somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেমন হতো দ্বিমাত্রিক জগত? এই মহাবিশ্ব কি শুধুই ত্রিমাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা)? - কিছু ভাবনাঃ পর্ব ২

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ববর্তী পর্বঃ কেমন হতো দ্বিমাত্রিক জগত? এই মহাবিশ্ব কি শুধুই ত্রিমাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা)? - কিছু ভাবনাঃ পর্ব ১

দ্বিমাত্রিক পৃথিবী থেকে ত্রিমাত্রিক জগত (From 2-D to 3-D world): তো এই যখন অবস্থা, একদিন একটা গোলক (sphere) যে ত্রিমাত্রিক জগতে থাকে, সেই বর্গটার নিকট আসলো। বর্গটার কাছে কিন্তু সেই গোলকটাকে প্রথমে একটা লাইন মনে হয়েছিল এবং সেই গোলকের চারপাশে ঘুরার পরে সে বুঝতে পারলো যে এটা একটা দ্বিমাত্রিক বৃত্ত। কারণ গোলক হলে ও দ্বিমাত্রিক বিশ্বে শুধুমাত্র ওই গোলকের একটা স্লাইস দেখা যাচ্ছে এবং ওই দ্বিমাত্রিক জগতের বাসিন্দা বর্গটা সেই স্লাইসটুকুই শুধু দেখছে। নিচের চিত্রটা দেখুন



চিত্রে নীল রংয়ের বৃত্তটাই হচ্ছে গোলকের সেই স্লাইস যেটা দ্বিমাত্রিক তলে আছে এর উপরের এবং নিচের অংশটুকু যথাক্রমে তলের উপরে ও নিচে। অতএব, তলে থাকা বর্গটা যদি চারপাশ থেকে ঘুরে ঘুরে গোলকটাকে দেখে তবে শুধুমাত্র এই নীল বৃত্ত আকারটাই দেখবে। আর শুধুমাত্র একদিক থেকে দেখলে মাঝখানের কালো ড্যাশ লাইনটা শুধু দেখবে।

যাইহোক, গোলকটার আগমনের উদ্দেশ্য হল এই বর্গটাকে ত্রিমাত্রিক পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দেয়া, যে পৃথিবী থেকে সে (গোলক) আসলো। গোলকটা তাই দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের পাশাপাশি যে উচ্চতা নামক আরও একটা ডাইমেনশন আছে তা বোঝানোর জন্য বর্গটাকে ‘উপরদিক’ এবং ‘নিচের দিক’ এই দুইটা ব্যাপার ব্যাখ্যা করার চেস্টা করল। কিন্তু বর্গটার কাছে মনে হলো যে ওই বৃত্তটা তাকে ‘সামনে আসা’ এবং ‘পিছনে যাওয়া’ এই দুইটা ব্যাপার বোঝাতে চাচ্ছে। কারন যখনই গোলকটা সেই দ্বিমাত্রিক জগত (flatland)এর তলের ভিতর দিয়ে আসা যাওয়া করে দেখাতে লাগলো যে সে কিভাবে আরেকটা ডাইমেনশন দিয়ে উঠানামা করছে, তখন সেই বর্গটা শুধু দেখছিল বৃত্তের যে লাইনটা তার সামনে ছিল সেটা আস্তে আস্তে ছোট হচ্ছে এবং এক সময় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, তার দ্বিমাত্রিক জগতে সামনে থেকে পিছনে গেলে যেমন হয় আরকি। গোলকটা যতই তাকে অন্য আরেকটা ডাইমেনশন এর ব্যাপারে বুঝাতে চেস্টা করুক না কেন, তার মাথায় নিজের দ্বিমাত্রিক জগতের বাইরে আর কোন কিছুই ঢুকল না। নিচের ছোট এনিমেশনটা আশা করছি ব্যাপারটাকে স্পষ্ট করবে

From a 2-D point of view, a sphere passing through a plane appears as a line that initially gets longer, then becomes shorter, as this animation shows.

বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে ও যখন বর্গটাকে ৩ নম্বর মাত্রাটা বুঝানো গেল না, তখন গোলকটা আর কোন উপায় না পেয়ে বর্গটাকে টেনে তার দ্বিমাত্রিক flatland থেকে তুলে উপরে নিয়ে আসল (তার মানে বর্গটা এখন একটা নতুন ডাইমেনশনে ভ্রমন করল, ত্রিমাত্রিক পৃথিবীতে যেটাকে আমরা উচ্চতা বলি)। নতুন এই অবস্থান থেকে বর্গটা এখন একটা birds eye view তে তার দ্বিমাত্রিক জগত flatland কে দেখতে পেল এবং তার জগতের অন্য বাসিন্দাদের আকারগুলোও স্পষ্ট বুঝতে পারল, সেই সাথে প্রথমবারের মত তাদের (অন্যান্য বাসিন্দাদের) ভিতরটা ও দেখতে পেল।

নতুন এই ধারণা পাওয়ার পর বর্গটা এখন চতুর্মাত্রিক জগতের কথা চিন্তা করতে লাগলো। এমনকি তার এখন মনে হতে লাগলো এমন ও হতে পারে যে এই জগতে স্থানিক ডাইমেনশনের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, অসংখ্য স্থানিক ডাইমেনশন বিদ্যমান। গোলকটাকে তার এই নতুন চিন্তাভাবনার কথাটা এইবার সে বুঝাতে চেস্টা করতে লাগলো। আর এই জন্য সে গোলকটা শুরুতে তাকে যেভাবে উপর নিচে আসা যাওয়া করে ত্রিমাত্রিক ব্যাবস্থা বুঝিয়েছিল এবং বুঝাতে না পেরে বাধ্য হয়ে তাকে ৩ নম্বর মাত্রায় তুলে নিয়ে আসলো, সেই একই কন্সেপ্ট দিয়ে গোলকটাকে উলটো বুঝানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু এইবার গোলকটা কোনভাবেই বর্গের কোন কথাতেই এটা মানতে রাজি হয়না যে তিন এর অধিক ডাইমেনশন আছে, কারন সে চতুর্থ ডাইমেনশনটা তো দেখছে না। আর সে যেরকম করে বর্গটাকে টেনে ৩ নম্বর ডাইমেনশনে নিয়ে আসল, অন্য কেউ এসে তো তাকে সেইরকম করে টেনে ৪ নম্বর ডাইমেনশনে নিয়ে ও যাচ্ছে না। আমাদের অনেকের মতো এই গোলকটা ও আজ তাই অতিরিক্ত কোন ডাইমেনশনের কথা মেনে নিতে নারাজ।

ত্রিমাত্রিক থেকে চতুর্মাত্রিক এর দিকে যাত্রা (3-D to 4-D): গোলকটার মতো এই ধারনাটা মেনে নেয়া আমাদের জন্য ও একটু কঠিনই বটে! কারণ, নয়-দশটা ডাইমেনশন দূরে থাক, আমাদেরকে তিনটা ডাইমেনশনের অতিরিক্ত আর একটা ডাইমেনশন কল্পনা করতে বললেও সেটা আমাদের কল্পনাতে আসবে না। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম যে আমরা চার দিক থেকে ঘেরাও দেয়া দরজা, জানালাবিহীন একটা জায়গাতে আটকিয়ে আছি এবং আমাদেরকে এর বাইরে যেতে বলা হচ্ছে, কিন্তু বাইরে যাওয়ার কোন রাস্তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না (আবশ্যই সেটা আপাত দৃষ্টিতে, কারণ বাস্তবে হয়ত যাওয়া সম্ভব কিন্তু আমাদের মস্তিস্কের সেই পথ বের করার সামর্থ্য নেই)। আরও সহজভাবে যদি চিন্তা করি- রাতের বেলা আলো না থাকলে আমরা অনেক কিছুই দেখি না, এর কারন আলো না থাকলে আমাদের চোখ আমাদের মস্তিস্কে সেই জিনিসগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে অনুভূতি তৈরি করতে পারে না। কিন্তু এর মানে এই না যে সেই জিনিসগুলো সেইখানে নেই!

যাইহোক, আপাতত চিন্তা করুন যে, আপনি একটা খালি গোলকের ঠিক মাঝখানে দাড়িঁয়ে আছেন। তারমানে গোলকের উপরিতলের সব বিন্দু হতে আপনি এখন সমান দূরত্বে আছেন। এখন আপনাকে যদি বলা হয় যে আপনি এমন একদিকে হাটাঁ শুরু করুন যাতে গোলক পৃষ্ঠের সব বিন্দু থেকে আপনার বর্তমান আবস্থার মত সমান দূরত্ব বজায় থাকে। আর্থাৎ প্রতিটা বিন্দু থেকেই আপনি দূরে সরে যাবেন কিন্তু এমনভাবে সরবেন যাতে প্রত্যেক বিন্দু হতে আপনার দূরত্বটা সমান থাকে। পারছেন না, তাই তো? কোন দিকেই তো যাওয়ার নেই, তাই না? আর থাকলেও অন্তত সেটা আমাদের জানা নেই।

Flatland এর সেই দ্বিমাত্রিক বর্গও কিন্তু এই একই সমস্যায় পড়ত, যদি আপনি তাকে একটা বৃত্তের কেন্দ্রে ছেড়ে দিয়ে বলতেন যে বাবা এইবার তুমি এমন এক দিকে যাও দেখি যাতে বৃত্তের পরিধির প্রতিটা বিন্দু থেকে তুমি সমান দূরে থাক। ব্যাপারটা আমার আর আপনার জন্য অনেক সহজ, তাই না? বৃত্তের কেন্দ্র বরাবর উপরের দিক বা নিচের দিক গেলেই তো হচ্ছে! কিন্তু এই উপর বা নিচের দিকে যাওয়া মানেই তো ২ মাত্রা থেকে ৩ মাত্রায় যাওয়া। যেটা ওই বর্গের কাছে তার দ্বিমাত্রিক দুনিয়াতে থাকাকালীন অবস্থায় অকল্পনীয় ছিল। কেবলমাত্র যখন সেই ত্রিমাত্রিক গোলকটা তার নিকট এসে তাকে তুলে নিয়ে তৃতীয় মাত্রায় নিয়ে আসলো, তখনই সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে Abbott এর উপন্যাসের সেই ত্রিমাত্রিক গোলকের মতো, আমাদের কাছে কোন চতুর্মাত্রিক গোলক আসছে না যে আমাদেরকে ৪ নম্বর মাত্রার দিকে নিয়ে যাবে :)

পরবর্তী পর্বঃ কেমন হতো দ্বিমাত্রিক জগত? এই মহাবিশ্ব কি শুধুই ত্রিমাত্রিক (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা)? - কিছু ভাবনাঃ পর্ব ৩
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×