারেন। এই চুক্তির ফলে আমেরিকা তাদের মেধাসত্ত্ব রক্ষার জন্য যা যা দরকার তার সবই করবে। বি টি আর সি কে এমন টেকনোলজি সরবরাহ করবে যেখানে যাবতীয় ডাউনলোড সাইট এবং তাদের প্রক্সিও খুব সহজেই ফিল্টারিং করা যাবে। উল্লেখ্য কয়েকবছর আগে এই আইনের ধারায় আমেরিকায় এবং সারা বিশ্বে মুভি ডাউনলোডের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় সাইট ''মেগা আপলোড'' বন্ধ করে দেয়।

* সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশের উদীয়মান আইটি খাত। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, আইটি বিশেষজ্ঞ, ওয়েব ডেভেলেপার ফার্ম গুলোকে প্রতি বছর সফটওয়ার নবায়ন এবং নতুন সফটওয়ার ইনস্টল করার জন্য লাখ লাখ টাকা বাজেটে রাখতে হবে। যারা ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের কাজ করেন তারা গণহারে বেকার হবেন।

* আমেরিকান পেটেন্ট যেগুলো পাইরেটেড ওয়েতে এখন অনেক দেশ মডিফাই করে নিজেদের করে নিয়েছে যার কারণে আমেরিকা সেগুলোর উপর কোন আইনী স্বত্ত্ব খাটাতে পারে না সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে টিফকার মত কোন চুক্তি না থাকার কারণে। যেমনঃ চীন। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেশের ফার্মাসিউটিয়াল খাত অর্থাৎ ঔষধ শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। কারণ বেশিরভাগ ঔষুধের ফর্মূলা আমেরিকান বিজ্ঞানীদের। দেশে উতপাদিত ঔষধ বাজারজাত করণে লাভের একটি অংশ কিংবা পেটেন্ট স্বত্ত্বের একটি নির্দিষ্ট ফি প্রতিবছর আমেরিকাকে দিতে হবে। তখন দেখা যাবে প্যারাসিটেমল,সিপ্রোপক্সিন এবং যাবতীয় এন্টিবায়োটিক বর্তমান মূল্যের চেয়ে দ্বিগুন, ক্ষেত্র বিশেষে কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হবে। দেশের স্বাস্থ খাতের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ওষুধ কিনতে না পেরে সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর এসব অনেক মানুষ মরবে, বিশেষ করে দূর্গম এলাকা গুলোতে অবস্থা আরো খারাপ হবে।

*গার্মেন্টস খাতেও এর প্রভাব পড়বে। টেক্সটাইল এবং কাপড় উতপাদন খাতে যেসব ইনভেন্ট আমেরিকান সেসব আগের মত ফ্রিকোয়েন্টলি ব্যবহার করা যাবে না। এখানেও অন্যান্য খাতের মত আমেরিকাকে প্যাটেন্ট স্বত্ত্ব দিতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

*মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বই গুলোর বেশিরভাগেরই লেখক আমেরিকান। বিশেষ করে বিজনেজ ফ্যাকাল্টি এবং সায়েন্সের বই গুলোও বেশির ভাগই আমেরিকান লেখকের। এখন আমরা এই বই গুলো নীলক্ষেত থেকে ফটো কপি এডিশন দিয়ে কাজ চালাই। বিভাগীয় শহর গুলোর বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যালের ছাত্ররাও একই কাজই করে। টিকফা চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ছাত্রদের চড়া দামে বিদেশী বইয়ের অরিজিনাল এডিশন কনতে হবে। কোন দোকানে ফটোকপি ভার্সন পাওয়া গেলে তাকে পাইরেসী আইনে গ্রফতার করবে।

উল্লেখ্য বিগত ২০০৩- ০৪ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় এনে চুক্তিটি অনুমোদন করেনি। পরে আমেরিকা দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারকে চুক্তিটি সাক্ষরে চাপ প্রয়োগ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় তা সাক্ষর করেনি।

এই আওয়ামী লীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে প্রতিবারই কোন না কোন গণবিরোধী এবং জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী চুক্তি সাক্ষর করেছে । যেমন গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি (যার ফলে উত্তর বঙ্গে পদ্মা এবং অন্যান্য নদী শুকিয়ে মুরুভূমি হওয়ার পথে), পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ( যার ফলে আজ পার্বত্য অঞ্চলের অখন্ডতা এবং সেখানে বাঙালীদের অস্থিত্ব হুমকির মুখে), ভারতের সাথে ট্রানজিট চুক্তি (যার ফলে ভারতের গাড়ী এবং নৌযান বিনা মাসুলে/ বিনা ফি তে বাংলাদেশের রাস্তা, নদী ব্যবহার করে ভারতে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে), এবং সর্বশেষ এই গোলামীর টিকফা চুক্তি সাক্ষরে মন্ত্রী সভার অনুমোদন প্রদান। এখনো সময় ফুরিয়ে যায় নি। চুক্তি সম্পাদনের আগেই যেভাবেই হোক সরকারকে এই বিরত রাখতে হবে।
>> আরো অনেক অসুবিধা আছে। বলতে গেলে কয়েক পর্ব যাবে। তাই ওদিকে গেলাম না।

>>> প্রথম আলোর এই টিকফা চুক্তির পক্ষে দালালীর পাশাপাশি আজ উপসম্পাদকীয়তে লেখেছে , দেশে নাকি এখন ঘণ ঘণ ''আঞ্চলিক হরতাল'' বেশি হচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত। ভালো কথা মানলাম। যুক্তি আছে। কথা হচ্ছে প্রথম আলো আসলে সম্পূর্ণ অন্য একটি উদ্দেশ্যে একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে হেয় করার উদ্দেশ্যে এই খবরটিকে মোড়ক হসেবে ব্যাবহার করেছে। এই যৌক্তিক আন্দোলনটি হল পার্বত্য চট্টগ্রামে আগামী ৯,১০, ১১ জুলাই হরতাল ডেকেছে কয়েকটি পার্বত্য বাঙালীদের সংগঠন। বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন সংশোধন এবং তা বাস্তবায়ন রূখতে এই হরতাল দেয় পার্বত্য বাঙালীদের কয়েকটি সংগঠন। দেশের অন্য অঞ্চলের রাজনীতির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি এক নয়। সে কারণে পার্বত্য অঞ্চলের এই হরতালকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আঞ্চলিক হরতালের সাথে মিলিয়ে এর গুরুত্ব হ্রাসের অপচেষ্টা খুবই স্পষ্ট।

প্রথম আলোর এই দেশ বিরোধী অবস্থান নতুন নয়। সময় থাকতে এসব রূখতে না পারলে পরবর্তীতে অনেক বেশি ভুগতে হবে দেশের অপামর জনগোষ্ঠীকে। ইংরেজ রা আমাদের সম্পদ ব্যবহার করে আমাদেরই শোষণ করেছিল ২০০ বছর। এখন নতুন সম্রাজ্যবাদীরাও তাই করবে। দেশে সম্রজ্যবাদীদের ভাড়া খাটা প্রথম আলোর মত মীর জাফরের অভাব নেই।
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×