
রয়ানার আঁধার আরো গাঢ় হয়। সেই আঁধারকে ছুটি দিয়ে থেমে থেমে আকাশে বিজলী চমকায়। একটু পরে বর্ষা জল তরতর করে নেমে পড়বে নীচে। এই আঁধারেই ভিজে যাবে ঘর-দোর, উঠোন-বাড়ি, পথ-প্রান্তর, তটিনীর তীর। মন, মন ভিজে আছে অনেকক্ষণ। একা আমার নয়, আমরা কয়েকজনের। শ্যাওলা বনের নৌকায় নৈঃশব্দ্যের সুর টেনে আমরা পা ছড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। আজ সকালে আমাদের অন্তরে ঢুকে পড়ছে অদ্ভুত এক কালো পাখি। এই আঁধারে কালো পাখি মৃত্যুকূপের গান শোনায় । আবার কালো পাখি ডুবো জলের গল্প বলে। অন্তরে কালো পাখি ঢুকে পড়ার পিছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে, শোন__
পলস্তারা খসা চার পাঁচিলের ঘর। ঘরের এখানে-ওখানে আঁধার ঢুকে আছে। জানালার কপাট মেলতেই এক চিলতে আলো বেহুঁশ হয়ে ঢুকে পড়েছে। আলো আঁধারের মাঝে বসে আছে চুনোপুঁটি এক মানুষ। লালচে ফুলহাতা শার্ট গায়ে জড়ানো। পরনে শাদা-কালো ডোরাকাটা লুঙ্গি। ৫৬ বছরের কালো শরীরটা আরো কুঁচকে গেছে। শুকিয়ে কাঠ। জীর্ণ-শীর্ণ মুখ নিয়ে হাতে হাত রেখে ঘর থেকে বের হয়। আকাশী নীল রঙের চেয়ারে খুব জড়সড় হয়ে বসে। তাঁকে ঘিরে চারিদিকে অনেক জোড়া চোখ। সবগুলো চোখ কম্পমান। সবগুলো মন ভাবান্তর হয়। সব মনে ভেসে ওঠে, কালো দেয়াল বোর্ডে শাদা চকের ২৬ অক্ষরের কারিকুরি। সারল্য এক গোঁফওয়ালা মানুষ। তিনি হেঁটে গেলেও পায়ের তলার বালি ধুলোও ব্যাথা পায় না। তাঁর ব্যক্তিত্ব, আত্মবোধ, আত্মসম্মান, নৈতিকতা অন্যকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। মাস ছয়েক ধরে তাঁর শরীর বয়ে বেড়ানোর মত শক্তি কমে এসেছে। সংসারের ঘানি টানতে তবুও ছুটে যেতেন ফুলেল প্রাঙ্গণে। শরীরের সাথে না পেরে নিজের বেতনের পয়সার সিংহভাগ দিয়েও থাকতে চেয়েছেন। না, বাকিদের নৌকাবাইচ খেলার সাথে পেরে ওঠেননি। সন্তপ্ত হয়ে ঢুকে পড়েন চার পাঁচিলের ঘরে।
যৎসামান্য টাকার পুটলা হাতে নিতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। সাথে সাথে বাতাস কাঁদে সান্ধ্য নদীর তীরে, গাছের পাতা কাঁপে ঝড়কে ডেকে পাঠিয়ে, আলো লজ্জায় মুখ লুকায় লাশ ঘরে আর একদল কালো পাখি, পায়ের নখ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে স্কুল ঘরের কালো বোর্ড থেকে তুলছে ২৬ অক্ষরের নামগুলো। দেখে ফেলায়, পাখিগুলোর সদ্ম হয় এখন আমাদের অন্তর।
১৪০৮১৪
উৎসর্গ
মোবারক হোসেন। আমার গরীব স্কুল শিক্ষক। স্কুলে তাঁর একটা নাম দিয়েছিলাম। কার্টুন স্যার। কার্টুনের মত চোখ নাচিয়ে নাচিয়ে কথা বলতেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


