আমেরিকা কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করছে, কারন সে আমেরিকা বিরোধী বিভিন্ন দেশ কে বিভিন্ন সংগঠন কে একত্র করছিলো। কেন করছিলো? একটু মোটা দাগে কারন ইসরাইল নামক যে দেশটা আছে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য ইরান যেন অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার হিসাবে আবির্ভুত হতে না পারে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর আমেরিকার একটা শ্যেন দৃষ্টি সব সময়ই আছে।
সাদ্দাম হত্যা আর সোলাইমানি হত্যা এক পাল্লায় মাপলে আপনি ভুল করবেন। সাদ্দাম সে সময় একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ (কুয়েত) এক রকম বিনা প্ররোচনায় আক্রমন করছিলো যেভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানী পোল্যান্ড আক্রমন করে। কিন্তু সোলাইমানি হত্যা আর ইরান আক্রমন এক পাল্লায় মাপলে চলবে না। একই সাথে আপনাকে এটাও স্বরন রাখতে হবে ইরাক আক্রমনের প্রেক্ষাপট যখন তৈরী হয় তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন সবে মাত্র ভাঙ্গছে, সারা রাশিয়া তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা, মাফিয়ারা রাশিয়া কন্ট্রোল করছিলো, অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চীনের কোন পাত্তাই ছিল না। একক পাওয়ার হিসাবে সিনিয়র বুশ যা করে পার পেয়ে গেছে সেই একই খেলা খেলে মাথা মোটা ট্রাম্প পার পাবে একথা ভুলেও ভাবা ঠিক হবে না।
প্রথমতঃ আমেরিকা তাদের চাল চেলে দিয়ে বিজয় বার্তা দেখাচ্ছে। মানে সোলাইমানিকে হত্যা করে তারা তাদের মুভ শুরু করছে। এখন ইরান পালটা চাল হিসাবে কি আমেরিকার কোন জাহাজ টাহাজ বা অন্য কোন স্থাপনা আক্রমন করবে? আমার মনে হয় না এই ধরনের হঠকারী চাল ইরান দেবে। কারন সেক্ষেত্রে আমেরিকা একটা সুযোগ পাবে ইরানের কিছু লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমন চালানো।
দ্বিতীয়তঃ নির্বাচনের আগে এই টাইপের একটা কিছু বড় দরকার ছিল যখন সে অভিশংসনের মুখে। নির্বাচনে জিততে হলে ট্রাম্পকে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলতেই হবে। সে খেলাটা সে শুরু করে দিয়েছে। জাতি হিসাবে আমেরিকানরা এখন পড়তির দিকে, সাধারন আমেরিকানদের জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের দেশের একটা রিকশাওয়ালার সাধারন জ্ঞানের থেকেও কম, তবে প্রশাসন বুদ্ধি বৃত্তিক জায়গাগুলো এখন ধরে রেখেছে মুলতঃ ইহুদী আর অভিবাসিত প্রজন্ম দ্ধারা। ইরাককে সরাসরি আক্রমন করার সময়কার পরিস্থিতি আর ইরান আক্রমন করতে চাওয়ার পরিস্থিতি কিন্তু এক না।
সোলাইমানির স্বার্থকতা ছিল সে ইজরাইলী বিরোধী যুদ্ধটাকে (শ্যাডো ওয়ার) ইজরাইলের সীমানায় হাজির করছিলো। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের মর্যদা এনে দিয়েছেন সোলাইমানির যুদ্ধ কৌশল। অপ্রচলিত যুদ্ধে এই মুহুর্তে বিশ্বে তাকে এক নাম্বার ধরা হয়। যে কাজটা এক সময় সি আই এ করত সেই কাজটাই সোলাইমানি অত্যন্ত সুচতুর ভাবে করে যাচ্ছিলেন। যে ভরসায় ইরাক দখল নিয়েছিল সে বাড়া ভাতেও ছাই দিয়ে দিচ্ছিল সোলাইমানি। শিয়া অধ্যূষিত ইরাকে তার ক্ষমতা অনেকটাই গুছিয়ে আনছিলেন সোলাইমানি, যার প্রতিফলন দেখা যায় ইরাকি পার্লামেন্টে মার্কিন বাহিনীর বহিস্কার। সোলাইমানির কুদস যতটা না সামরিক বাহিনী তার থেকে বেশী ছিল গোয়েন্দা বাহিনী অনেকটা সি আই এ, কে জি বি, মোসাদ টাইপের।
ইরান সরাসরি হামলায় যাবে না, যাবার মত সামরিক সক্ষমতাও নেই। আমেরিকার আছে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ গ্যাজেট, আছে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড, আছে বিমানবাহী রনপোত যার যে কোন কিছু দিয়ে যে কোন দেশ ধ্বংস করে দেয়া যায়, সে তুলনায় ইরান কিছুই না। কিন্তু ইরানের যা আছে তার সাথে আমেরিকার তুলনাই চলে না। তাদের আছে কয়েক হাজার মানব বোমা বা হয়ত তারো বেশী। এদের যে কেউ যে কোন জায়গায় নির্দেশ পেলেই ধর্মের নামে দেশের নামে জীবন উড়িয়ে দিতে প্রস্তত। এতে সব থেকে বড় সমস্যায় পড়বে সাধারন আমেরিকানরা। আমেরিকার বাইরে বিশ্বের যে কোন স্থানে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেল। আর মুলতঃ সেটাই হবে। তবে এ হুমকি মুলতঃ সাদা চামড়ার আমেরিকানদের জন্যই বেশী হবে। এর প্রতিফলন দেখতে পাই কয়েক দিন আগে আমেরিকার ফুটবল টীম কাতারে প্রাকটিস করতে যাওয়া বাতিলের মাধ্যমে।
সন্ত্রাস দমনের নামে সন্ত্রাস করে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারন আমেরিকা। তবে এটাও ঠিক সুবুদ্ধির পরিচায়ক দেয়ার মানসিকতা এখনো অনেক আমেরিকান রাখে, যার কারনে আমেরিকার অধিকাংশ জায়গায় এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গেছে।
আমেরিকার এখন যুদ্ধে জড়ানোর মত অবস্থায় নেই, চীন, রাশিয়া এখন আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখে তারা কোন ব্যাপারে মনে হয়না আমেরিকারে ছাড় দেবে। শিয়া সুন্নী দ্বন্দ্ব নতুন করে মোড় দিয়েছে যখন সুন্নী প্রধান তুরস্কের সাথে ইরান তার সুসম্পর্ক তৈরী করেছে। সিরিয়ায় আমেরিকা লেজে গোবর করে ফেলছে। ইয়েমেনে সৌদী জোট (নামেই জোট আসলে আমেরিকা সমর্থিত সৌদী বাহিনী) মাঝে মাঝেই মার খাচ্ছে বিদ্রোহী শিয়া মিলিশিয়াদের হাতে, ইদানিং তারা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছিলো।
সুলায়মানিকে মেরে ফেলার দিন আমেরিকায় তেলের দাম ৩%, সোনার দাম ৪% বেড়ে যায়, এবং শেয়ার বাজারের ৩০০ পয়েন্ট সুচক পড়ে যায়। আপাততঃ মনে হয়না আর কিছু হবে সরাসরি অন্ততঃ ইরানের তরফ থেকে তবে এটা নিশ্চিত চোরাগুপ্তা আক্রমনের শিকার আমেরিকনরা হবে বিভিন্ন দেশে। যার লক্ষ্যবস্ত হবে সাধারন আমেরিকান এবং আমেরিকান এ্যাম্বেসী। আর ক্ষমতায় টিকে যাবার জন্য ট্রাম্পের দরকার হবে আরো বড় কোন কিছু করা যেমন ইরান আক্রমন টাইপের কিছু। কিন্তু ব্যাবসায়ী ট্রাম্পকে সে সুযোগ আমেরিকার নাগরিকরা তাদের জীবনের বিনিময়ে কতটুকু দেবে সেটা দেখার বিষয়। তারা কি চাইবে বডি ব্যাগে করে তাদের সন্তানরা দেশে ফিরে যাক?
আমেরিকার প্রতিটা মানুষের জীবন তারা খুব মূল্য দেয় এটা একটা জাতি হিসাবে খুবই ভালো কথা কিন্তু একই সাথে এটাও তাদের মনে রাখতে হবে যাদের সাথে তারা লাগতে যাচ্ছে তাদের জীবনের মূল্য খুব একটা তারা দেয় না, অন্তত পক্ষে ধর্মের নামে তারা অনেকটা ফ্যানাটিক ভাবেই জীবন উৎসর্গ করে। দেখা যাক কি হয়। তবে আগুন যদি লাগে তার কিছু উত্তাপ আমাদের গায়েও এসে যে লাগবে তা নিশ্চিত, তেলের দাম বৃদ্ধি সহ অনেক ধরনের সমস্যাই হবে। সেটা সামনের ব্যাপার। আপাতত ইরান প্রতিশোধের নামে কতখানি অপ্রচলিত যুদ্ধে নামে সেটাই দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৫