somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুরুষের পর্দা পুষিদা

২২ শে জুন, ২০০৭ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন পরে ব্লগে আসলাম। ব্লগে কথা বলার আগ্রহ চলে গিয়েছে। আজ ঢুকার পরে একজন বললো ব্লগে নাকি একটা ঝগড়া হচ্ছে। ইচ্ছা ছিল না, নিতান্তই লিংক পেয়ে ঢুকলাম। ঢুকেই মনটা তিতা হয়ে গেল।

পর্দা নিয়ে আমি খু্বই সেনসিটিভ। কেউ কিচ্ছু বললে সহ্য করতে পারি না। কিন্তু আমি দু:খিত, এই ধরণের কোন কথাও আমি সহ্য করতে পারি না। কারণ ইসলামে এই ধরণের কথা বলার অধিকার দেয়া হয় নি।

আমার এই পোস্টটা যদি কেউ 'ওভার রিয়েকশন' মনে করে, তাহলে বলি--আমার ইসলামের ভিতরে থাকার দাবী করে কেউ যদি কোন অন্যায় করে, তাহলে তাকেই আমি ধরব সবচেয়ে শক্ত করে।

কাউকে 'এই ধরণের মেয়েরা' বলে একটা গ্রুপে ফেলে দিয়ে 'কাপড় খুলে চলার' ইংগিত দেয়াটা কিন্তু খুব নোংরা ইংগিত। হাইপোথেটিক্যালি রাগ আপু বলেছেন তিন হাত লম্বা বোরখা তাঁর কাছে অদ্ভূত লাগে, কিন্তু কাউকে আঙ্গুল উচিয়ে বলেন নি, 'তুমি যা পড়ো তা আমার অদ্ভূত লাগে'। একজন ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত ভাবে জড়িয়ে ফেলা মানেই খুব নোংরামি করা। আর এই নোংরামি করার অধিকার কিন্তু আল্লাহ দেন নি।

ইসলামে প্রত্যেকটা ব্যক্তির উপর শ্রদ্ধাশীল করতে বলা হয়েছে। মিথ্যা, গীবত, গালি, অপবাদ, যত যা কিছু আছে যা আরেকজনের মনে আঘাত দিতে পারে, সব কিছুর কাঁটা একটা একটা করে তুলে ফেলা হয়েছে। কেউ শত্রুপক্ষের হলেও তার সাথে 'অভদ্র' হওয়ার অধিকার দেয় হয় নি।

এই ক্ষেত্রে নারী পুরুষের কোন পার্থক্য নেই।

কোন মানুষের সাথে অসম্মানজনক আচরণ করে পার পাওয়া যাবে না, আর কোন নারীর সাথে অসম্মানজনক ব্যবহার করে পার পাওয়া যাবে--এই কি হয়?

কুরআনের যেই জায়গায় মেয়েদের পর্দার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে সবার আগে ছেলেদের দৃষ্টি সংযত করতে বলা হয়েছে, তারপরে মেয়েদের কথা বলেছেন আল্লাহ। মেয়েদের পর্দা নিয়ে এত কমোশন, ছেলেদের নিয়ে কিছুই দেখি না, কুরআনের অনুসারীদের এই অনুসরন দেখলে বড় দু:খ হয়!

আমাদের এখনকার সমাজে 'পর্দা' নিয়ে যত বই, যত কথা, যত তক্ক, যত ওয়াজ, বক্তৃতা তার অন্তত শতকরা নিরানব্বই ভাগই 'মেয়েদের' পর্দা নিয়ে।

কিন্তু অত্যন্ত দু:খের সাথে জানাচ্ছি, হাদীস গ্রন্থগুলোতে মেয়েদের পোশাক আশাক নিয়ে যত হাদীস আছে, ছেলেদের পোশাক আশাক, সে সংক্রান্ত নির্দেশাবলী নিয়ে হাদীস আছে 'অনেক বেশি!'

অনেক বেশি!

শুনেছেন ঠিক মতো--মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের পোশাক নিয়ে আল্লাহর রসুল বেশি চিন্তিত ছিলেন!

মেয়েদের হিজাবের চেয়ে ছেলেদের দৃষ্টি সংবরন নিয়ে আল্লাহ বেশি চিন্তিত ছিলেন, তাই সেটা আগে বলেছেন!

আমি এটা জেনে হতাশায় মাথা নাড়লাম!

ইসলামে ছেলে আর মেয়েদের 'মর্যাদা' এক, 'মানুষ', আল্লাহর বান্দা হিসেবে মর্যাদা এক!

মুসলিমদের এ কি রোগ শুরু হয়েছে, 'মেয়েদের' পর্দার উপর গ্রন্থের পর গ্রন্থ, ছেলেদের পর্দার উপর কিছুই নেই!কেউ কি আজ অব্দি একটা বইও দেখেছেন শুধু ছেলেদের পর্দার উপর লেখা?

সবচেয়ে খুশি হবো সেই দিন যেই দিন পুরুষদের পর্দার বিস্তারিত আইন কানুন নিয়ে কোন বই একজন নারী লিখবেন! মেয়েদের কাপড়ের দৈর্ঘ্য, রং, হাঁটাচলা, কথাবার্তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যবচ্ছেদ পুরুষরা তো যথেষ্ট করলো! আর কত!

কিন্তু চিন্তা করুন ব্যাপারটা কেমন হবে। আমাদের সমাজে (অনাত্মীয়--বাবা না, চাচা না, ভাই না, স্বামী না) ছেলেরা (যাদের মোড়লীপনা করার কোন অধিকারই দেয়া হয় নি), তারা যেভাবে মেয়েদের পর্দার সীমাপরিসীমার উপদেশ দিতে দিতে রাতে ঘুমাতে পারে না, সেই কাজগুলো মেয়েরা শুরু করলে কেমন হতো?

কেমন লাগবে, রাস্তায় কোন ছেলে তাকালে যদি কাছে গিয়ে বোরখাওয়ালী মেয়েরা বলা শুরু করে, ওই ব্যাটা তাকাবি তো চোখ কানা করে দিব। (একটা হাদীসে কারও ঘরে মানে প্রাইভেসীতে উঁকি দিলে চোখ কানা করে দেয়ার হুমকি দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে! হিজাব পড়ার পরেও পুরুষরা যখন বলে এতেও 'ঠিকমত' পর্দা হয় নি, কিংবা কোন নারীর পোশাক আশাকের ব্যপারে মন্তব্য করে, তখন ইচ্ছা করে সত্যি সত্যি চোখ কানা করে দেই! এই অভদ্রতার অধিকার কে দিল?)

একটা হাদীসে পড়ছিলাম সেদিন, রাসূল (সা) কখনও গায়ের জামা খুলতেন না নিজের খুব কাছের ছাড়া অন্যদের সামনে। 'আজকালকার ছেলেরা' যে কোন উপলক্ষ্যে (গরম লাগা, ক্রিকেট পরবর্তী উল্লাস, সমুদ্র বিলাস) গায়ের জামা খুলতে একটুও দ্বিধা করে? কিংবা শার্টের বোতাম খোলা রাখা। ওহ, রাসুলের সুন্নত কিন্তু পুরুষদের জন্যও 'ঢিলা ঢালা' কাপড় চোপড় পড়া, এখন মেয়েরা গজ ফিতা নিয়ে পুরুষদের কাপড়ের প্রস্থ মেপে মোড়লীপনা শুরু করলে কেমন লাগতো?

কেমন হতো বোরখা পড়া খালাম্মা টাইপের কেউ গিয়ে যদি হুমকি দিত, পর্দা পুশিদার ঠিক নাই তোর!

অথবা নিজের চেয়ে বয়সে ছোট কোন বোরখাওয়ালী মেয়ে ভাব নিয়ে বলতো, আপনের ভাব সাব দেখে মনে হয় আপনে কাপড় খুলে ঘুরতে পারলেই বাঁচেন!

দাড়ি নিয়ে তো যথেষ্ট কড়া হাদীস আছে, ক্লীন শেভড প্রত্যেককে ধরে কিশোরী তরুনীরা যদি বলা শুরু করতো, আপনের সমস্যা কি? মুখে দাড়ি নাই কেন? আজকালকার মরদরা...

কেমন লাগতো?

খুব শালীন মনে হতো?

খুব স্বাভাবিক মনে হতো?

ওমর (রা) যখন একটা ভুল সিদ্ধান্ত দিলেন, তখন একজন নারী উঠে দাঁড়িয়ে কিন্তু প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করেন নি। ওমর (রা) মাথা পেতে মেনে নিয়েছিলেন।

মুসলিম সমাজের সমস্যা নিয়ে হাজারটা প্রবন্ধ লিখেও কোথাও যাওয়া যাবে না... সমস্যাটা যে প্রায়েই থাকে নিজেরই খুব ভিতরে!

(আমি দু:খিত রাগ আপু। মেয়ে হয়ে অমন ইংগিত শোন কতটা কষ্টকর আমি জানি। ভালো থেকো।)
৩৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×