প্রতি শুক্রবার সকালে উঠে বাজারে যাওয়া টা আমার জন্য এক রকমের সাজা। শুক্রবার হলো ঘুমের সময়, লম্বা আরামের শান্তিপূর্ণ একটা ঘুম দেবার প্রত্যাশা নিয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমাতে যাই কিন্তু শুক্রবার সকালে আমাকে তরিঘরি করে তোলা হয় বাজার করার জন্য। এক পেয়ালা চা ও পাওয়ার যো নাই। আগে বাজার তার পরে অন্য কথা। যাই হোক ঘুমন্ত চোখে কোন রকমে পায়ে চপ্পল গুজে দৌড় দিতে হয় বাজারে। ঠিক মত দাত মাজার সময়টা ও দেয় না, তাজা বাজার না হলে নাকি শুক্রবার দিন টাই মাটি। আমার জিজ্ঞাসা বাকি দিন গুলা কি বাসি বাজার করে।৷
শুক্রবারের বাজার যেন আগুনের বেচা কেনা বসে, যেটাই কিনতে যাবেন তাতেই আগুন দাম। এখন শিতের সময় বাজার ভর্তি নানান রকম এর সবজি, এই নানান সবজীর সব একি রকম দাম কি করে হয় এটাই আমার মাথায় আসে না। সিম ষাট টাকা, আলু ষাট টাকা, ফুলকপি ষাট টাকা, আমার মত হত দরিদ্রদের জন্য এটা এক ধরবের পরিক্ষা। ইনিয়েবিনিয়ে দাম কমানোর অপচেস্টা টেস্ট ম্যাচের বোলারের মত করতেই থাকি আর সবজি ওয়ালা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানের মত সমানে ছক্কা হাকাতে থাকেন মাঝে মাঝে তো বল গ্যালারী ছাড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে পরে, কোনো ভাবেই দাম কমাতে তিনি আগ্রহি না।
সবজি ওয়ালাদের ভাবসাব ও থাকে দেখার মত, চারিদিকে সবজির পসার সাজিয়ে মাঝে তার সিংহাসন থাকে তার উপরে তিনি বিরাজমান থাকেন। ক্রেতার কাপরের ধরন দেখে তার আচার ব্যাবহার নদির জলের মত জোয়ার ভাটা ওঠা নামা করে। আমার মত গোবেচারা টাইপ মানুষ তাদের কাছে ধাতর্বের মধ্যে পরে না, দাম জিজ্ঞাসা করলে যথেষ্ট অপমান সহকারে দাম বলে ভাব খানা এমন এই জিনিস তোমার জন্য না। এর পরেও যখন সকল অপমান সহ্য করে এক কেজি সিম বা বেগুন নেয়ার দুঃসাহস করি, পরিমান শুনেই জনাবের মুড সুইং হয়ে যায়, ঠোট উল্টিয়ে বলে এক কেজিতে আর কতো কমাবো দেন ৫৮ টাকা কিন্তু কাহিনি হলো ১০০ টাকা দিলে তার কাছে ৪২ টাকা থাকে না সে ৪০ টাকা ফেরত দিয়ে বলে দুই টাকা নেই পরে নিয়েন ব্যাপারখানা মাফ করেন টাইপ আর কি।
ওজন নেয়ার ব্যাপার খানাও বেশ ঝক্কিঝামেলার, আজকাল তো দাড়িপাল্লা ব্যাবহার করে না, ওজন মাপার মেশিন আছে, তাতেও নাকি হাজার রকম তেলেসমাতি, মেশিন খানা কখনই ক্রেতার দিকে ফেরানো থাকে না, থাকলেও তার ডিসপ্লে থাকে ঘোলা বা অস্পষ্ট বোঝার কোন উপায় নাই আসলে ওখানে কি কারিশমা হচ্ছে। একজন অভিজ্ঞ ক্রেতা আমাকে গোপন তথ্য দিয়েছিলেন কোন বস্তু ঘসা দিয়ে মেশিনের উপর রাখলে এক ধরনের রিডিং দেখায় আবার সোজাসুজি রাখলে এক ধরনের, আমি আজ অবাধি সোজাসুজি রাখতে দেখি নাই, সাহস করে একবার বলেছিলাম তাদের এই বুজরিকির কথা, আমি যে কি ধরনের অপদার্থ এবং বুদ্ধিমান এটা তারা আমাকে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিয়েছিল এর পর আর সাহস করি নাই নিজের বুদ্ধির পরিমাপ করার।
মাছ কিনতে গিয়ে তো মহা খারাপ অবস্থা, বাসার সবার ধারনা, বাজারের সব পচা মাছ আমাকেই ধরিয়ে দেয়। তাদের আমি কোন ভাবেই বোঝাতে পারি না যে আমি কেনার সময় মাছের কান লাল দেখেই কিনি কিন্তু কি করে যেন বাসায় আনতে আনতে তা ঘোলাটে হয়ে গন্ধ ছড়ায়। এই রহস্যের কিনারা আজো করতে পারলাম না। আমি ইলিশ মাছ একদম পছন্দ করি না, ইলিশের গন্ধ আমার খারাপ লাগে, তারপরেও আমাকে ইলিশ কিনতে হবে কারন বাসার সবাই ইলিশ পছন্দ করে, আমি জ্ঞ্যানীর মত গোল সাইজ পেটের কাছে লাল রেখা দেখে ইলিশ কিনে নিয়ে যাই বাসায় গিয়ে ওটা হয়ে যায় চন্দনা ইলিশ যার স্বাদ অতিব কুস্বাদযুক্ত।
মাছ ওয়ালারা আমাকে দেখলে খুশি হয় আমাকে অনেক সন্মান করে স্যার বলে ডাকে, আদর করে সামনে বসিয়ে পচা গন্ধ ওয়ালা মাছাটা আমার ব্যাগে ভরে দেয়, তাদের সুমিস্ট কথায় আমি এতটাই বিহবল থাকি যে তিন কেজির জায়গায় তারা চার কেজির দাম রেখে দেয়। তাদের হিসাব টাও চমৎকার যেমন ধরেন দুই আর দুই চার চার আর তিন আট দেন স্যার নয় কেজি হইছে, আমি হাসি মুখে নয় কেজির দাম দিয়ে বিরদর্পে বাড়ি ফিরি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৩১