দুই পিস বই (নগদ টাকায় কেনা), তিন পিস মালবরো সিগারেট আর একটা ভাঙা দিয়াশলাই নিয়া অবশেষে ধরা খাইলাম পুলিশের হাতে।
রাত সাড়ে এগারটা। হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। ল্যাবএইড মোড়ে পুলিশের ভ্রাম্যমান চেকপোষ্টের সামনে পড়লাম। দেশ ও জাতির সেবায় নিবেদিত প্রান একজন মহান পুলিশ সদস্য আমার গতিরোধ করে সামনে দাঁড়ালেন। থানার হাবিলদার টাইপ কেউ হবেন। শরীর স্বাস্থ্য মাশআল্লাহ ব্যাপক। চোখে মুখে সন্দেহের চাপ। বললেন, এতো রাইতে কই যান? আমি কইলাম, বাসায় যাই।
বাসা কই?
-এইতো, সামনে।
হাতে কি?
-বই।
পকেট ফুলা ফুলা লাগতাছে, পকেটে কি?
-সিগারেটের প্যাকেট আর দিয়াশলাই।
দেখি, বাইর করেন......
আমি পকেট থেকে সিগারেট আর দিয়াশলাই বাইর কইরা দিলাম। হাবিলদার সাহেব সন্দেহজনক দৃষ্টিতে খুটিয়ে খুটিয়ে সিগারেটের প্যাকেট দেখলেন, নাকের কাছে নিয়া গন্ধ শুকলেন, ম্যাচ দেখলেন। তারপর বই দুটি হাতে নিয়া পাতা উল্টাইয়া দেখলেন। তিনি মনে হয় আশানুরুপ কিছু পান নাই (বেচারার চোখে মূখে হতাশার চাপ)। বললেন, কিসের বই এগুলা? আমি কইলাম, কাভার পেজে নাম লেখা আছে। (জওহরলাল নেহেরুর লেখা “পৃথিবীর ইতিহাস” অন্যটি বাট্রান্ড রাসেলের “রোডস টু ফ্রিডম”)
হাবিলদার সাহেব বই দুইটা আবার উল্টাইয়া পাল্টায়া দেখলেন। কি যেনো ভাবলেন। তারপর আবার ইন্টারভিউ,
এতো রাইতে বাইরে ঘুরেন কেন?
-ঘুরতাছি না, বাসায় যাচ্ছি।
এতক্ষন কই ছিলেন, কই থিকা আইসলেন?
-শাহাবাগ থেকে।
সেখানে কি?
-আড্ডা দিছি।
এতো রাইত পর্যন্ত আড্ডা দেয়া কি ঠিক! এখন রাস্তাঘাট ফাঁকা, যদি কোন অকারেন্স হয়?
-আপনারা আছেন বলেই তো সাহস পাই (এইটা ১০০% পাম)। আমাদের নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে ডিউটি করতাছেন। কতো কষ্ট আপনাদের।
মুখে মৃদু হাসি দিয়ে- এইডাই আমাদের ডিউটি। কষ্ট তো হৈবৈ। বেশি রাইত বাইরে থাইকেন না। সময় ভালো না। যান বাসায় যান।
আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে- আচ্ছা, ঠিক আছে। বেশি রাত থাকবো না। যাই, আসসালামুয়ালাইকুম।