somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাশেম সোলাইমানি, মধ্য প্রাচ্য এবং আমেরিকা ক্রাইসিস

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকা কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করছে, কারন সে আমেরিকা বিরোধী বিভিন্ন দেশ কে বিভিন্ন সংগঠন কে একত্র করছিলো। কেন করছিলো? একটু মোটা দাগে কারন ইসরাইল নামক যে দেশটা আছে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য ইরান যেন অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার হিসাবে আবির্ভুত হতে না পারে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর আমেরিকার একটা শ্যেন দৃষ্টি সব সময়ই আছে।

সাদ্দাম হত্যা আর সোলাইমানি হত্যা এক পাল্লায় মাপলে আপনি ভুল করবেন। সাদ্দাম সে সময় একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ (কুয়েত) এক রকম বিনা প্ররোচনায় আক্রমন করছিলো যেভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানী পোল্যান্ড আক্রমন করে। কিন্তু সোলাইমানি হত্যা আর ইরান আক্রমন এক পাল্লায় মাপলে চলবে না। একই সাথে আপনাকে এটাও স্বরন রাখতে হবে ইরাক আক্রমনের প্রেক্ষাপট যখন তৈরী হয় তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন সবে মাত্র ভাঙ্গছে, সারা রাশিয়া তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা, মাফিয়ারা রাশিয়া কন্ট্রোল করছিলো, অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে চীনের কোন পাত্তাই ছিল না। একক পাওয়ার হিসাবে সিনিয়র বুশ যা করে পার পেয়ে গেছে সেই একই খেলা খেলে মাথা মোটা ট্রাম্প পার পাবে একথা ভুলেও ভাবা ঠিক হবে না।

প্রথমতঃ আমেরিকা তাদের চাল চেলে দিয়ে বিজয় বার্তা দেখাচ্ছে। মানে সোলাইমানিকে হত্যা করে তারা তাদের মুভ শুরু করছে। এখন ইরান পালটা চাল হিসাবে কি আমেরিকার কোন জাহাজ টাহাজ বা অন্য কোন স্থাপনা আক্রমন করবে? আমার মনে হয় না এই ধরনের হঠকারী চাল ইরান দেবে। কারন সেক্ষেত্রে আমেরিকা একটা সুযোগ পাবে ইরানের কিছু লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমন চালানো।

দ্বিতীয়তঃ নির্বাচনের আগে এই টাইপের একটা কিছু বড় দরকার ছিল যখন সে অভিশংসনের মুখে। নির্বাচনে জিততে হলে ট্রাম্পকে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলতেই হবে। সে খেলাটা সে শুরু করে দিয়েছে। জাতি হিসাবে আমেরিকানরা এখন পড়তির দিকে, সাধারন আমেরিকানদের জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের দেশের একটা রিকশাওয়ালার সাধারন জ্ঞানের থেকেও কম, তবে প্রশাসন বুদ্ধি বৃত্তিক জায়গাগুলো এখন ধরে রেখেছে মুলতঃ ইহুদী আর অভিবাসিত প্রজন্ম দ্ধারা। ইরাককে সরাসরি আক্রমন করার সময়কার পরিস্থিতি আর ইরান আক্রমন করতে চাওয়ার পরিস্থিতি কিন্তু এক না।



সোলাইমানির স্বার্থকতা ছিল সে ইজরাইলী বিরোধী যুদ্ধটাকে (শ্যাডো ওয়ার) ইজরাইলের সীমানায় হাজির করছিলো। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের মর্যদা এনে দিয়েছেন সোলাইমানির যুদ্ধ কৌশল। অপ্রচলিত যুদ্ধে এই মুহুর্তে বিশ্বে তাকে এক নাম্বার ধরা হয়। যে কাজটা এক সময় সি আই এ করত সেই কাজটাই সোলাইমানি অত্যন্ত সুচতুর ভাবে করে যাচ্ছিলেন। যে ভরসায় ইরাক দখল নিয়েছিল সে বাড়া ভাতেও ছাই দিয়ে দিচ্ছিল সোলাইমানি। শিয়া অধ্যূষিত ইরাকে তার ক্ষমতা অনেকটাই গুছিয়ে আনছিলেন সোলাইমানি, যার প্রতিফলন দেখা যায় ইরাকি পার্লামেন্টে মার্কিন বাহিনীর বহিস্কার। সোলাইমানির কুদস যতটা না সামরিক বাহিনী তার থেকে বেশী ছিল গোয়েন্দা বাহিনী অনেকটা সি আই এ, কে জি বি, মোসাদ টাইপের।

ইরান সরাসরি হামলায় যাবে না, যাবার মত সামরিক সক্ষমতাও নেই। আমেরিকার আছে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ গ্যাজেট, আছে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড, আছে বিমানবাহী রনপোত যার যে কোন কিছু দিয়ে যে কোন দেশ ধ্বংস করে দেয়া যায়, সে তুলনায় ইরান কিছুই না। কিন্তু ইরানের যা আছে তার সাথে আমেরিকার তুলনাই চলে না। তাদের আছে কয়েক হাজার মানব বোমা বা হয়ত তারো বেশী। এদের যে কেউ যে কোন জায়গায় নির্দেশ পেলেই ধর্মের নামে দেশের নামে জীবন উড়িয়ে দিতে প্রস্তত। এতে সব থেকে বড় সমস্যায় পড়বে সাধারন আমেরিকানরা। আমেরিকার বাইরে বিশ্বের যে কোন স্থানে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেল। আর মুলতঃ সেটাই হবে। তবে এ হুমকি মুলতঃ সাদা চামড়ার আমেরিকানদের জন্যই বেশী হবে। এর প্রতিফলন দেখতে পাই কয়েক দিন আগে আমেরিকার ফুটবল টীম কাতারে প্রাকটিস করতে যাওয়া বাতিলের মাধ্যমে।

সন্ত্রাস দমনের নামে সন্ত্রাস করে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারন আমেরিকা। তবে এটাও ঠিক সুবুদ্ধির পরিচায়ক দেয়ার মানসিকতা এখনো অনেক আমেরিকান রাখে, যার কারনে আমেরিকার অধিকাংশ জায়গায় এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গেছে।



আমেরিকার এখন যুদ্ধে জড়ানোর মত অবস্থায় নেই, চীন, রাশিয়া এখন আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখে তারা কোন ব্যাপারে মনে হয়না আমেরিকারে ছাড় দেবে। শিয়া সুন্নী দ্বন্দ্ব নতুন করে মোড় দিয়েছে যখন সুন্নী প্রধান তুরস্কের সাথে ইরান তার সুসম্পর্ক তৈরী করেছে। সিরিয়ায় আমেরিকা লেজে গোবর করে ফেলছে। ইয়েমেনে সৌদী জোট (নামেই জোট আসলে আমেরিকা সমর্থিত সৌদী বাহিনী) মাঝে মাঝেই মার খাচ্ছে বিদ্রোহী শিয়া মিলিশিয়াদের হাতে, ইদানিং তারা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছিলো।

সুলায়মানিকে মেরে ফেলার দিন আমেরিকায় তেলের দাম ৩%, সোনার দাম ৪% বেড়ে যায়, এবং শেয়ার বাজারের ৩০০ পয়েন্ট সুচক পড়ে যায়। আপাততঃ মনে হয়না আর কিছু হবে সরাসরি অন্ততঃ ইরানের তরফ থেকে তবে এটা নিশ্চিত চোরাগুপ্তা আক্রমনের শিকার আমেরিকনরা হবে বিভিন্ন দেশে। যার লক্ষ্যবস্ত হবে সাধারন আমেরিকান এবং আমেরিকান এ্যাম্বেসী। আর ক্ষমতায় টিকে যাবার জন্য ট্রাম্পের দরকার হবে আরো বড় কোন কিছু করা যেমন ইরান আক্রমন টাইপের কিছু। কিন্তু ব্যাবসায়ী ট্রাম্পকে সে সুযোগ আমেরিকার নাগরিকরা তাদের জীবনের বিনিময়ে কতটুকু দেবে সেটা দেখার বিষয়। তারা কি চাইবে বডি ব্যাগে করে তাদের সন্তানরা দেশে ফিরে যাক?

আমেরিকার প্রতিটা মানুষের জীবন তারা খুব মূল্য দেয় এটা একটা জাতি হিসাবে খুবই ভালো কথা কিন্তু একই সাথে এটাও তাদের মনে রাখতে হবে যাদের সাথে তারা লাগতে যাচ্ছে তাদের জীবনের মূল্য খুব একটা তারা দেয় না, অন্তত পক্ষে ধর্মের নামে তারা অনেকটা ফ্যানাটিক ভাবেই জীবন উৎসর্গ করে। দেখা যাক কি হয়। তবে আগুন যদি লাগে তার কিছু উত্তাপ আমাদের গায়েও এসে যে লাগবে তা নিশ্চিত, তেলের দাম বৃদ্ধি সহ অনেক ধরনের সমস্যাই হবে। সেটা সামনের ব্যাপার। আপাতত ইরান প্রতিশোধের নামে কতখানি অপ্রচলিত যুদ্ধে নামে সেটাই দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২৫
৪০টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×