বিথি। আমার দূর সম্পর্কের মামাতো বোন। আমার চাইতে ছয় মাসের বড়। ডাকতাম আপু কইরা। যদিও আমার এক ক্লাস নিচেই পড়ত। থাকত শহরে। অন্য সব খালাতো মামাতো বোনের চাইতে ব্যতিক্রম কিছু ছিলনা। শহর থেকে আসলে বছর দুই বছরে একবার দেখা হইত। তখন আমি ক্লাস টেনে। বন্যার কারনে ওদের স্কুল বন্ধ হইয়া গেল। একমাস বন্ধ। চইলা আসল বাড়ীতে। গ্রামে তাদের শুধু একটা ঘর ছিল। তাই আমার পড়ার ঘরই হলো তার পড়ার ঘর

। কয়দিন পরই আপু থেকে সম্পর্ক এক্কেবারে তুই তোকারিতে নাইম্যা আসল তার ইচ্ছায়। প্রতিদিন নানান খুটিনাটির মধ্যে দিয়া, যেগুলো নিয়া রচনা লিইখ্যা পাঠকের গালিগালাজ না খাওয়াই উত্তম, পরিনতি যা হইবার তাই হইল। যাওয়ার সময় আমাকে একগাদা প্রেমপত্র। যেটা আমি আশা না করলেও আশংকা যে করিনাই তা না। কিন্তু তাকে বন্ধু হিসেবে ভাবতেই আমার ভালো লাগত। সে আশাহত হইল

। তার সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হইয়া গেল। প্রায় দুইবছর পর দেখা হইল আবার। কলেজে পড়ি তখন। দেখলাম সে আমাকে আপনি করে বলছে। হাসির কথা

। যাকে আমি বয়সে বড় বইলা আপু কইরা ডাকতাম, সে আমাকে এখন আপনি কইরা বলতেছে। আমি যথারীতি ‘তুই’তে থাকলাম। কথা হইল অনেক্ষণ। সে জানাইল তার খুব সখ, জীবনে আমি যেন অন্তত একটা চিঠি লিখি তারে। কইলাম, কি লিখুম? তার উত্তর, কিছু লিখতে ইচ্ছা না করলে সাদা কাগজ দিয়েন

। তারপরও তার একটা চিঠি চাই। আশস্ত করলাম, লিখুম চিঠি। ঢাকায় আইস্যা ভুইল্যা গেছিলাম। পরে হঠাত একদিন মনে পড়ল। ভাবলাম, পাঠাই একখান চিঠি। নাইলে একটু কালি আর একখান কাগজ খরচ হইব, এইতো। তখনকার সেই চিঠি তুইলা দিলাম এইখানে হুবহু।
আপু,
আমার সালাম নিবেন। আপনার বন্ধুদেরকে আমার সালাম এবং বান্ধবীদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ভাবে আমার অফুরন্ত ভালোবাসা জানাইবেন। আপনার আব্বা-আম্মা, প্রতিবেশী, আত্বীয়-সজন, এলাকাবাসীসহ আরো যারা আছেন, তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ভাবে আমার সালাম জানিয়ে পরকালের জন্যে অশেষ নেকী হাসিল করার সুযোগ দিবেন। আর দৈনিক নফলসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আমার জন্যে দোয়া করবেন, যেন অতি শিঘ্রই শুভ কাজ সম্পন্ন করে দেশের বর্ধিত জনসংখ্যা উত্তরোত্তর বর্ধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারি।
ইতি,
আপনার স্নেহের ছোট ভাই
বিঃদ্রঃ তোর চিঠি পোষ্ট করতে এসে একটা মারাত্নক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। চিঠি পোষ্ট করতে গিয়ে দেখি, হ্যাভি সুন্দর এক মেয়ে যাচ্ছে আমার পাশ দিয়ে। তার পিছন পিছন হাটা শুরু করলাম। ভাবছিলাম তার সাথে কথা বলব। কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। যেইনা সাহস সঞ্চয় করে ভাবলাম যে কথা বলব, দেখি সে এক ছেলের হাত ধরে আমারে দুখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল। আআহহহহ…… বুকটা ফাইট্টা যায়…..
ঐটাই আমার জীবনে লিখা প্রথম এবং শেষ প্রেম পত্র।