ভ্রমন করা আমার শখ। যদিও আমি এতো টা ধনী না, কিন্তু শখের তোলা তো লাখ টাকা বলে একটা কথা আছেনা। পেট না ভরলেও ভ্রমনের শখ থেকেই যায়। আমি সেরকম ই একজন। আমি ভ্রমন ব্লগ লিখি যাতে আরো যারা ভ্রমন করতে ইচ্ছুক তারা কিছু তথ্য ও দিক নির্দেশনা পায়। সেভাবেই ব্লগ লিখি। ভূল হলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। প্রথম পর্বে তেমন ছবি নেই কারন প্রথম পর্ব ভুমিকা পর্ব হওয়ায় তেমন ছবি দেয়ার সুযোগ নেই। ২য় পর্ব থেকে অনেক ছবি থাকবে।
সিঙ্গাপুর ডায়েরি-১
আমি এমন একটা অফিসে চাকরি করি যেখানে ঈদের ছুটি থাকে ১০-১১ দিন। এখন ঈদ তো ৩-৪ দিনের বেশি আর থাকেনা, বাকি ছুটি মোটামুটি শুয়ে বসেই কাটাতে হয়। কিন্তু ছুটি কি এভাবে নষ্ট করতে মন সায় দেয়? আমার অবশ্য দেয়না, তাইতো কতগুলো টাকার শ্রাদ্ধ হয়ে যায় এই ঘুরতে যেয়ে। গতবছর ও এভাবে ছুটি কাটাতে মানালী গিয়েছিলাম, এবারো তার ব্যাতিক্রম হয়নি শুধুমাত্র এতগুলো ছুটি নষ্ট হওয়ার কষ্টে। তবে এবার অবশ্য গিন্নীকে নিয়ে যেতে পারিনি কারন তার অফিস তো আর আমার অফিসের মত দরিয়া দিল না তাই সে ছুটিও পায়নি।
তাই হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু কোথায় যাওয়া যায় সেটা নিয়ে ভাবনায় পরে গেলাম। ভারত তো গেছি বেশ কয়েকবার, আর তাছারা এবার সত্যিকার অর্থে বিদেশ যেতে মন চাইছিল। এদিকে আবার একা একা ট্যুর করতে হবে তাই দেশও দেখে শুনে সিলেক্ট করতে হবে। মালয়েশিয়ার কথা মাথায় এলো, কিন্তু একা একা যাব আর তাছারা ওদের ইমিগ্রেশন এর কিছু ভিতিকর কথা বার্তা শোনার পর বাদ দিয়ে দিলাম লিস্ট থেকে। অনেক চিন্তা ভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিলাম সিংগাপুর যাব। শুনেছি সিংগাপুর অনেক নিরাপদ সোলো ট্রাভেলারদের জন্য।
যেই চিন্তা সেই কাজ। খোজ লাগালাম ভিসা কিভাবে করতে হয়। এক্ষেত্রে আমার ভ্রমনের সব কিছু আমার রিলেটিভ করে দিয়েছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ ট্রাভেল এজেন্ট। তিনি রিজেন্ট এয়ার এ আমার টিকেট করে দিলেন, খরচ পড়ল ২৬৫০০ এর মত। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ না, এতো সহজে আমার ভিসা হয়নি। মূলত সিংগাপুরের ভিসা তাদের অনুমোদিত এজেন্ট দিয়ে করাতে হয়। আমার রিলেটিভ সব কাগজপত্র নিলেন ভিসার জন্য যার মধ্যে পাসপোর্ট, ২ কপি ছবি, ব্যাংক (এটা অবশ্য ম্যান্ডেটরি না), ভিজিটিং কার্ড আর একটা ইনভাইটেশন লাগে সিংগাপুর লোকাল কারোর যেটা ট্রাভেল এজেন্সি ম্যানেজ করে দেবে। খরচ পরল ৪৫০০ টাকা। কিন্তু ঘটনা তো শেষ হয়নি, মানে প্রথমবার আমার ভিসা দিলনা। কেনো দেয়নি এর কোনো কারন জানালো না এম্বেসি, তবে আমার রিলেটিভ বললেন আমি যুবক এবং একা হওয়ার কারনে ভিসাটা হয়নি। আসলে সিংগাপুরে অনেক বাংলাদেশী শ্রমিক ভাইয়েরা রয়েছে। আর আমাদের দেশের মানুষ তো ট্যুরিস্ট ভিসায় যেয়ে কাজ করতে অভ্যাস্ত, তাই ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই
আমার রিলেটিভের পরামর্শে ২য় বার আবেদন করলাম। এবার সাথে দিলাম অফিস এন ও সি, আইডি কার্ডের কপি, এডুকেশন সার্টিফিকেট, এয়ার টিকেট। যদিও এগুলোর কোনো দরকার নেই, এর পরেও যেহেতু একবার রিজেক্ট করেছে, তাই দেয়া। যাই হোক, ২য় বারে ভিসা পেলাম তবে সিংগেল এন্ট্রি। সবাই ডাবল এন্ট্রি পায়, আমি পেলাম সিংগেল। ব্যাটারা আমাকে এখনো ভরসা করতে পারলো না । যাই হোক, আমি তো শুধু সিংগাপুর ই যাবো তাই আর মন খারাপ করলাম না। এদিকে ২য় বার ভিসা দিতে দেরি হওয়ায় আমার টিকেট এর তারিখ পরিবর্তন করতে হল এবং তাতে আরো বেশ কিছু টাকা বের হয়ে গেল
যাই হোক অবশেষে ভিসা পেয়েছি এতেই খুশি। এখন হোটেল বুকিং টা করে ফেলতে হবে। আমার ভিসা হাতে পেয়েছি যেদিন, ঠিক তার পরের দিন ফ্লাইট। তাই তড়িঘড়ি করে আমার ইন্টারন্যাশনাল কার্ডে ডলার রিচার্জ করলাম। এটা অবশ্য আমার গিন্নি করে দিয়েছে কারন সে যে ব্যাংকে চাকুরি করে, আমার কার্ড সেই ব্যাংকের ই। আমি কোথাও যাওয়ার আগে অনেক ইন্টারনেট রিসার্চ করি যা আমাকে সাহাজ্য করে। এবারো তার ব্যাতিক্রম হয়নি। ফেসবুকের গ্রুপগুলো থেকে শুরু করে TripAdvisor কোনোটাই বাদ রাখিনি। দেখেছি কোথায় কিভাবে যাওয়া যায়, কোথায় হোটেল নিলে যাতায়াতের সুবিধা হবে, কোন লোকেশন কতদুরে এবং কোন বাহনে সেখানে গেলে সহজ হবে এসব। হোটেল বুকিং ট্রাভেল এজেন্ট থেকেই করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট গুলা এক্ষেত্রে এক প্রকার ডাকাত। তারা খুব সহজ জিনিসটাকে অনেক কঠিন করে রেখেছে তাদের ব্যাবসার সার্থে। আমি জানি সিঙ্গাপুরে হোটেল সস্তা না, কিন্তু ট্রাভেল এজেন্ট দের দেয়া রেটের মত এতটা এক্সপেন্সিভ ও না। আমার কাছে ৩ রাতের জন্য একটা বাজেট হোটেলে ১০০০০ টাকা পার নাইট চেয়েছিল, মানে ৩ রাতে ৩০০০০ ! ভাবতে পারেন? আমরা যাতে নিজেরা হোটেল বুকিং না করতে পারি তাই তারা এই ভয় ছড়িয়ে রেখেছে যে আমাদের কোনো ইন্টারন্যাশনাল কার্ড সিঙ্গাপুরে এক্সেপ্ট করেনা যা সম্পূর্ন ভুয়া একটা কথা। আমি একটা ব্যাংকের প্রিপেইড কার্ড দিয়ে Agoda থেকে অনেক দেখে শুনে একটা হোটেল বুক দিলাম নাম Marrison @Desker। সাথে সাথেই টাকা কেটে নিল এবং কনফার্মেশন রিসিপ্ট মেইল এ দিয়ে দিল। খরচ পড়ল ৩ রাতের জন্য ১৮২ ইউএসডি মানে ১৫৭০০ এর মত (৮৪.৫০ টাকা রেট ধরে)। ব্যাটারা ৩০০০০ টাকা চেয়েছিল কি পরিমান ডাকাত ! এটা লিটল ইন্ডিয়া এলাকার মুস্তফা সেন্টারের সামনেই। সিংগাপুরে আমাদের বাঙ্গালী সবাই নাকি এই লিটল ইন্ডিয়া এলাকায় ই থাকে।
দেখতে দেখতে যাওয়ার দিন এসে গেল। ফ্লাইট সকাল সারে ১১ টায়, রিপোর্টিং সারে ৯ টায়। আমি আর আমার গিন্নী বের হয়ে গেলাম। তাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে আমি এয়ারপোর্টে চললাম। সারে ৮ টায় এয়ারপোর্টে পৌছে লাগেজ স্ক্যান করে বোর্ডিং নিয়ে নিলাম। ইমিগ্রেশনে আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলো না, সিল দিয়ে ছেরে দিল।
এখন অপেক্ষার পালা। বসে বসে বোর না হয়ে ডিউটি ফ্রি শপে ঘোরাফেরা করতে লাগলাম। আমি আগেও অনেক দেখেছি এই শপ গুলা, তেমন কিছু পছন্দ হয়না। কিছুক্ষন বসে ওয়ার্ল্ডকাপ এর খেলা গুলো রিপ্লে দেখছিলাম হঠাৎ পায়ের কাছে সুড়সুরি অনুভব করলাম ! কি ব্যাপার? আৎকে উঠে দেখি একজন বিশিষ্ট বিড়াল মহোদয় আমার পায়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছেন। যাব্বাবা এয়ারপোর্টে বিড়াল ! তখন আমার হুশ ফিরলো আমিতো ঢাকা এয়ারপোর্টে ।
১১.৪৫ এ রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তার যাত্রা শুরু করলো সিঙ্গাপুরের উদ্যেশ্যে। তবে প্লেনের ভেতরে এক অমানবিক ও ভয়ানক অবস্থার ভেতরে পড়লাম। প্লেন টেক অফের পড়ে বিমান বালারা খাবার পরিবেশন শুরু করলো। খাবার ভালই ছিল।
পেটপুরে খেয়ে দেয়ে একটু চোখ লাগিয়েছি কি আমার নাকে আমাদের অতি পরিচিত এক সুগন্ধ এসে ঢুকলো । আশা করি আপ্নারা বুঝে নেবেন কিসের গন্ধ । কি অমানবিক, আমি কিজে করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না, একবার এদিকে ফিরি, একবার ওদিকে কোনোভাবেই কিছু করতে পারছিলাম না। এদিকে প্লেন থেকে তো আর বের হওয়া সম্ভব নয় তাই শেষ মেশ টয়লেট না ধরা সত্বেও ওদিকে গেলাম এই ভয়ানক অবস্থা থেকে পরিত্রান পাবার জন্য । আসলে রিজেন্ট এ দেখি আমাদের অনেক শ্রমিক ভাইয়েরা যায়, আমার পাশেও ২ জন ভাই বসেছিলেন। ঘটনাটা মনে হচ্ছে তারাই ঘটিয়েছিল। আমি মনে করি আমাদের এই ভাইদের কিছুটা এটিকেটস শিখিয়ে সরকারের বিদেশে পাঠানো উচিত। এতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে
রাসায়নিক হামলার পর এয়ার হোস্টেস যখন পরিবেশ সুগন্ধ করার স্প্রে দিল তখন সিটে গিয়ে বসলাম। প্লেন চলছে, আর আমি নিচে তাকিয়ে দেখছি কত সুন্দর এই দুনিয়া,.........
চলবে......
২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৫১