somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোভানিয়েমির রাস্তায়

০৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বন্ধু "Rahi"র সাথে যখন কথাবার্তা হয়, ওর পছন্দের বিষয় সাধারণত থাকে মানুষ। কিন্তু আমি তো ন্যাচারাল অন্ধ। মানুষ দেখিনা। আমি দেখি মানুষ ছাড়া আর সবকিছু। কিন্তু একবার আমিও কিন্তু মানুষ দেখেছিলাম।

বেলা আড়াইটা। তখন প্রায় সন্ধ্যা। বাস নামিয়ে দিয়ে গেছে রোভানিয়েমি শহরে। সময় ছয় ঘন্টা । তারপর বাস আসবে।আমি কিছুক্ষণ দার্শনিক টাইপ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম নদীর পাড়ে। তারপর ভাবলাম, ব্রীজটা সুন্দর লাগছে। না গেলে নিজের কাছে নিজেকে পাপী মনে হবে। হাঁটা শুরু করলাম।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নদীর তীরে বাঁধানো রাস্তা ধরে হাঁটছি। নদীর অর্ধেক বরফে ঢাকা আর অর্ধেক বরফহীন। বাবা মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটছে , খেলছে। ভাই বোনেরা খুনসুটি করছে, বরফের উপর উলটে পালটে আছাড় খাচ্ছে। খুব বুড়োবুড়িরা কুকুর নিয়ে বের হচ্ছে। পরে মনে হলো, আচ্ছা, আমাদের দেশের শহরগুলোতে এরকম কিছু দেখেছি? হয়তো দেখেছি কিন্তু মনে নেই। যা মনে আছে তা হলো, বাবা মা সন্তানকে পেটাচ্ছে, বলছে "পড়, পড়, না পড়লে রেজাল্ট হবে না, চাকরি পাবি না, বুয়েট যাইতে হবে, মেডিকেল যাইতে হবে" সন্তানও শিখছে কিভাবে বই টানা কুলি হতে হয়। আর যারা বইটানা কুলি না, তাদেরকেও একটা সুস্থ সময় কাটাতে দেখেছি বলে মনে পড়ছিলো না। হয়তো দেখেছি, কিন্তু মনে পড়ছিলো না।

ব্রীজে উঠলাম। মুগদা খালের ওপরকার ব্রীজ না। বড়সড় ব্রীজ । তখন জোরেসোরে বাতাস বইছে আর তুষারও পড়ছে। আমি নাক মুখ ঢেকে কূল পাচ্ছি না। আসলে খুব ঠাণ্ডা থাকলেও আমি যে ঠাণ্ডার ভয়ে এসব করছিলাম , তা না। বড়সড় একটা ঠাণ্ডা বাধালে পরিবারপরিজনসহ আখেনের বড় ভাই ব্রাদারদের কাছেও যে গালি খাবো, তা আমার কাছে ঐ হিমাঙ্কের কাছাকাছি ঠান্ডার তীব্র বাতাসের মধ্যে তুষারপাতের চেয়েও বিপজ্জনক ঠেকলো। আল্লাহ আল্লাহ করছি, শীত লাগুক, যাতে ঠাণ্ডা না লাগে। আমার পাশঘেঁষে দিয়েকিছু সাইকেল চলে গেলো। কিছু মানুষও দেখলাম ওপাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। আমার চিরচেনা সেই অফিসফেরত বাসাগামী মানুষের ঝাঁক। আহা, ঢাকার স্বাদ যেন নতুনরূপে পেলাম। সবাই পদব্রজে চল চল চল মার্চ করছে যেন......... আসলেই, সন্ধ্যার অফিসফেরত জনতা যে আমাদের সংস্কৃতির একটা অংশের মতন হয়ে গেছে , সেদিন ভালোভাবে উপলব্ধি করলাম।



কোলন শহর থেকে দিনে, রাতে, ভোরে, মধ্যরাতে হেন সময় নেই যখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করিনি নি। সপ্তাহের নানা দিনে সময়ে সময়ে ট্রেন ধরেছি। তখনো অফিসফেরত জনতা দেখেছি। কিন্তু তখন দেখেছি ট্রেনভর্তি জনতা। টেলিভিশন টেলিভিশন লাগে। ঢাকার কথা মনে পড়েনি। পায়ে হাঁটা জনতা যখন চোখে পড়লো রোভানিয়েমিতে, তখনই সেটা মনে দাগ কাটলো। অফিসফেরত জনতা সারা পৃথিবীতেই বিদ্যমান, কেমন যেন একটা ব্রাদারহুড ব্রাদারহুড ফীল আসে...... (যদিও আমি এখন বেকার, আর যখন অফিস গেছিও তখনও তো অনেকটা ভাই ব্রাদাররা মিলে পিকনিকের মতনই অফিস করেছি :D )

বাতাস, তুষার পড়ছে, এরমধ্যে দু আড়াইঘন্টা ঘুরে আমি ভাবছি, খ্যামা দেয়া দরকার। সারাদিন পেট খালি। বিদেশবিভূঁইয়ে ঘোরাফেরার সময় ম্যাকডোনাল্ডস, বার্গার কিং দেখলে মুগদা বড় মসজিদের মায়ের দোয়া কাবাব ঘরের মতন আপন আপন লাগে একটা জ্যামাইকান ভেজি বার্গার নিয়ে আধা ঘন্টার উপরে কাটালাম ভেতরে। খাওয়া শেষ। তারপরে আরও ১৫-২০ মিনিট। কিন্তু আর কত বসে থাকা যায়? শরম করে না? ঘুষ খাক, দুর্নীতি করুক,কিন্তু এইসব কাজে কি আমাদের বাঙ্গালিদের চক্ষুলজ্জাটা একটু বেশি? নাকি আমি একলাই লাজুক লতা? বসে থাকতে থাকতে দেখলাম যৌবনের মেলা। ঝাঁকে ঝাঁকে যুবক যুবতীরা ঢুকছে, খাওয়া দাওয়া করছে আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি বের হয়ে রাস্তাঘাটে তেমন কিছুই দেখলাম না। এ কি ভোজবাজিরে বাবা?? এই ম্যাকডোনাল্ডসের সাথে কি কামরূপ-কামাখ্যার কোন পোর্টাল আছে নাকি? এত মানুষ আসছে, যাচ্ছে, রাস্তায় মানুষ নাই কেন?

আর আছে শপিংমল। ভেতরে কি গরম.........আহা...... শপিং মল দেখে কখনো এতো ভালো লাগবে ভাবি নাই। ভেতরে গিয়ে দেখি আমার ট্যূর গ্রুপের আরও ডজন খানেক মানুষ জন ভেতরে। না না, কেউ শপিং করছে না, সবাই ভেতরে বসে হীটার পোহাচ্ছে। আর ফ্রী তে প্রাকৃতিক কর্ম সারছে। ক্রিসমাসের সময়, ভেবেছিলাম মানুষে বোজাহি থাকবে সব। কিসের কি? আমাদের বসুন্ধরাতে সারা বছর এর চেয়ে দশগুণ বেশি মানুষ থাকে। আর এরা?? এরা তখন পরিবারের সাথে সময় কাটায়।

আচ্ছা, আমরা যে পশ্চিমা বিশ্বকে এতো গাল দেই, কিভাবে ১৭ বছর বয়সে বের হয়ে যায়, আর কোন খোঁজ খবর থাকে না, আমরা বাবা মায়ের সাথে সারাটা জীবন থেকেই বা কি করছি? ছোটবেলায় স্যারের বাসা, যৌবনে আড্ডাবাজি, অতঃপর অফিস অফিস অফিস......... ততদিনে অনেকেরই বাবা মা থাকেন না। আর বাচ্চা কাচ্চা হলেও "বাচ্চা কাচ্চারা স্যারের বাসার টাইলসের সংখ্যা নিজের বাসার ফ্যানের সুইচের চেয়ে বেশি জানে" -অবস্থা। উন্নত জীবন চাই। কিন্তু এইতাই কি জীবন?? খালি দৌড়ানো?

সেদিন কিন্তু আমি মানুষ দেখেছিলাম।

বিঃদ্রঃ ১। ব্রীজটার নাম The Jätkänkynttilä Bridge/ The Candle Bridge/Lumberjack's Candle Bridge

২. এটা অনেক অনেক দিন আগের কথা। সেই রেভল্যুশনের সময়কার...... তা প্রায় ৩ মাস তো হবেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:৪৯
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের টাকা দিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো কি জুয়া খেলে?

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫



ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক দেশের পাঁচ পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের আজ বেহাল দশা, তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। সবগুলো ব্যাংকই এখন দেউলিয়ার পথে, বাধ্য হয়ে সরকার এই পাঁচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বি ডি আর বিদ্রোহ ও পিলখান হত্যাকান্ডের কিছু অপ্রাকাশিত সত্যঃ (পর্ব ০২)

লিখেছেন মেহেদী আনোয়ার, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চব্বিশ ঘন্টা' বিস্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×