আমি হাসু মামার ঘরে ঢুকতেই দেখি মামা উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশের ওপর দু হাত পাখার মত মেলে কোন এক অজানা চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন। তার চোখ দুটি বন্ধ, ডান পাঁশে কোলবালিশ। দাঁড়ি সম্পদেরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে এই কয় দিনে। আজ মামার বাসায় আসলাম প্রায় দশ দিন পর, অনেকটা তাড়াহুড়া করেই। হাসু মামা মানব সম্পদ বেবস্থাপনার ওপর পি এইচ ডি করেছেন বছর খানেক হোল। শোণা যায় বাজারে নাকি মাস্টার্স পাশ বেকারের আনাগোনা প্রচুর। কিন্তু পি এইচ ডি করেও যে পুরো পুরি কর্মহীন থাকা সম্ভব, হাসুমামা তার জলজ্যান্ত প্রমান।
নানা অবশ্য অনার্স এর পরপর হাশু মামাকে তার ইউকে প্রবাসী বন্ধুর কাছে পাঠাবার জন্য বদ্ধ পরিকর ছিলেন। নানার ইচ্ছা ছিল ইউকে তে পড়ালেখার পাসাপাশি মামা সেখানে তাদের অর্ধেক বেবসা দ্যাখা শোণা করবেন। কিন্তু হাশু মামা এ কাজে কিছুতেই রাজী হননি। তার যুক্তি তিনি যদি বিদেশে চলে যান তবে দেশ তার মত বিশাল এক প্রতিভার হাত থেকে বঞ্চিত হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নানা হাতে নিয়ে ছিলেন হাশু মামার বিবাহ বিষয়ক কর্মসূচি। তের চোদ্দ টা মেয়ে বাছাই এর পর নানা যখন এক অপূর্ব রূপবতী নারীর সাথে মামার বিয়ে ঠিক করলেন, ঠিক তখন মামা সাফ জানিয়ে দিলেন এ বিয়ে হবেনা। নানা মামাকে ডেকে জানতে চাইলেন কারন কি ? মামা বললেন- বাংলাদেশ এর নারীরা অত্যন্ত হিংস্র। একটা পুরুষের সাথে সারা জীবন শান্তিতে সংসার করার মত যতটা যোগ্যতা দরকার তা এদের নেই।
আমি হাসু মামা বলে ডাক দিতেই মামা উহ করে কেমন যেন একটা শব্দ করলেন। আমি আঁতকে উঠলাম। তার মানে মামার সেই সমস্যা কি আবারো শুরু হয়েছে! বলে নেয়া ভাল, মামার কিন্তু কঠিন একটি ব্যাধি আছে। প্রতি এক মাস পর পর তিনি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে চার পাঁচ দিনের জন্য কি যেন ভাবনায় ডুবে যান। যখন ই তাকে জিজ্ঞেশ করা হয় কি হয়েছে? তখনই মামা এই উহ টাইপ শব্দ টা করেন। অর্থাৎ তিনি এই গ্রহে নেই।
হাসু মামা আমার রিপোর্ট টা কি হয়েছে? আমি আবারো বললাম।
এবার মাম চোখ খুললেন। ভাল লক্ষন। তার মানে মামা এ গ্রহেই আছে। তুই আমাকে কি বললি! হাসু ?
আমি সাথে সাথে জিভে কামড় বসালাম! ভুলেই গেছিলাম মামাকে হাসু বলে ডাকলে মামা মাইন্ড করে। তার আসল নাম মীরবহর রাশু। জন্মের পর পর তাকে এই ঐতিহাসিক নামে ভুশিত করেছিলেন আমার নানু। তবে কেন তার জন্ম ইতিহাস চেঞ্জ হল সেই গল্প করা যেতে পারে।
ভার্সিটি তে থাকতে মামা দেশের এক হেভিমেটাল ব্যান্ড এর মেইন ভোকাল ছিলন। একদিন কনসার্ট এ চিৎকার করে গাইতে গাইতে হটাত স্টেজেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলন। জ্ঞান ফেরার পর সবাই আবিষ্কার করলো মামা আর আগের মত কণ্ঠে কথা বলতে পারছেন না। তার গলার স্বর শোনাছছে হাসের মত। সেই থেকে তার নাম হয়ে গেল হাশু। অর্থাৎ হাঁস থেকে হাশু!
ছিঃ মামা আমি তোমাকে হাশু ডাকব কেন! তোমার নাম কি হাশু?আমি বলেছি রাশু! রাশু রাশু রাশু।
কথা ঘোরাবি না খবর্দার।আমি জানি, অগোচরে আমার গলা নিয়ে তোরা সবাই রসিকতা করিস। চুল তোঁ আর এমনি পাকে নি! সব ই বুঝি! যাই হোক, হিটলারের কাছ থেকে আমার কথা বলে এক প্যাকেট মালবোরো লাইট নিয়ে আয়। তারপর রিপোর্ট পাবি । ওঁটা কমপ্লিট।
সত্যি!
এত উত্তেজিত হবার কিছু নেই। আগে যেটা বলেছি সেটা কর।
তাড়াহুড়ো করে হিটলারের দোকানের সামনে গিয়ে দেখি হিটলার নেই। সেখানে বসে আছে তার ভাগ্নে আবুল মাল আব্দুল জব্বার ফালু। হিটলার গিয়েছে টয়লেটে। যাবার আগে ভাগ্নেকে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেছে – ওপর থেকে আজরাইল ও যদি নাইমা আসে,তাও বাকি দিবিনা। যদি দিশ তবে তোর পাছার ভিতর সোজা এই কলমটা হান্দায় দিব। বুঝছিস?
জি।
ভাগ্নে এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। আমি তাকে কোন ভাবেই বোঝাতে পারছি না, হিলটার হাশু মামার একনিষ্ঠ ভক্ত। হাশু মামাকে হিটলার শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়ার থেকে কোন অংশে কম সম্মান করেনা। আতএব মামার কথায় বাকি দিলে তার বাণিজ্যের কোনই ক্ষতি হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আবুল মাল তার সিদ্ধান্তে অটল। সে নিতম্বে কলম ঢোকাতে কিছুতেই রাজী নয়।
অবশেষে আমি মনের বিরুদ্ধে নিজের পকেট থেকেই টাকা বের করলাম। এক প্যাকেট সিগারেট এর সাথে একটা ম্যাচ ফ্রী নিয়ে হাশু মামার কাছে ফিরে এলাম।
মামা ঠিক একই স্টাইলে সেই গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। মামা কে আস্তে করে ডাক দিলাম- মামা তোমার সিগারেট।
মামা নিশ্ছুপ। যেন আমার কথা শুনতে পায় নি । আমি আবারো বললাম রাশু মামা তোমার সিগারেট।
মামা এবার সাড়া দিলেন। শীতল গলায় বললেন সিগারেট টা আমার টেবিলের ওপর রেখে যা। আর ড্রয়ারের ভেতর দ্যাখ তোর ফাইনাল রিপোর্ট । ওঁটা নিয়ে বিদায় হ। আমি একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবছি।
মামার ওপর আমার মেজাজ অত্যন্ত খারাপ ছিল। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার উদাসীন স্বভাবের মামা বোধয় এবারো কাজটা শেষমেশ করেননি। কিন্তু জিনিশটা পেয়ে এখন মনে হচ্ছে মামা আসলেই গ্রেট। এই রিপোর্ট টার ওপর আমার পুরো ইন্টার্নশিপ আটকে ছিল। তাই এটা হাতে পাবার পর আমার ইচ্ছা করছিল আনন্দে জামা কাপড় খুলে মামাকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু সেই কাজ করা গেলনা বলে চুপ চাপ বেড়িয়ে এলাম।
রাস্তায় বেড়িয়ে মনে পড়লো, মামকে বলা হয়নি সিগারেট এর টাকা আমি দিয়ে দিয়েছি। তা না হলে দেখা যাবে, মামার যে উদাসীন স্বভাব হিটলারকে কিছু না বলেই টাকা ধরিয়ে দেবে।
মামা?
আবার কি ?
শোন আমি কিন্তু সিগারেট এর টাকা দিয়ে দিয়েছি। তোমার দেওয়া লাগবেনা।
কেন ?
দোকানে তো হিটলার ছিল না, ছিল ওর ভাগ্নে। হিটলার ছাড়া সে কিছুতেই বাকি দিতে রাজী হছছিলনা.
কোথায় গিয়েছে হিটলার?
হাগু করতে...।
হাগু শব্দটা শুনে মামা হটাত আড়মোড়া ভাংলেন। হাত পা নেড়ে অনেকটা সহজ হয়ে বসতে বসতে বললেন- চেয়ার টা তে বোস। মামা ভাগ্নে কিছুক্ষণ গল্প করি।
আমি অবাক হয়ে চেয়ার টানতে টানতে বললাম- কিসের গল্প?
হাগুর গল্প!
হাগুর গল্প?
হ্যাঁ হাগুর গল্প ।
তুই শুনলে হয়তো অবাক হবি, আমি আজ তিন দিন ধরে এই একটা বিষয় নিয়েই ভাবছি।
মামা কি বলছ এ সব! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
মনে হয় কিছুটা হয়েছে। পুরো ঘটনা শুনলে একটা কনসেপ্ট পাবি।
কি তোমার পুরো ঘটনা, বলতো! আমি মেরুদণ্ড সোজা করে ঝেড়ে কেশ প্রস্তুতি নিলাম ঘটনা শোনার জন্য।
রাতে খেয়ে দেয়ে বই পড়ার পর ঘুমানো আমার পুরনো অভ্যাস সেটা তুই জানিস। সেদিন রাতে হল কি, খেয়ে দেয়ে শুয়ে এক্সসাইটমেনট নিয়ে সেগাল এর একটি গল্প পরছি। এমন সময় একটা ম্যাসেজ এলআর্ট এল। খুলেই আমি হতভম্ব। দেখি কে যেন লিখেছে- আপনার সমস্যাটা কি? মোচড়া মুচড়ি করছেন কেন? হাগু লাগলে ক্লিয়ার করে আসেন।
আমি মামার কথা শুনে হো হো করে হাঁসতে যেয়েও নিজে কে সামলে নিলাম। কারন মামা যদি একবার ভেবে বসে আমি ইয়ার্কি মারছি তাহলে খবর আছে। তাই মুখটাকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বললাম- তারপর?
মামা বললেন - ওই দিন আমি আর এই এসএমএস টা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাই নি। ভাবলাম আজে বাজে কেও হয়তো ফাজলামো করেছে।
পর দিন সকালে ভুলেই গেলাম এসএমএস এর কথা। সারা টা দিন ভাল ভাবে কাটিয়ে রাতে যখন খেতে যাব ঠিক তখন ই দেখি ওই নাম্বার থেকে দ্বিতীয় এসএমএস! এবার কি লিখেছে জানিস?
কি! .
আবার ও কিন্তু আপনার হাগু তে যাওয়ার সময় হয়েছে..জলদি করেন..!
আমি পুরো বোকা বনে গেলাম।.কি এসব! দ্রুত ওই নাম্বার এ ফোন দিতেই দেখি বন্ধ। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার জন্য শেষমেশ ণাম্বার টাই দিলাম ব্লক করে।
তাহলে তোঁ ভালোই হয়েছে। যন্ত্রণার হাত থেকে বেঁচে গেলে।
আরে না। যন্ত্রণার হাত বাঁচিনি বরং ওখান থেকে যন্ত্রণা আরও শুরু হয়েছে। সেই রাত থেকে কেন যেন আমার মাথার ভেতর অবচেতন ভাবেই হাগু ওয়ার্ডটা ঢুকে গেছে । মনে হচ্ছে সারাক্ষন কে যেন ব্রেইন এর ভিতর অনবরত বলেই চলেছে হাগু। হাগু হাগু হাগু হাগু হাগু...... আমার খেতেও ঠিক মত রুচি হচ্ছেনা না। ঘুমতে যাই , ঘুম ও আসেনা না।। বার বার ওই একটাই শব্দ- হাগু । এ কি ভৌতিক কাণ্ড! এখন অবস্থা এমন যে তিন চারটা ঘুমের ট্যাবলেট না খেলে রাতে ঘুম হচ্ছেনা। কি করি বলতো?
এবার আমি একটু মজা করে বললাম- এক কাজ করো মামা হিউম্যান সএল নিয়ে একটা গবেষণা করে ফেল।
এই কথা শুনে মামা হটাত গম্ভীর হয়ে গেল।হয়তোবা আমার রসিকতা তার পছন্দ হয়নি। তাই তিনি বললেন- তুই এখন যা। আমি একা থাকব। আর এসব নিয়ে আপা দুলাভাই কারো সাথে আলাপ করার দরকার নেই।
ঠিক আছে।
আমার ডান হাতে সিগারেট, বা হাতে রিপোর্ট। আজকের আবহাওয়া বেশ চমৎকার, না রোদ না বৃষ্টি।মৃদু ঠাণ্ডা বাতাস শরীরকে প্রশান্তি দিচ্ছে। ছুটির দিন বলে হয়তো রাস্তায়ও কোন যানজট নেই। আমি রিকশায় বসে মেয়ে দেখতে দেখতে বাসায় যাচ্ছি, এমন সময় মামার নাম্বার থেকে এসএমএস আসলো।সম্পুন্ন ইংরেজিতে লিখেছে ,বাংলা করলে যা দারায় তা হোল- ইফাজ তোকে হাগু বিষয়ক যেই কথা টা বলা হয় নি ,এখন বলি। আমার এক বন্ধু আছে মোহাম্মাদ পুর থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। তার কাছে আমি ওই যন্ত্রণা দায়ক নাম্বারটা এনকয়ারির জন্য দিয়েছিলাম। আমি ভাবতেও পারিনি এটা তোর গোপন নাম্বার হবে ! আমার মনে হয়, তুই যে ধরনের ফাজলামো আমার সাথে করেছিস, সেটা বন্ধু বান্ধবের সাথে মানায়, মুরব্বিদের সাথে না। ভালো থাকিশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:১৯