সারা বিশ্বে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। একদিকে করোনার প্রকোপ, অন্য দিকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা। এর পাশাপাশি কিছু কিছু দেশে চলছে যুদ্ধের ধকল। ইয়েমেন তেমন একটি দেশ যারা যুদ্ধের ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ইয়েমেন নিয়ে কিছু লিখা শুরু করছি।
দুই ইয়েমেনের মানচিত্র
১৯৮৮ সালে ইয়েমেন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। দক্ষিণে পিপলস ডেমোক্রেটিক ইয়েমেন এবং এর রাজধানী ছিল এডেন। এটা ছিল মধ্য প্রাচ্যের একমাত্র কম্যুনিস্ট দেশ এবং এখানে একদলীয় শাসন ছিল। কম্যুনিস্ট দেশ হওয়াতে তৎকালীন ইউ এস এস আর এই দেশকে সাহায্য ও সমর্থন করত। এর জনসংখ্যা ছিল ২.৫ মিলিয়ন। এর উত্তরে ছিল আরব রিপাবলিক অব ইয়েমেন, এবং এর রাজধানী সানা। ৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই দেশটা বেশ উন্নত ছিল। ১৯৯০ সালে স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর ইউ এস এস আর ভেঙ্গে যায় তখন পিপলস ডেমোক্রেটিক ইয়েমেন কে সমর্থন করার আর কেউ থাকে না। ১৯৯০ সালে দুই ইয়েমেন এক হওয়ার জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
দুই ইয়েমেন এক হয়ে গেলে তৎকালীন উত্তর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ একীভূত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন, দক্ষিণ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী সালেম আল বিদ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহ একীভূত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে উত্তর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এগারো বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সানা তখন রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।ইয়েমেন একটা মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, যার শতকরা ৬৫ ভাগ সুন্নি মুসলিম এবং ৩৫ ভাগ জাইদি শিয়া মুসলিম।
১৯৯০ সালে ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, ঠিক তখনি দুই ইয়েমেন এক হয়, এক হওয়ার পরেই ইয়েমেন ইরাককে সমর্থন করে, এর ফলে পশ্চিমা বিশ্ব এবং আরব দেশগুলো ইয়েমেন থেকে তাঁদের সমর্থন ও সাহায্য প্রত্যাহার করে নেয়। সেই সময় অনেক ইয়েমেনি সৌদি আরবে কর্মরত ছিল, তারা সেখানে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়, অনেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। দেশের ভেতরকার দুর্নীতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তোলে। দুই ইয়েমেনের এক হওয়ার ফলে যে উন্নতি আশা করা গিয়েছিল তা ক্রমশ জনগনকে হতাশার মাঝে ঠেলে দেয়। উন্নতির কোন আশা না দেখতে পেয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট আলী সালেম আল বিদ পুনরায় দক্ষিণ ইয়েমেন কে আলাদা করার চেষ্টা চালায়, এর ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, কিছু সময় ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে উত্তর ইয়েমেন জিতে যায় এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনসুর হাদি দায়িত্ব গ্রহন করেন।
সানা শহরের দৃশ্য এখন হয়ত এই অবস্থা নেই
১৯৯৭ সালে আল কায়েদা ইন ইয়েমেন সে দেশে জিহাদি আন্দোলন শুরু করে, তারা ইয়েমেনের সরকারী বাহিনী এবং আমেরিকার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আল কায়েদা মুলত সুন্নি মতবালম্বি তাঁদের ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধিতে ২০০৪ সালের দিকে উত্তরের জায়েদি শিয়ারা বিপন্ন বোধ করে এবং তারা আন্দোলন শুরু করে। এরা তাঁদের নেতার নামে নিজেদেরকে হুতি বলে দাবী করে সংগ্রাম শুরু করে। এই দলটি ইহুদি এবং আমেরিকা বিরোধী হিসেবে নিজেদেরকে প্রচার করে।
এডেন বন্দরের দৃশ্য
ছবি নেট থেকে, চলবে .........
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৪৭