আমি একবার আমার একটি লেখা কবিতা নিয়ে জনৈক বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। মনের কোণে সুপ্তবাসনা যদি কিছু নগদ ত্যাল পাওয়া যায়। কারন আর পাঁচ দশজনের জনের মত আমিও টাটকা প্রশংসা পেলে খুশি তে গদো গদো হয়ে যাই।
কবিতা হাতে পাবার পর আমার বন্ধু কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে কবিতা পাঠ করলো। এরপর আমার হাতে কবিতা খানি ফেরত দিয়ে তার বালিশের নীচ থেকে মোটা একটা বই বের করল- নে আমার প্রথম কাব্য গ্রন্থ, "ছায়া নারীর নিতম্ব বৃত্তান্ত"। সর্বনাশ, আমাকে এখন ওর কবিতা সমগ্র পড়তে হবে?
আমি আমার কবিতা নিয়ে ওর কাছে গিয়েছি বলে নিজের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত হলাম। ।ও নিজেও তোঁ আমার মত বাথরুম পোয়েট। সেখানে ওর কিবা এমন ক্ষমতা আছে আমার কবিতা মূল্যায়নের? তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, এর পর থেকে দেখাতেই যদি হয়, ভালো কাও কেই দেখাব।
পরের অভিজ্ঞতার কথা বলি। এক কবিতা পাঠের আসরে পরিচয় হল নামকরা এক কবির সাথে। কবির হেংলা পাতলা গরন, চেহারা লম্বাটে, ক্লিন সেভ, গাত্র বর্ণ শ্যামলা। ভাল করে তাকালে বোঝা যায় তিনি হাল্কা লক্ষি ট্যারা। দাঁত ভাংগা বাংলা উচ্চারণ করেন, শুনলে মাথা টন টন করে।
শোন ,তোমরা এখনকার ছেলেরা চাইলেও কবি হতে পারবেনা। বড় ক্রিত্তিম তোমাদের সময়, বড় সস্তা তোমাদের মানসিকতা! শোকেসের প্লাস্টিক অক্টোপাসে লুটেপুটে পরে তোমাদের গ্যাস্ট্রিক হৃদয়। প্রকৃতিকে তোমরা আহরণ কর ফেসবুক আর মোবাইলে। প্রতিভার কি নিদারুণ অপচয়। আহারে!!!!
তুমি ম্যাগনেলিয়া ফুল দেখেছ?
জী না স্যার।
যে ছেলে ম্যাগনেলিয়া ফুল দেখেনি তার কবিতা লেখার কোন অধিকার নেই।
একবার ভাবলাম জিজ্ঞেশ করি- ম্যাগনেলিয়ার সাথে কবিতার সম্পর্ক কি! তাছাড়া আমার পূর্ব পুরুষের কেউতো মালিও ছিলনা। পরে ভাবলাম এত বড় কবি, তাকে ঘাঁটানোর কি দরকার?
এরপর অনেক ভয়ে ভয়ে আমার একখানি কবিতা তার হাতে তুলে দিতেই, তিনি আগ্রহের সাথে পরা শুরু করলেন । পড়া শেষে পকেট থেকে একটি কলম বের করে সমানে আমার কবিতার ওপর কাটা ছিটা করলেন, এক কথায় যাকে বলা হয় এডিট।এডিটিং ভার্সন হাতে পেয়ে আমি আতকে উঠলাম। প্লাস্টিক সার্জারির পরে যেটা হয়েছে সেটা আমার কবিতা না, অন্য কারো।মনের ভেতর জিদ চেপে গেল। ভাবলাম যে করেই হোক আমার লেখা দিয়ে এই বিখ্যাত কবির মন জয় করবই।
বিপুল আগ্রহে রাত দিন নষ্ট করে একের পর এক কবিতা লিখতে লাগলাম এবং তার কাছে দিতে শুরু করলাম। কিন্তু আমার সকল প্রতিভা খরচ করে লেখা কবিতা গুলো যতই তার কাছে দিয়ে আসি, ততই তিনি তার ওপর কলম চালিয়ে আমার হৃদয় খতো-বিক্ষত করেন। আমি বুঝিনা কি করলে তার মন জয় হবে? শেষে একটা বুদ্ধি বের করলাম।
একদিন কবি জিবনানন্দদ দাশের একটা কবিতা হাতে নিয়ে তার কাছে গিয়ে নিজের কবিতা বলে চালিয়ে দিলাম এবং বললাম স্যার কেমন হয়েছে কাইন্ডলি দেখবেন? তিনি এবার পুরো কবিতাটা আবারো মনোযোগের সাথে পরলেন এবং যথারীতি সেই কবিতার ওপর সমানে কলম চালিয়ে গেলেন। আমি জিবনানদ দাশের কাটা ছেড়া কবিতা হাতে নিয়ে মনের আনন্দে বাসায় ফিরলাম।
পাদটীকাঃ
অনেক পুরনো দিন থেকে উঠে নতুন শহরে,
আমি আজ দারালাম এসে।
চোখের পলকেতবু বোঝা গেল জনতা গভীর তিথি আজ,
কোন বেতিক্রম নেই মানুষ বিশেষে।
(জীবনানন্দ দাশ)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২৮