somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ রাতের ঘুম

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত আঁটটা তিরিশ। ঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়েই আবার গীটার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো সজল। ওর মন আজ খুব খুশি কারন যে গীটার টা এখন ওর হাতে সেটার রং সাদা। সাদা রঙের একটা অ্যাকুসটীক গীটারের সখ ছিল ওর বহুদিন থেকেই। কিন্তু এই দেশে তা বিরল হবার কারনে কোন ভাবেই সে সখ পূরণ হচ্ছিলনা।
গীটার টা যদিও কিছুটা পুরন কিন্তু আওয়াজ টা ভারি মিষ্টি। ইচ্ছা করে শুধু বাঁজাতে আর বাঁজাতে। আর তাছাড়া এর টিউন কি, ফ্রেড, ব্রিজ সব কিছু নিরিক্ষা করে দেখেছে ও, কোথাও কোন খুত নেই। এতো সহজেই যে এই জিনিশটা পাওয়া গেছে, সেটা ভাবতেই নিজেকে সৌভাগ্যবান লাগছে ।
সজলের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর নাম প্লাটিনাম। প্রতি মাসে একটা করে হলেও শো আরেঞ্জ করে ওরা। ইতিমধ্যে আন্ডার গ্রাউন্ড ব্যান্ড গুলর কাছে প্লাটিনাম খুব সমীহের বস্তু হয়ে দারিয়েছে।ওদের কনসার্ট করা মানেই শতশত দর্শক আর ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবামের কো-অরডিনেটর দের নজরে আসা। অনেক ব্যান্ড এর ভাগ্য ইতিমধ্যে খুলে গেছে।
লাস্ট কন্সার্টে সজল অবশ্য ঝুকির মধ্যে পরেছিল। একে বারেই সব নতুন ব্যান্ড নেওয়াতে শ্রোতা দের আগ্রহ তেমন একটা ছিলনা। এর মধ্যে আবার রেডভিশন এর সাথে প্রায় হওয়া চুক্তিটা শেষমেশ বাতিল হয়ে যায়। তাই যখনই সে চূড়ান্ত লস প্রজেক্ট হিসেবে এই কন্সার্টটি ধরে নেবে ,ঠিক তখন রাতুল ওকে বেন্সন এন্ড হেজেস থেকে বড়ো একটা স্পন্সর এনে রক্ষা করে।
রাতুল প্লাটিনাম এর ম্যানেজার। কিন্তু সজল ওকে কখনও কর্মচারীর দৃষ্টি তে দেখে না। বরং মানুষ নিজের ছোটো ভাইকে যত টা স্নেহ করে, ঠিক ততটাই রাতুলকে করে সজল। রাতুলই ওকে কনসার্ট এর শেষে প্রান্ত নামের ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, যার কাছ থেকে নাম মাত্র মুল্লে গীটারটা কিনেছে সজল।
তুমি এত সস্তায় গীটার ছাড়ছ কেন?
এটা আমার আর বাঁজাতে ভাল লাগছিলনা তাই।
কোন প্রব্লেম নেই তো?
চেক করে নিন। যদি আপনার কাছে সে রকম মনে হয় তো নেবেন না।

সজলের প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল ছেলেটার চেহারার সাথে কার চেহারার যেন প্রচণ্ড মিল। কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছিল না ও। ছেলেটির চুল উসকো খুসকো, ডান ভ্রুতে রুপালি রিং। দেখেই বোঝা যায় খুব ফ্যাশানেবল। ডেনিম প্যান্ট এর সাথে সাদা টি-শার্ট টাও মানিয়েছে খুব। তবে দুই চোখের নীচে কালি পড়াতে মনে হয়, যেন বহু বছর ঘুমায় না ।
টেলিভিশনে একটা গান দেখে চোখ আটকে গেল সজলের। গীটারস্ট্যান্ড এ গীটার রেখে গান দেখায় মনোযোগ দিলো। সময়ের বুকে বিদায় বাঁশি, যাবে কি বলা ভালবাসি? ভুলে কি গেছ ফেলে আসা দিন, কি করে মেটাই তোমার সে ঋণ। চমৎকার!
যার গান টি এখন টেলিভিশনে বাজছে তার নাম অদ্রি। এই দেশে সংগীত অঙ্গনে উজ্জ্বল একটি নক্ষত্র ছিল। অদ্রির প্রথম অ্যালবাম বের হতেই চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। এরপর একে একে আরও কয়েকটি অ্যালবাম হিট। তরুন তরুনিদের কাছে রীতিমত হার্টথ্রব গায়কে পরিণত হল সে।
অদ্রির মৃত্যু নিয়েও বেশ রহস্য আছে। গুঞ্জন আছে আরেক পপস্টার হৃদির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরেছিল অদ্রি। এই নিয়ে ব্যাক্তিগত জীবনে অনেক অশান্তির মধ্যে যেতে হচ্ছিল তাকে। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারনেই মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকস্থলী ফেটে তার মৃত্যু হয়।
কথায় বলে দুই ফুট রাস্তায় চার ফুট গাড়ী! বিজ্ঞাপনের অবস্থাও তাই! দশ মিনিট গান দেখিয়ে পনের মিনিট অ্যাড। কোন মানে হয়? সজল টেলিভিশন অফ করে দিয়ে আবার গীটার নিয়ে বসলো। ই মাইনর কর্ড ধরে গাওয়া শুরু করলো নিরভানার সেই বিখ্যাত গান- রেপ মি।
সজলের গানের গলা দুর্দান্ত। তাছাড়া টুকটাক মিউজিক কম্পজও করতে পারে। ইচ্ছে আছে ভাল কথা ও সুর পেলে কোন এক সময় অ্যালবাম বের করবে। কিন্তু দেশে এতো নামি সিঙ্গার থাকতে তার গান কি কেও শুনবে! তার বন্ধু সচিও ভাল গাইত। “তোমরাও হবে স্টার” প্রতিযোগিতায় দশম হয়েছিল। কিন্তু অ্যালবাম বের করে একটুও সুবিধা করতে পারেনি।
রাত বারটা। গীটারে মত্ত থাকার কারনে কখন যে এতটা সময় পার হয়ে গেছে টের পায়নি সজল! রুটিন করে প্রতিদিন রাত এগারোটার দিকে ঘুমোনর অভ্যাস ওর। কিন্তু আজ গীটার বিষয়ক অতিরিক্ত উত্তেজনার কারনে ঘুমোতে এক ঘণ্টা দেরি হল।
বাবা মা মিনোসেটায় বেড়াতে যাবার কারনে পুরো বাড়িতে সজল একা। ফাঁকা বাড়ি বলেই হয়তো তার অন্ধকারে শুয়ে নিজেকে বিষণ্ণ লাগছিল। চারিদিকে কোন সারা শব্দ নেই।নিরজনতায় কেমন ভয় ভয় লাগে আবার ভালও লাগে। এই অবস্থায় কি সব আবল তাবল ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমে জড়িয়ে এল তার দুই চোখ।
বৃষ্টির শব্দে যখন তার ঘুম ভাঙল তখন মাঝ রাতে । আধো ঘুম আধো জাগরনের মধ্যেই তার মনে হোল সে বোধহয় স্বপ্ন দেখছে। এমন সময় অনেকগুলো কুকুরের কান্না তার কানে ভেসে এল। কান্নাগুলো করুন এবং অস্বস্তিকরও। কেন কাদছে ওরা? বের করতে চেষ্টা করতে লাগলো সজল এবং একসময় অবাক হয়ে লক্ষ করলো- তার ঘরে গীটার বাজিয়ে কে যেন মিষ্টি সুরে গান গাইছে।
সজল বুঝতে পারছে অদ্ভুত এক সময় বয়ে যাচ্ছে। সে অবচেতন নয় আবার ঠিক যে চেতনা আছে তাও নয়। তার বুক চেপে আসছে, নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। সজল যখন এখান থেকে বেরোতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে ,ঠিক তখনি কেউ সুরেলা গলায় বলে উঠল- এই তো প্রায় ই হয়ে গেছে। আর একটু চেষ্টা করো।
পরিষ্কার গলার স্বর, উচ্চারণও নিখুঁত। সজলের বুঝতে একটুও ভুল হোল না সে এক অচেনা অজানা জগতে আছে। সমস্ত মনোযোগ একদিকে ধাবিত করে সজল চেঁচিয়ে উঠল- আপনি কে? আপনি কে?
গলা দিয়ে সজলের আর কোন শব্দ বের হোল না। কিন্তু তবুও সে শুনল কণ্ঠটি তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে-
এই তো হয়ে গেছে।আর একটু চেষ্টা করো। তা হলেই হয়ে যাবে। আমি তোমাকে সাহায্য করছি। গাও আমার সঙ্গে...... এক দুই তিন
গানের শব্দ বাড়তেই থাকল, বাড়তেই থাকল। সজল নেশাগ্রস্থের মত বিমোহিত হয়ে গেল। তার চোখের ওপর অদ্ভুত অন্ধকার,বুকের ভিতর হা হা করছে তৃষ্ণা। অর্ধচেতন অবস্থায় একটি অদেখা অশরীরী কণ্ঠের সাথে তাল মিলিয়ে একটির পর একটি লাইন গাইতেই থাকল সজল। যেন কত যুগ কত কাল এর মধ্যে পার হয়ে গেছে এবং সে গেয়েই চলেছে, গেয়েই চলেছে, গেয়েই চলেছে!

পাদটীকাঃ অদ্রির ছবিতে চোখ পরতেই শিশুর মত
কেঁদে উঠল প্রান্ত, জ্বলন্ত সিগারেট হাতে চেপে
ধরল- ভাইয়া আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।
নেশার টাকা যোগাড় করতে আজ তোর
শেষ সৃতিটাও বেঁচে দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×