রেললাইন বয়ে যায়।ভোরের প্রার্থনার বিপুল শক্তি।অন্ধকারকে আলো দিতে দিতে সকাল এগোয়! এমন সকাল এলেই ঝুমতলি যেতে ইচ্ছে করে! কুয়াশাঘেরা এক স্টেশনের রেললাইন ধরে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে। কালো রং শাড়িতে কুঁচ ফলের সমাহার! ও হেঁটে যাচ্ছে !
কখন যে ওর পাশে হাঁটতে শুরু করেছি! ও গুনগুন করে গাইছে,”যেতে যেতে, ওগো প্রিয়, কিছু ফেলে রেখে দিয়ো
ধরা দিতে যদি নাই রুচে…..”
গানটার শেষ দুটো লাইন ও বারবার ঘুরেফিরে গাইছিল আর আমি শুরুটা শুনবো বলে তখন কান পেতে আছি!
ও বুঝতে পারে, ও আমার দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারে আমি ওর পাশেই আছি! ও গলাটা একটু উঁচু করে গাইতে শুরু করে, “কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন দিয়ে যাও, শেষে দাও মুছে।
ওহে চঞ্চল, বেলা না যেতে খেলা কেন তব যায় ঘুচে॥”
আমি মুগ্ধ হয়ে যাই! ওকে ভীষন জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে।
দূরথেকে সিগন্যালে আ্টকে পড়া ট্রেনের ইঞ্জিনের আলো দেখি। কুয়াশা ভেদ করে আসতে থাকে পু ঝিকঝিক করে,
আমি ওর হাত ধরে হলুদ সরিষা ক্ষেতের আইল ধরে এগোই। ও হলো আমার স্বপ্নের অপরুপা! কতবার কত জায়গায় ওর সাথে দেখা হয় আমার!
মহাসড়কের পাশেই বাস স্টপেজ টা।দূরের এক শহরের বাসযাত্রায় আজ ওকে সংগে নেই। পাশে বসেই খুশিতে কলকল করতে থাকে ও। অনর্গল ফরাসি ভাষায় কথা বলে! আমার অবাক হওয়াকে অবাক করে দিয়ে একটা কবিতা বলতে থাকে!
আমি বুঝতে পারি এটা অন্য কারো লেখা নয়!
এটা এই মূহূর্তের একদম ফেনা ওঠা কফির মত সতেজ কবিতা!
ও ওর ঝোলানো ব্যাগের ছোট্ট ফ্লাস্ক থেকে কফি বের করে আমাকে দেয়। মুখের মাস্ক সরাতেই আমি ওর দিকে মুগ্ধ তাকাতেই ও হেসে গলে পড়ে। ও হাসলে ওর মুখ, ওর চোখ ওর কোঁকড়া চুল, সব হাসে!
ইশারাতে ও কফির গ্লাসে চুমুক দিতে বলে!
আজ এখানে তাপমাত্রা এক! মেঘলা দিন, বাতাসে শীত ঘন হয়ে আছে! ও বলে এই শীত ওর কাছে কিছুই না। ও হলো উত্তর থেকে উড়ে আসা তুষার কন্যা !
কথার মাঝেই ও চাপিয়ে নিয়েছে লাল ওভারকোট।বাসের ড্রাইভার ওকে শাড়ির সৌন্দর্য নিয়ে প্রশংসা করে! ও হাসিতে ঝলমল করে ওঠে আবার!
আমার চোখ সরেনা!
আমি পথের ধারের লেনিনের মত মূর্তি হয়ে যাই!
ওকে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াই!
জলপাইগুড়ির চা বাগান থেকে রাশিয়ার কত শহর!
ভেনিসে যাবার কথা বলেছিলাম একবার! মাথা নেড়ে বলেছিল, ওর সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে নিয়ে সেখানে যাবে ও!
সারারাত নৌকায় ঘুরে বেড়াবে!
ওর সেই প্রত্যাশার চোখ দেখে, আমার ইচ্ছে করেছিল ব্যাংকের মেশিন থেকে সব অর্থ তুলে এনে ওর জন্য একটা প্রেমিক কিনে আনি! যে,ওকে ওর চাওয়ার মত ভালোবাসবে!যে,ওর চোখের থেকে ঝরে পড়া প্রতিটা চোখের জল দিয়ে একটা পাতাবাহার বাগান বানাবে।যে, ওর বুকের ভিতর একটা নক্ষত্রের বাগান বানাবে!
আমি ওর মতই বিশ্বাসী হয়ে যাই! ওর জন্য শুভবোধের অর্ঘ্য সাজাই!
এভাবেই চলতে থাকে জীবন!
ঝুমতলি থেকে শুরু হওয়া সেই স্বপ্নরা চোখের ভিতর কত স্বপ্নর মালা বোনে!
সেখানে পাত্রপাত্রী হয়ে যাই, আমি তুমি সে ও সবাই….
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:১৯