জোস্না আমাদের পাশের গ্রামের একটি বড় বাড়ীর আদুরে কিশোরী ছিলো; সে সব সময় হাসিখুশী থাকতো, নম্রতা ও স্নিগ্ধ সৌন্দয্যের জন্য সবাই তাকে বেশ আদর করতো।
আমাদের উত্তর পাশের গ্রামের ১টি বাড়ীর নাম ছিলো, বড় বাড়ী; শুধুমাত্র বাড়ীর আয়তন ও লোক সংখ্যার কারণে বাড়ীটিকে বড় বাড়ী বলা হতো; লোকজন আসলে মোটামুটি বেশ দরিদ্রই ছিলো। ওরা অন্যদের চেয়ে একটা দিক থেকে আলাদা ছিলো, বাড়ীর লোকজন বেশ সুন্দর ছিলো, দরিদ্র হলেও পরিপাটী থাকার চেষ্টা করতো; বিয়ে শাদীটা তারা নিজেদের মাঝে সেরে ফেলতো; ওদের মেয়েগুলো দেখার মতো সুন্দরী ছিলো; গ্রামের লোকজনের সাথে ওদের মেলামিশাও কম ছিলো; ওরা গ্রামে তেমন কাককর্মও করতো না, পাহাড় থেকে বাঁশ, বেত, কাঠ এনে বিক্রয় করতো। সেই বাড়ীর মেয়েদের মাঝে শুধু জোস্নাকে ছোটকাল থেকে গ্রামের অন্যদের বাড়ীতে যেতে দেখে আসছি।
আমি ৮ম/৯ম শ্রেনীতে পড়ার সময় জোস্না সপ্তাহে ২/১ বার আমাদের বাড়ীতে আসতো; আমার বড়বোন আদর করে নারিকেল তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিতো, চা খেতে দিতো। আমি কাছারীতে থাকলে, আসা যাওয়ার সময় ১মিনিটের জন্য জোস্না কাছারী ঢুকতো। আমাকে পড়ার টেবিলে দেখলে আমাকে বলতো,
-তুই বইতে কি দেখিস সারাক্ষণ, আমি এসেছি দেখছিস না? তুই স্কুলের মেয়েদের সাথে অকারণ বকবক করিস, আমার সাথে কথা বলিস না কেন?
সে বাতাসের মতো আসতো, বাতাসের মতো চলে যেতো। আমার বড় বোন একদিন বলেছিলেন,
-জোস্নার সাথে তেমন কিছু বলিস না; ওর মনটা অনেক বড়, শেষে একদিন মনে কষ্ট পেতে পারে।
জোস্না আমার চেয়ে ২/১ বছরের বড় ছিলো। দিন দিন সে আরো সুন্দরী হয়ে উঠছিলো। আমি শহুরে কলেজে ভর্তি হলাম, বাড়ী এলে খামারে থাকতাম, জোস্নার সাথে তেমন দেখা হতো না। সেবার শুকনোর দিনে ছুটিতে বাড়ী এলাম; এক দুপুরে কাগজ কেনার জন্য উত্তর দিকের বাজারে যাচ্ছিলাম জোস্নাদের বাড়ীর পাশ দিয়ে; দেখি জোস্না ছুটে আসছে, সে যেভাবে আসছে, আমার মোটামুটি ভয়ই লাগছিলো, লোকজন কি ভাববে। কাছে এসে বললো,
তুই কোথায় যাচ্ছিস?
-কাগজ কিনতে দোকানে যাচ্ছি!
-কাগজ বাদ দেয়, আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে মিষ্ট খেতে; তোর কাছে পয়সা আছে?
-আছে!
-যা মিষ্টি নিয়ে আয়, এখানে ফিরে আছিস, বাজারে আড্ডা দিস না, আমি বাড়ী থেকে খেয়াল রাখবো।
আমি পুরো পয়সা দিয়ে মিষ্টি কিনে আনলাম; বাড়ীর পাশে আসতেই সে বেরিয়ে এলো, সাথে তার ৬/৭ বছরের খালাতো বোন। সে বললো,
-চল, বাড়ী চল।
-তোর মাথা খারাপ, তোদের বাড়ীর লোকজন কি ভাববে?
-তুই ভয়ে আছিস, ঠিক আছে, এখানে বস, চল মিষ্টি খাই। এটি আমার খালাতো বোন; দেখছিস কি সুন্দরী হবে, ওকে মিষ্টি খাওয়ায়ে দেয়, সে তোর হবে; ওকে স্কুলে দেবো, তোর মতো পড়ালেখা করবে। আমার কপালে তো পড়ালেখা ছিলো না।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৫৯