"সপ্তর্ষিমণ্ডল
"
জিনাত নাজিয়া
আমরা সাত ভাই-বোন । আমরা চার বোন তিন ভাই।আমার আগে বড় ভাই আর পরে ছোট দুই ভাই। দু'জন মাত্র এক বছর দশ মাসের ছোট বড়। একজন আমিরুল ইসলাম অন্যজন মনিরুল ইসলাম। আমরা ওদেরকে আদর করে ডাকতাম, আমু আর মনু। একসাথে ঘুমাত,একসাথে ঝগড়া করত, বাবার হাতে মার ও খেত একসাথে। যে কেউ ভেবে নিত এরা জমোজ ভাই।আমার বাবা আমাদের সাত ভাই-বোনদের নাম দিয়েছিলেন "সপ্তর্ষিমন্ডল"।
এদের দু'জনের চরম দূষ্টুমি ছিলো স্কুল ফাঁকি দেয়া। এটা মা,বাবা, বড় ভাইয়া কেউ ছাড় দিতেন না। প্রচুর মার খেত। মারের থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারতাম না,বিশেষ করে মা,বাবার থেকে। আমার ভাইয়া ছোট বেলায় আমাকে অনেক ভালো বাসত। আমার সব আবদার রক্ষা করতে চেষ্টা করত। সেই ভাইয়া যখন ওদের দুইভাইকে মারতে যেত,কেউ থামাতে না পারলেও শুধুমাত্র আমি গিয়ে সামনে দাঁড়ালে ভাইয়া ওদের ছেড়ে দিত। ওরা দুজন তখন আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করত। তখন আমার মনে হতো, তিনটা ভাইই আমাকে খুউব পছন্দ করে।
তারপর সবার সংসার হবার পরও এরা দু'জন আমার সাথে খুব ক্লোজ ছিলো। আটবছর আগে হঠাৎ ২০১৭ সালে দু'জনের বড়জন অর্থাৎ আমু মাত্র বায়ান্ন, পঞ্চান্নের মাঝামাঝিতে এসে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেল। খশে পরলো আমার বাবার প্রিয় "সপ্তর্ষি মন্ডলের" প্রথম নক্ষত্র। মা-বাবা গত হয়েছিলেন অনেক আগেই। প্রস্তুত ছিলাম না আমরা। জানি মৃত্যু খুব কঠিন একটা শব্দ,কিন্তু তার চেয়েও কঠিন হচ্ছে- ছোট ভাইয়ের মৃত মুখ। এটা সহ্য করা কত যে কষ্ট যার না হয় তাকে হয়তো বোঝানো যাবেনা।
ছোট ভাই মনুকেও আমুর অকালে চলে যাওয়াটা সহ্য করতে হয়েছিল কঠিন এক বেদনায়।
তারপর থেকে মনুর মাঝেই আমুকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করতাম। সপ্তাহ না যেতেই ফোন করে অনেক সময় ধরে দুষ্টুমি,আর গল্প করা ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চাদের খুব প্রিয় 'ছোট মামা' খুনশুটিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখত। কখনো ওর ভিতরের কষ্ট কাউকে বুঝতে দিতনা। গত ২০ জানুয়ারি বেলা বারটায় আমি ওর সাথে কথা শেষ করে গোছলে গেলাম। জানালো, ওর কাশি হয়েছে। ওকে একটু ওষুধ, আদা চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বললাম, না কমলে ডাক্তার দেখিয়ে নিস। ইয়া আল্লাহ! পরদিন সকাল বেলা খবর আসলো মনু আই সি ও তে। দৌড়ালাম হাসপাতাল, পরদিন লাইফ সাপোর্ট এ। ২৩ শে জানুয়ারি সকালে এই ভাইটা ও আমাদের কাঁদিয়ে চলে গেলো ওপারে। কিভাবে সহ্য করবো পর পর দুটি ছোট ভাইয়ের মৃত্যু জানিনা। সবাই দোয়া করবেন আমরা ভাই-বোনরা যেন ওদের দুই ভাইয়ে মৃত্যু কষ্ট যেন সইতে পারি। আল্লাহ যেন ওদের বেহেশত নসিব করেন,আমিন।
জিনাত নাজিয়া।
২৬-১-২০২৫.
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩