সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আজকে সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরবো সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। ঢাকা থেকে আসার সময় একটা ডায়েরী নিয়ে আসছিলাম যেখানে এক সপ্তাহে ঘুরাঘুরির একটা খসড়া প্ল্যান করা ছিল। তবে ভ্রমণে যে সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ী হবে তা কিন্তু না। আমরা যে হোটেলে ছিলাম সেখানে একজন বাঙালি ছেলে কাজ করত। আসার পর প্রথম দিনই তাকে বলেছি একটা সিমের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। হোটেলের রুমে ওয়াই–ফাই ব্যবহার করতে পারলেও বাইরে বের হয়ে ইন্টারনেট এক্সেস করতে পারছিলাম না। এমতাবস্থায় গুগল ম্যাপ ইউজ করতে পারছিলাম না। গুগল ম্যাপ ছাড়া বিদেশ বিভুঁইয়ে ঘুরাঘুরি করতে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হয়। লোকেশন জানা, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দূরত্ব,কত সময় লাগবে যেতে অথবা প্রতি কিমি তে ট্যাক্সি ভাড়া কেমন হতে পারে এসব সম্পর্কে আইডিয়ার জন্য হলেও গুগল ম্যাপ ভিনদেশে বিপদের বন্ধুই বলা চলে। আর যে কোন দেশে ঘুরাঘুরির সময় সে দেশের সিটি ম্যাপ বেশ কাজে লাগে। সুইস হোটেলে এসেই কুয়ালালামপুরের একটা সিটি ম্যাপ কালেক্ট করলাম। আর সাথে একটা ট্রাভেল গাইড যেখানে পুরো মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট স্পট গুলোর বর্ণনা আর সুন্দর সুন্দর ছবি দেয়া আছে। এসব সাধারণ ফ্রি শুধুমাত্র ট্যুরিস্টদের সুবিধার কথা চিন্তা করে। দেশে ফেরার সময় এই গাইডটা সাথে করে নিয়ে আসি; ভবিষ্যতে সেখানে আবারো কোন একদিন যাবার ভাবনা থেকে।
অতঃপর ব্রেকফাস্টের জন্য নীচে গেলাম। হোটেল থেকে খুব কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট করলাম। এই দেশে মালয়, চাইনিজ আর ইন্ডিয়ান খাবারের ব্যাপক সমারোহ। ব্রেকফাস্ট করলাম একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে। আলু পরোটা, মিক্সড ভেজিটেবল আর ডিম অমলেট দিয়ে ব্রেকফাস্টের পর চা খেলাম। খাওয়া শেষে হোটেলে ফিরে গেলাম। আর ইতিমধ্যে বাঙ্গালি ছেলেটা ডিজি কোম্পানির একটা সিম নিয়ে হাজির হল। এক সপ্তাহের প্যাকেজ আর সাথে ২৫০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ফ্রি ছিল। যাই হোক প্ল্যান করলাম পুত্রজায়া যাবো। হোটেলের ম্যানেজার একটা ট্যাক্সি ক্যাব ঠিক করে দিল। পুত্রজায়া মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী। সব প্রশাসনিক কাজকর্ম আর সিদ্ধান্ত এখান থেকেই নেয়া হয়।আপ–ডাউন হিসাবে ট্যাক্সি ঠিক করা করা হল।মোটামুটি দেড়ঘন্টার মত লাগবে যেতে। যাওয়ার সময় দেশের অসম্ভব সুন্দর রাস্তা আর হাইওয়ে দেখতে দেখতে গেলাম। আমাদের ট্যাক্সি চালক একজন ভারতীয়,তামিল নাড়ুতে বাড়ি। অনেকদিন ধরে মালয়েশিয়াতে আছেন। বেশ ভালো ইংরেজি বলতে পারেন।কোন জায়গায় কি আছে এসবের ব্যাপারে মোটামুটি ভালোই ধারণা রাখেন। তার সাথে কথা বলে কিছু আইডিয়া পেলাম কিছু ট্যুরিস্ট স্পট সম্পর্কে।এই দেশে সাধারণত ভারতীয়দের অনেকেই ট্যাক্সি চালায় আর এতে ইনকামও বেশ। আবার যারা চাইনিজ তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মালিক। আর যারা মালয়েশিয়ার অধিবাসী তারা সাধারণত কিছুটা অলস প্রকৃতির; তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে চাইনিজরা রেস্টুরেন্টের বিজনেস শুরু করে এবং এক সময় পরিশ্রম করে ঐ রেস্টুরেন্টের মালিক হয় তারা। আবার অনেক মালয়েশিয়ার নাগরিককে দেখেছি ট্যাক্সি চালিয়ে ভালো উপার্জন করতে।
দেড় ঘণ্টা পর পৌঁছে গেলাম পুত্রজায়াতে। সাজানো গুছানো, ছিমছাম শহর এই পুত্রজায়া। দেখে মনে হয় কোন শিল্পী তার তুলির সুনিপুণ আঁচড়ে এই শহরকে গড়েছেন। শুধু সুবিশাল অট্টালিকা নয়, স্থাপত্যের দিক দিয়ে একটার চেয়ে আরেকটা কম সুন্দর নয়। পুত্র মসজিদ ঘুরে দেখলাম। মসজিদটির ভেতরকার নকশা আর আলো-আ্ঁধারি পরিবেশ দারুণ লাগলো। আশপাশের আরো কিছু স্থাপনা দেখলাম।পারডানা পুত্র যেটা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অফিস; বিশাল চত্বর সামনে আর প্রচুর ছোট-বড় গাছপালা দিয়ে সবুজ আর সুশোভিত। সুন্দর পরিবেশটা দেখেই ভালো লাগলো। কথায় আছে না, "ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইম্প্রেশন"। এরকম অবস্থা আমার। পুত্র স্কয়ারের চারপাশের রাস্তা দেখে ফ্রান্সের পারী নগরীর চওড়া রাস্তাগুলির কথা মনে পড়ে গেল। এত চওড়া যে সাঁজেলিসীর এক পাশ থেকে আর এক পাশ দেখা যায় না। পরিষ্কার রাস্তা দেখে মনে হল বিন্দু পরিমাণে ধূলা-বালি নেই; ইচ্ছে করছিল রাস্তার উপর কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখি। চারপাশের সুন্দর স্থাপত্য, আকাশছোঁয়া দালান, গুছানো পরিপাটি রাস্তা মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এখানে হট এয়ার বেলুনে চড়ে পুরো পুত্রজায়াকে পাখির চোখে পরখ করা যায়। বিকেল বেলা সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে হট এয়ার বেলুনে করে একই সাথে পুরো শহরটাকে উপর থেকে দেখা এবং সাথে সূর্যাস্ত উপভোগ করার মধ্যে এক অপার্থিব আনন্দ রয়েছে যা লিখে হয়ত বুঝানো সম্ভব নয়। রাতের বেলা পুরো পুত্রজায়া বিভিন্ন রঙের আলোতে আলোকিত করা হয়। রাতের পুত্রজায়া বেশি সুন্দর। পুত্র লেকের উপর রাতের সেরি ওয়াওসান ব্রিজ দারুণ সুন্দর। ব্রিজের ল্যাম্পপোস্ট আর গাড়ির হেড লাইটের আলো লেকের পানিতে পড়ে সুন্দর রঙের রিফ্লেকশন তৈরি করে আর দূরে দাঁড়িয়ে দেখে মনে হয় পিঁপড়েরা সারি সারি লাইনে তীব্র গতিতে ছুটে চলছে যার যার গন্তব্যে।

পুত্রজায়া; ছবির মত সুন্দর কোন শহরে চলে আসলাম

পুত্র মসজিদ; দূর থেকে দেখতে যেমন সুন্দর কাছ থেকেও ঠিক একইরকম সুন্দর

পুত্র মসজিদের ভেতর; সুন্দর নকশা আর আলো- আধাঁরের সমারোহ

পুত্রজায়ার রাস্তা; গাছ আর ফুলের টব দিয়ে সাজানো অসাধারণ পরিবেশ

পুত্রজায়ার রাস্তা; পরিপাটি আর ছিমছাম পরিবেশ
২য় পর্বঃ Click This Link
১ম পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



