somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত

১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র, বৈষম্যমুক্ত বাংলা গড়। কোটা প্রথার দিন শেষ, মেধাবীদের বাংলাদেশ। কোটা প্রথার সংস্কার চাই।" এই ধরনের নানা স্লোগান ভেষে আসছে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বাংলাদেশে সব ধরণের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারন চাকরি প্রত্যাশী ও ছাত্র-ছাত্রীদের মুখ থেকে ।দেশ স্বাধীনের পর থেকেই চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিলে এই বছরের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন কর আসছে। আন্দোলনকারীরা মূলত পাঁচটি দাবিতে রাজপথে নেমেছেন। দাবিগুলো হল: ১. বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা ২. কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ না দেয়া ৩. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেয়া ৪. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা ৫. কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ প্রদান করা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। সে সময় মেধাতালিকা ২০ শতাংশ বরাদ্দ রেখে, ৪০ শতাংশ জেলাভিত্তিক, ৩০ শতাংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এই কোটা ব্যবস্থাটি পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রয়েছে। বিবিসি বাংলার এক তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ বিশ হাজার প্রায় , অর্থাৎ প্রতি এক হাজার মানুষের মাঝে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১.২ জন প্রায়। যা সমগ্র জনসংখ্যার ০.১২ শতাংশ কম বেশি। ০.১২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০ শতাংশ। যা হাজারে রূপান্তর করলে দেখা যায়, এক হাজার জনতার মাঝে ১ থেকে ১.৫ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য কোটার পরিমাণ ৩০০।সর্বোপরি হিসাব করলে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৬৩ শতাংশ মানুষের জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা সরকারি চাকুরির কোটা বরাদ্দ । অথচ আমাদের সংবিধানের ১৯ (১), ২৯ (১) ও ২৯ (২) অনুচ্ছেদ সমূহে চাকুরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধারা সকল বিতর্কের উর্দ্ধে তবে বিভিন্ন সময়ে আমাদের ক্ষমতাশীনরা মুক্তযুদ্ধাদের যে তালিকা প্রনয়ন করেছেন তার বিতর্ক আজ ও পিছু ছাড়ে নি । আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অনেক ভুয়াব্যক্তির নাম ও মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকায় দেখেছি যারা কি না অর্থ বা রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে তালিকাভুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধাদের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন । মুক্তিযুদ্ধের ভুয়া সনদধরী সরকারি আমলাদের চাকরি হারাতে ও দেখেছি । যেখানে স্বাধীনতার সাতচল্লিশ বছর পর ও মুক্তিযুদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক সেখানে সরকারি চাকরিতে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা নিয়ে সাধারন মানুষের মনে প্রশ্ন অস্বাভাবিক কিছুই না । আর আমাদের দেশে সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযুদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে কোটাপ্রথা চালু আছে তার কোন সঠিক দিক নির্দেশনে নেই । যেমন আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কথাই টানিনা কেন । ভারতে কোন মুক্তিযুদ্ধার পরিবার যদি একবার সেই কোটা ব্যবহার করে পরবর্তীতে ঐ মুক্তিযুদ্ধাপরিবারের আর কেউ সেই কোটা সুবিবেধ পান না । আমাদের দেশে ১৯৭৭ সালে পে এন্ড সার্ভিস কমিশনের এক সভায় প্রায় সকল সদস্যই সরকারি চাকুরিতে কোটা না রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন । সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আকবরআলী খান ও সাবেক সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দিন আহম্মদ ২০০৮ সালের মার্চে এই কোটা ব্যবস্হার উপর এক গবেষনা করেন এবং ঐ গবেষনায় তারা সরকারি চাকুরিতে এই কোটা ব্যবস্হা কমিয়ে আনার সুপারিশ করেন ।

গত ৮ এপ্রিল ২০১৮ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারন চাকরি প্রত্যাশী ও ছাত্র-ছাত্রীরা রাজধানীর শাহবাগে অবস্হান নিয়ে তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শুরু করলে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদে সাথে ভায়বহ সংঘর্ষ বাঁধে । পরবর্ততে অন্দোলনকারিদের ছত্র ভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস , রাবার বুলেট , গরম পানি সব কিছুর ই ব্যবহার করে । পরবর্তীতে আমারা যা দেখেছি তা সত্যি লজ্জাজনক । আন্দোলনকারি নামধারি কিছু উচ্ছৃখল যুবক গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের বাসভবনে ভাঙ্গচুর অগ্নিসংযোগ সহ নানা রকম হামলা চালায় । পরবর্তীতে উপচার্য মহোদয় অভিযোগ করেন তার প্রান নাশের জন্যই নাকি এমন হামলা । অন্দোলনকারিদের দাবী সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এটা বাস্তবায়ন করবে সরকার । এখানে উপচার্যের কিছুই তো করার নাই । তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন কারা কি উদ্দেশ্য রাতের অন্ধকারে এই হামলা করলো । কারা বলছি এই কারনে হামলাকারিদের প্রায় সবার ই ছিল চেহারা ঢাকা । যেহেতু অন্দোলনকারীদের এই দাবি ন্যায় সঙ্গত তাই কোন একটি মহল তাদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবির আন্দোলনকে বাঞ্চাল করার জন্যই এই ধরনের জঘন্য হামলা চালিয়েছে । আমাদের সংবিধানের শর্তমতে রাষ্ট্রের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য শিক্ষা চাকরি সব ক্ষেত্রেই কিছু বিশেষ সুবিধা অবশ্যই পাবে তবে সেই সুবিধা অবশ্যই বৃহৎ গোষ্ঠিকে পিছিয়ে আনার কোন পদ্ধতি হতে পারে না । আজ সাধারন চাকরি প্রত্যাশী ও ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের যেই ন্যায় সঙ্গত দাবি নিয়ে রাজপথে অবস্হান করছে তা অবশ্যই সরকার সহ সমগ্র জাতির সমর্থন যোগ্য । তাই আমারা দেশের সাধারন মানুষ অবশ্যই আশা করবো সরকার নিজ বিবেচনায় তাদের এই দাবির প্রতি সদয় হবেন এবং আন্দোলনকারিদের কাছে ও প্রত্যাশা তারা যোগ্য নেতৃত্বের সহায়তায় প্রয়োজনে তাদের আন্দোলন করবেন যাতে জনগন তথা রাষ্ট্রের কোন জান মালের ই ক্ষতি সাধন না হয় ।








সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×