somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুড়ি এবং সুতা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুড়ি এবং সুতা
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
বসন্তকাল, ধান কাটা শেষ। পাড়ার বন্ধু-বান্ধব সবাই খোলা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। আব্বাকে বললাম, আব্বা আমারে একটা ঘুড়ি বানায়ে দাও না।
উত্তরে আব্বা বললেন, কয়েকদিন দেরি কর বাপ। বাঁশ কাইটা তোরে ভালো একখান ঘুড়ি বানায়ে দেবো।

এদিকে আমার আর তর সইছে না। রাতে ঘুমানোর সময়, সকালে ঘুম থেকে উঠে, দুুপুরে খেতে বসে, সবসময় আব্বাকে জ্বালাতন করি। আব্বা বরাবরের মতোই বলেন, কয়েকদিন দেরি কর।

সন্ধ্যায় সাগর এসে বললো, রাব্বি আমার ঘুড়িডা কাইটা গেছেরে।
আমি বললাম, ক্যামনে কাটলো? কার সাথে কাটাকাটি করছিস?
সে বললো, কারো সাথেই কাটাকাটি করিনি। হঠাৎ কইরা বাধনের ঘুড়ির সুতার সাথে আমার ঘুড়ির সুতার প্যাঁচ লাইগা যায়। তারপর ছাড়াইতে যাইয়া ঘুড়িডা অনেকদূর চইলা গেছে।
আমি বললাম, তাইলে এহন কী করবি?
সে সিক্ত কণ্ঠে বললো, কী আর করবো? দেহি আরেকটা কিইনা আনি। কাইলকে আবার উড়াইবো।
.
তিন দিন চলে গেলো। অথচ আব্বার ঘুড়ি বানানোর কোনো নামগন্ধও দেখছি না। সবাই মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছে আর আমি মাঠের পাশে থাকা আমাদের পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছি। মাঝে মাঝে ভাবছি, ইশ! আব্বা যদি একটু তাড়াতাড়ি বানায়ে দেয়। তাইলে আমিও ওদের সাথে উড়াইতে পারবো।

হঠাৎই আম্মুর ডাক শুনতে পেয়ে পুকুর পার থেকে উঠে বাড়ির মধ্যে গেলাম। দেখলাম, আব্বা বাঁশ কেটে এনেছেন। আমাকে দেখে বললেন, বাপ তুই দোকানে যাইয়া কটের সুতা কিইনা আনবি। ততক্ষণে আমি সবকিছু রেডি কইরা রাহি।
আমি প্রলোভিত কণ্ঠে বললাম, আজকেই হইয়া যাইবে?
আব্বা আমার হাতে টাকা দিয়ে বললেন, আগে সুতা কিইনা আন, যা।

আমি টাকা নিয়ে দৌঁড় দিলাম দোকানের দিকে। বাড়ির পাশেই মামাদের বাড়ি। মেজো মামা পথের ধারে দাঁড়িয়ে কী যেন করছিলেন। আমাকে দৌঁড়াতে দেখে তিনি বললেন, কই যাইস? আস্তে আস্তে দৌঁড় দে। না হলে পইড়া যাবি।
আমি দোঁড়াতে দৌঁড়াতেই বললাম, পড়বো না..... সুতা কিনতে যাই।

দোকান থেকে সুতা কিনে এনে আব্বাকে বললাম, আজকের মদ্যি হবি তো?
আব্বা বললেন, কাল বিকালে উড়াবি তুই।
মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। আবার কাল! অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
.
সকালে ঘুম ভাঙলো আম্মুর ডাকে। তিনি বললেন, ওঠ ওঠ। উইঠা খাইয়া নে।
আমি বললাম, আইজ এত সকাল সকাল রান্না শেষ?
আম্মু হেসে বললেন, উইঠা দেখ বেলা কত হইছে।

আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দেখি বেলা দশটা বাজে। প্রাতরাশ শেষে আব্বা বললেন, তোর ঘুড়ি বানানো শেষ। এহন উড়াইতে পারিস।
আমি বললাম, কই? কই আমার ঘুড়ি?
তিনি বললেন, দ্যাখ বাইরে রাখছি।

আমি এক প্রকার দৌঁড় দিয়েই বাইরে গেলাম। দেখলাম, আব্বা চিলের মতো একটা ঘুড়ি বানিয়েছেন। আমি ফিরে এসে আব্বাকে বললাম, এটা আবার কি ঘুড়ি?
তিনি বললেন, এটা ঢাউস। যহন আহাশে উড়বে, তহন চিলের ল্যাহান দেহা যাইবে।

আমি ঘুড়ি নিয়ে ছুটলাম মাঠের দিকে। পাড়ার বন্ধুরা দুপুরে উড়াতে আসবে। ততক্ষণ একা একা উড়ানো যাবে। তারা চলে এলে আবার ঘুড়ির সুতা কেটে গেলে তখন সমস্যা হবে। আব্বা এতো কষ্ট করে বানিয়ে দিয়েছেন, কেটে গেলে তো সব যাবে। পরক্ষণেই মনে হলো, আরে এটা তো কটের সুতা। এই সুতা তো হাত দিয়েই টেনে ছেঁড়া যায় না।

নির্ভয়ে ঘুড়ি উড়াতে লাগলাম।

বিকেলে বাড়ি ফিরে আব্বাকে বললাম, আব্বা সবার তো অন্যরহম সুতা। আমারডা এইরহম ক্যা?
আব্বা বললেন, এই সুতা কহনো ছিঁড়বে না। এই সুতা একটা সম্পর্কের ল্যাহান। একটা সম্পর্ক যেইরহম মজবুত। ঠিক সেইরহম এই সুতাটাও। তয় হ্যাঁ, সম্পর্কে যেইরহম ভাঙন আছে। ঠিক সেইরহম এই সুতারও ভাঙন আছে।
আমি বললাম, মানে?
আব্বা বললেন, একটা সম্পর্কে যহন এ্যাকে অন্যের প্রতি আসক্তি কইমা যায়, তহন সেই সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ঠিক একইভাবে এই ঘুড়ি যদি কোনোকালে অবহেলায় গড়াগড়ি খায়। তহন ঘুড়ির সুতাটা পঁইচা যাইবে।

আমি অবাক হয়ে আব্বার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আমার তাকিয়ে থাকা দেখে বললেন, তুই ভাবছিস তাইলে এই সুতা আর ঘুড়ি ঠিক রাহার উপায় কী?
আমি "হ্যাঁ" সূচক মাথা নাড়লাম। অতঃপর আব্বা বললেন, এর উপায় হইতাছে "এই ঘুড়িটার সাথে থাহা তোর সম্পর্ক।"
আমি বললাম, মানে?
তিনি বললেন, যদ্দিন তুই ঘুড়িটা উড়াইবি। তদ্দিন এটা ঠিক থাকবে।
.
০৭/০১/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×