somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন হতো দ্বিমাত্রিক জগত? এই মহাবিশ্ব কি শুধুই ত্রিমাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা)? - কিছু ভাবনাঃ পর্ব ১

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের অনেকের কাছে, আসলে মনে হয় সবার ক্ষেত্রেই ত্রিমাত্রিক স্থান সিস্টেমের (three spatial dimensions) চেয়ে বড় মাত্রার (dimension) কোন জগত কল্পনা করা মোটামুটি অসম্ভব একটা ব্যাপার। আর এই কারনেই আমরা অনেকেই বলে থাকি যে তিন এর অধিক কোন স্থান মাত্রার (সময় কে এখানে গণনা করা হবে না, কারন সময় স্থান মাত্রা নয়) অস্তিত্ত নেই। কিন্তু আমাদের এই ধারনা কি আসলেই ঠিক? নাকি আমাদের মস্তিস্কের তিনের অধিক মাত্রা কল্পনা করার সামর্থ্য নেই? হয়তো বা চতুর্থ, পঞ্চম বা ষষ্ট এমনকি আরও অনেক মাত্রা অন্যান্য অনেক অদেখা বিষয়ের মতোই আমাদের চারপাশেই আছে, আমরাই কেবল সেগুলোকে দেখতে বা অনুভব করতে পারি না।

বিজ্ঞানের বিখ্যাত string theory এর নাম আমরা অনেকেই শুনে থাকব। এই থিওরি অনুসারে অতিরিক্ত মাত্রার অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। প্রকৃতপক্ষে যে সমীকরণগুলো দিয়ে সুপার স্ট্রীং থিওরী ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেগুলোতে এমন একটা মহাজগত চিন্তা করা হয়েছে যেখানে কমপক্ষে ১০ টা মাত্রা আছে। কিন্তু সমস্যা হলো খোদ পদার্থ বিজ্ঞানীরা যারা সারা দিন এইসব অতিরিক্ত ডাইমেনশন নিয়ে গবেষণা করছেন, তারা নিজেরাই এখন পর্যন্ত এই অতিরিক্ত ডাইমেনশনগুলো কেমন হবে বা কিভাবে এইগুলোকে আমাদের মত সাধারন মানুষদের কাছে ব্যাখ্যা করা যায় এই বিষয়ে সন্তোষজনক কোন সমাধান বের করতে পারেন নি। হয়তোবা অদূর ভবিষ্যতে সেটা সম্ভব হবে কিংবা কখনোই হবে না।

যাই হোক, এইসব বড় বড় থিওরী আর সাইন্টেফিক ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়ে আমরা বরং আমাদের চেনা জানা বিষয়গুলোকেই একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি। সেটা কেমন? চলুন দেখি –

দ্বিমাত্রিক পৃথিবী? (2 dimensional world): মনে করুন আমরা একটা ২ মাত্রার (২ dimensional) পৃথিবীতে বাস করি, তাহলে কেমন হতো সেই পৃথিবীটা? বিষয়টা চিন্তা করা কিন্তু মোটেই কঠিন কিছু না। আমরা সবাই বইয়ের পাতায় আঁকা ছবি তো দেখেছি। বইয়ের এই পৃষ্ঠাগুলো কিন্তু এক একটা ২ মাত্রিক তল (শুধু দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ, কোন উচ্চতা নেই/ নগণ্য)। এখন বইয়ের ছবির দ্বিমাত্রিক প্রাণীগুলো যদি জীবন্ত হত (অর্থাৎ পৃষ্ঠার মধ্যে শুধু হাটাঁহাটিঁ করতে পারত, কিন্তু উপরে বা নিচে যেতে পারতো না এবং এই দুই দিকে কিছু দেখতে ও পারতো না ) আর ২ মাত্রিক তলটা শুধু একটা পৃষ্ঠা না হয়ে যদি এই পৃথিবীর সমান বড় একটা তল হত, তবে কেমন হত তাদের জীবন? কোন ত্রিমাত্রিক বস্তু বা প্রাণী যদি তাদের সামনে আসতো তবে সেটাকেই বা তারা কেমন দেখতো? সহজ একটা উদাহরণ চিন্তা করা যাকঃ মনে করুন আপনি একটা বক্সকে (cube) একটা পৃষ্টার উপরে রাখলেন এবং ওই পৃষ্ঠার মধ্যে একটা দ্বি মাত্রিক মানুষ রয়েছে। তাহলে সে কিউবটাকে কেমন দেখবে? উত্তরটা খুব সহজ তাই না? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন! ওই কিউবটা সেই দ্বিমাত্রিক পৃথিবীর লোকটার কাছে একটা সরলরেখা মনে হবে যদি সে যেকোন এক পাশ থেকে কিউবটা কে দেখে। আর যদি চারপাশ থেকে ঘুরে ঘুরে ঘুরে দেখে তাহলে বুঝতে পারবে যে এই বস্তুটা আসলে ৪ টা লাইন দিয়ে তৈরি। কিন্তু কখোনোই সে বুঝতে পারবে না যে এটা একটা কিউব বা নিদেন পক্ষে একটা ২ ডাইমেনসনের বর্গ। কারণ সেটা বুঝতে হলে তাকে z axis থেকে দেখতে হবে, যেই axis এর অস্তিত্বই তার জানা নেই। নিচের চিত্রটা দেখলে হয়তোবা আরও ভাল বুঝা যাবে বিষয়টা।



আপনার ত্রিমাত্রিক বিশ্ব থেকে যেমন দেখবেন বক্সটাকে (birds eye view): প্রথম চিত্র- দ্বিমাত্রিক পৃথিবী এবং ত্রিমাত্রিক বক্স; ২য় চিত্র- দ্বিমাত্রিক পৃথিবী এবং ত্রিমাত্রিক বক্স এর যে অংশটুকু দ্বিমাত্রিক পৃথিবীতে দেখা যাবে শুধু সেইটুকু।

দ্বিমাত্রিক পৃথিবীর লোকটা যদি AB দিক থেকে দেখে তবে সে বর্গটির শুধু কমলা লাইনটি দেখবে, BC পাশ থেকে দেখলে সবুজ লাইনটি এবং অনুরূপ ভাবে CD ও DA পাশ থেকে দেখলে লাল এবং নীল লাইনটি দেখবে। কিন্তু কখনোই পুরো বর্গটি দেখবেনা যেটা আপনি দেখছেন। ব্যাপারটা চিত্র এঁকে বুঝানো মনে হয় সম্ভব না। তবে আপনি এইভাবে চিন্তা করে দেখতে পারেন – মনে করুন আপনি কাগজে একটা বর্গ একে সেই কাগজটাকে একদম চোখের সমান্তরালে এনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ থেকে দেখছেন, তাহলে কি দেখবেন? প্রতিবারে ওই বর্গটির একটামাত্র বাহু দেখতে পাবেন। পুরো বর্গটিকে তার চার বাহুসহ একবারে দেখতে পাবেন না। উপরের দ্বিমাত্রিক জগতের ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম। আশা করি বুঝাতে পেরেছি :)

এতক্ষন যা বললাম তা আসলে একটা ভুমিকার মত। আর এসব বলার উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী আলাপটা যাতে সহজে বুঝা যায় সেটা নিশ্চিত করা। এইবার মূল কথায় আসি।

প্রকৃতপক্ষে এক্সট্রা ডাইমেনশনের ধারনাটা কিন্তু অনেক পুরানো। ১৮৮৪ সালে Edwin A. Abbott তার Flatland: A Romance of Many Dimensions নামক একটা বইয়ে প্রথম এই বিষয়টা তুলে ধরেন। যদিও তার বইটা ছিল সাহিত্যধর্মী, এবং তিনি নিজেও হয়তো জানতেন না এর মাধ্যমে কত বড় একটা ধারনার জন্ম তিনি দিয়ে গেছেন। এই ছোট উপন্যাসটা মূলত একটা বর্গের (square) মুখে বর্ণীত কাহিনী। যেখানে সে তার পৃথিবীর বর্ণনা দেয়, সেই পৃথিবীতে বাস করে লাইন, বৃত্ত, বর্গ, ত্রিভুজ এবং পঞ্চভুজ। তার সেই পৃথিবীর নাম flatland। দ্বিমাত্রিক হওয়ার কারনে, সেই পৃথিবীর বাসিন্দারা একে অপরকে শুধুমাত্র একটা সরলরেখার মতো দেখে। তারা যখন একে অপরকে স্পর্শ করে এবং চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখে যে সরলরেখাগুলোর দৈর্ঘ্য কিভাবে পরিবর্তন হচ্ছে কেবলমাত্র তখনই তারা নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন আকার সম্পর্কে ধারনা করতে পারে। কিন্তু সেই shape এর ভিতরে কি আছে তা কখনোই জানতে বা দেখতে পারে না।

Edwin A. Abbott এর Flatland বইটার প্রথম পৃষ্ঠাটা নিচে তুলে ধরলাম। এটা পরে অনেক কিছু পরিস্কার ভাবে বুঝা যাবেঃ

“I call our world Flatland, not because we call it so, but to make its nature clearer to you, my happy readers, who are privileged to live in Space.
Imagine a vast sheet of paper on which straight Lines, Triangles, Squares, Pentagons, Hexagons, and other figures, instead of remaining fixed in their places, move freely about, on or in the surface, but without the power of rising above or sinking below it, very much like shadows- only hard with luminous edges —and you will then have a pretty correct notion of my country and countrymen. Alas, a few years ago, I should have said "my universe:" but now my mind has been opened to higher views of things. In such a country, you will perceive at once that it is impossible that there should be anything of what you call a "solid" kind; but I dare say you will suppose that we could at least distinguish by sight the Triangles, Squares, and other figures, moving about as I have described them. On the contrary, we could see nothing of the kind, not at least so as to distinguish one figure from another. Nothing was visible, nor could be visible, to us, except Straight Lines; and the necessity of this I will speedily demonstrate.
Place a penny on the middle of one of your tables in Space; and leaning over it, look down upon it. It will appear a circle. But now, drawing back to the edge of the table, gradually lower your eye (thus bringing yourself more and more into the condition of the in-habitants of Flatland), and you will find the penny becoming more and more oval to your view, and at last when you have placed your eye exactly on the edge of the table (so that you are, as it were, actually a Flat-lander) the penny will then have ceased to appear oval at all, and will have become, so far as you can see, a straight line.
The same thing would happen if you were to treat in the same way a Triangle, or a Square, or any other figure cut out from pasteboard. As soon as you look at it with your eye on the edge of the table, you will find that it ceases to appear to you as a figure, and that it becomes in appearance a straight line.”

পরবর্তী পর্বঃ কেমন হতো দ্বিমাত্রিক জগত? এই মহাবিশ্ব কি শুধুই ত্রিমাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা)? - কিছু ভাবনাঃ পর্ব ২
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×