রাহাত লোভী লোভী দৃষ্টিতে সিলভিকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল।ফেরদোস পেছন থেকে চুলে হাত দিয়ে বর্বর হয়ে উঠছিল। সিলভি ওদেরকে আমার শৈল্পিক আত্মার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। কেউ ছুতে পারেনি সিলভিকে, কেউ না। একটা ফর্সা লম্বা ছেলে সামনে থেকে এসে ওকে শতবার দেখল। কিন্তু ছুতে পারলনা। বনভোজনে গিয়েই মাসুমের দুটি হাত ধরেছে সিলভি। কিন্তু কি আজব! বারবার চুমো দিতে গিয়েও মাসুম সিলভিকে ছুতে পারলনা!
অনেক দিন পর সেই পুরনো এলাকায় ফিরছে সিলভি। ওই পুরনো কালভারড, পুরনো আমগাছের পাতা মারিয়ে ঘরে ফেরা। সিলভি যেন অনন্তকাল পর নীড়ে ফিরছে। সিলভি যখন ঘরে ফিরল তখন সকাল। সিলভির চারপাশে গুনগুন করছে আকাশ, মুচকি হাসছে প্রকৃতি। কেমন যেন বদলে গেছে বাসাটি। নীচতলার স্কুল রুম থেকে ভেসে আসছেনা ঢং ঢং ঘণ্টা। কিশোরী বেলার বিন্দু মাত্র চিহ্ন কোথাও নেই।
স্কুল রুমের চৌকাঠে ভেঙ্গে পড়লো জড়তা। বেঞ্চির কাঠ থেকে কিছুটা ঘুনে ধরা সেগুন সিলভিকে তার নগ্ন বক্ষ দেখাল। অবাধ্য জেলের শিকের মত ঘরের চারপাশে শেওলা, ঘাস, লতা পাতা ফেপে উঠেছে নিমিষেই। তবুও সব কিছু তুচ্ছ করে এখানে শ্মশান গাড়ছে এখনও হৃদয়।
দুইটি শালিখ দুইটি কাক নির্ভয়ে গাছের ডালে বসেছিল। সিলভি কে চিনতে পেরে উড়ে গেল সালিখ দুটো, আর কাক দুটো ঘ্রান চিনে নিয়ে সিল্ভিকে ছুতে চেষ্টা করল।
হাটতে হাটতে দুই তলার সেই বারান্দায় থেমে গেল সিলভি। অস্থির বারান্দা মুঠো ফোনে কাটিয়ে দেওয়া রাতে এক কালে কতই না প্রেম দিত। আনন্দে হংশ যুগল তাকিয়ে থাকত এপাশ ওপাশ। সিলভির আহবানে একবার ভোর রাতে এই বারান্দায় ওর নিষিদ্ধ কাপড় কুড়াতে এসেছিলাম। সেই সৃতি সেই সৃতি কাদছে এখনও নরকে। বীভৎস খুনির আঘাতে তিন তিন বার খুন হয়েছে সে। উফ...।।
স্কুল ঘরে কেঁদে উঠল প্রেম। পুনরায় ঠোঁট নাড়ল সালিখ। সহজ সরল বেহুশ দরজাকে নাড়িয়ে দিয়ে একটি ইঁদুর দৌড়ে গেল পাশেই। সিলভি ফিস ফিস করে বলল- অনেক কাল কাছে আসনি, অনেক কাল আমার ফুসফুসে কোন অক্সিজেন ছিলনা। একটু ছুঁয়ে দেবে? হাজার বছর সাধনা করেও যে বিবেক সম্পদ সিল্ভিকে জাগাতে পারেনি, সকালের মিষ্টি বাতাসে ঘুম ঘুম স্বপ্নিল নির্জনতায় সেই সিলভি কতই না অনায়াসে একটি স্পর্শের কাছে বন্দী হয়ে গেল। সেই সিলভি কতই না অনায়াসে আমার হাতে হাত রেখে একটি সুবোধ বালিকা হয়ে উঠল।
আমি সিল্ভিকে আলতো করে একটি আলিঙ্গনের মধ্যে জড়িয়ে অনেক সমুদ্রের স্রোত পার হয়ে হৃদয়ের তীরে ফিরিয়ে আনলাম। সিলভি আমার ভেতরে তাকাল। দেখল আমার হৃদয়ের দুই ভাঁজে যেখানে দেভদাস মার্কা পরাজয় ছিল, সেখানে আজ গৌতম বুদ্ধের প্রতিচ্ছবি। আর উঠা নামা সিঁড়ির পাশে ব্রাশ ফায়ারে নিহত হওয়া বোকা সত্ত্বার ঘুমকে জাগ্রত করছে সম্রাট আশকের পশুপ্রেম।
হটাত টোকা পড়লো দরজায়। আবার আমরা বাস্তবে ফিরে এলাম। ওপাশ থেকে রুবেল মামা জানালো-বিকেলে মিরপুর থেকে আসবে সম্রাট, তার হাতে হকিস্টিক ঝুলবে আগের মতই, ইমেইল এ খবর পেয়ে আসছে সাব্বির। আবার তার বাসায় যেতে অনুরধ করবে সিলভিকে। সংবাদ পেয়ে মিল্কভিটার মোড় থেকে আসবে রুপম মমিনুল আর সাভার থেকে গাড়িতে আসবে সিমকি। হাতে চৌদ্দ ইঞ্চি ছুরি নিয়ে মিনেসটা থেকে আসবে রাহাত। সবাই আমাকে গোল করে ঘিরে আগের মতই প্রশ্ন করবে-
তোর শেষ ইচ্ছা কি?
তোর শেষ স্বপ্ন কি?
আমি কোন উত্তর দেবনা। কেবল আমার লাশের কাছে ধেয়ে আসা ওই পাঁচ জোড়া চোখের সিমানা পেরিয়ে চিৎকার করে বলব-
তোমার স্তনে এতো ঘৃণা কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৫