
প্রধান উপদেষ্টাকে ৬ আন্তর্জাতিক সংগঠনের চিঠি
“গুম–খুনের বিচার, র্যাব বিলুপ্তি, আ.লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান”
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এক যুগান্তকারী যৌথ চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে মানবাধিকার রক্ষা, নিরাপত্তা খাতের সংস্কার, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠিটি প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW)।
সহ-স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলো হলো—
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ), সিভিকাস, ফোরটিফাই রাইটস, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
প্রেক্ষাপট
জুলাই বিপ্লব ও শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, সেটিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
সংস্থাগুলোর মতে, সংস্কারের সূচনা হলেও “নিরাপত্তা খাত এখনো অরক্ষিত এবং জবাবদিহির বাইরে”।
চিঠির মূল বক্তব্য ও দাবি
১️⃣ গুম–খুন ও নিপীড়নের বিচার
*** বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন–এর বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান।
*** র্যাব ও ডিজিএফআই–এর সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের দাবি।
*** বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার প্রস্তাব।
২️⃣ নিরাপত্তা বাহিনী সংস্কার
***. র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্ত করা ও সেনাসদস্যদের বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে প্রত্যাহার।
*** ডিজিএফআইয়ের ক্ষমতা সীমিত করে কেবল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে নির্ধারণের সুপারিশ।
৩️⃣ গুমবিরোধী আইন ও তদন্ত কমিশন
***“গুম”–কে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ও গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান।
***“এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স প্রিভেনশন অর্ডিন্যান্স”–এ মৃত্যুদণ্ড বাদ দেওয়ার সুপারিশ।
৪️⃣ মানবাধিকার কমিশন সংস্কার
***জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (NHRC) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়ার দাবি।
৫️⃣ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
*** সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫, বিশেষ ক্ষমতা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট—এসব আইন আন্তর্জাতিক মানে বাতিল বা সংশোধনের আহ্বান।
***. সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি, গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি।
৬️⃣ রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও আ.লীগ নিষেধাজ্ঞা
***. আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার আহ্বান।
সংস্থাগুলোর মতে, “এই নিষেধাজ্ঞা বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।”
৭️⃣ নাগরিক সমাজ ও এনজিও খাত
***. এনজিও ব্যুরোর সংস্কার ও বিদেশি তহবিলে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার আহ্বান।
নাগরিক সমাজের স্বাধীন কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করার দাবি।
৮️⃣ রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বন্ধ, এবং তাদের চলাফেরা, জীবিকা ও শিক্ষায় স্বাধীনতা বাড়ানোর সুপারিশ।
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি “প্রত্যাবাসনের জন্য অনিরাপদ” বলে উল্লেখ।
৯️⃣ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
***. আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (ICC)–এর তদন্তে বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
উপসংহার
চিঠির সারবস্তুতে একটি বিষয় পরিষ্কার—
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে “একটি ঐতিহাসিক সুযোগ” হিসেবে দেখছে:

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


