somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লটারি করে প্রধান উপদেষ্টা, প্রস্তাব আকবর আলির

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত প্রকাশ করে সুনির্দিষ্ট একটি তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করার প্রস্তাব দিয়েছেন আকবর আলি খান।

নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে শনিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় এই প্রস্তাব তুলে ধরেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।

জামায়াতে ইসলামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নানের সঞ্চালনায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ওই আলোচনায় এই প্রস্তাব দিয়ে আকবর আলি আশা প্রকাশ করেন, তার এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনের সময়ের সরকার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট দূর হতে পারে।

আকবর আলি বলেন, “নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে এমন ফর্মুলা তৈরি করতে হবে, যাতে কোনোভাবে কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন, তা প্রকাশ না পায়।

“ব্যবস্থা এমন হতে হবে- প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, তা ওই সরকার গঠনের শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে বিগত ১০ অথবা ৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের একটি তালিকা করে সেখান থেকে ১৫ জনকে ঠিক করতে হবে। ওই তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা যেতে পারে।”

সাবেক সচিব আকবর আলি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ছিলেন, ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল বিচারপতি কে এম হাসানের।

তখনকার আইন অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম সুযোগ ছিল সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের। তবে তার আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোয় তা নিয়ে বিতর্ক ওঠে।

পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করতে এই সংশোধন হয়েছে দাবি তুলে আওয়ামী লীগের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে কে এম হাসান পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

পরে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন, যার পরিষদে আকবর আলিও ছিলেন। তবে ওই সরকার ব্যর্থ হয়। আকবর আলিসহ চারজন উপদেষ্টার পদত্যাগের পর রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা আসে।

এরপর ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করে। এর ফলে বর্তমানে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।

তবে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না- এই দাবি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপিসহ বিরোধী দল।

বর্তমান আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে তার একটি পথ বাতলে দেন আকবর আলি। এক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দল থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেন তিনি।

আকবর আলি বলেন, “এক্ষেত্রে সরকারি দলের ৫ সদস্যের মনোনয়ন বিরোধী দল করতে পারে এবং বিরোধী দলের ৫ সদস্যের মনোনয়ন সরকারি দল দিতে পারে। অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের ওই ১০ সদস্য আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’’

আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান খোঁজার জন্য রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তারপরও বলতে চাই, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে আলোচনা ও সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।”

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয় সরকার গঠনে ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান।

প্রথম প্রস্তাব হল- মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে বর্তমান মহাজোট সরকার পদত্যাগ করবে এবং একটি নির্দলীয় সরকার শুধু তিন মাসের জন্য দায়িত্ব নেবে।

দ্বিতীয়ত, শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল’ নির্দলীয় সরকারের দায়িত্ব নেবে।

তৃতীয়ত, একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির (অথবা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির) নেতৃত্বে সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার দায়িত্ব নেবে।

চতুর্থত, স্পিকারের নেতৃত্বে দুই বড় দলের মধ্য থেকে পাঁচজন করে নিয়ে একটি সরকার হবে যার সদস্যরা কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

পঞ্চমত, যৌথ নেতৃত্বে (একজন বিএনপি ও একজন আওয়ামী লীগের মনোনীত) একটি নির্দলীয় সরকার, যাদের কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এবং সর্বশেষ, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসনসহ সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনার প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে সাবেক সচিব আকবর আলি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ চারটি মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা হলে তা নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আমি মনে করি, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।’

“ইসির আলাদা কোনো জনবল না থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সরকারের জনবল, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়েই করতে হয়।’’

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজ (সিএসপিএস) এর উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠক হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাবেক সচিব এ এম জহুরুল ইসলাম, এডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×