কেউ ভোট দিতে পারেনি, আমাদের অনেকের তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ ভোট দিতে পারিনি
.
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন নিশ্চয় তুমি ভোট দিতে যাবে
.
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই ভোট
আর দিতে পারলুম না, বছরের পর বছর প্রতিক্ষায় আছি।
.
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে সাথে নিয়ে ভোট দিতে যাবো,
সেখানে বিশাল লম্বা লাইন, নানা রকম প্রার্থীরা ভীড় করে!
.
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর কি তুমি আমায় ভোট দিতে নিয়ে যাবে?
.
একটাও ব্যালেটে সিল দিয়ে, পারিনি কখনো নখে কালি লাগাতে,
.
লাঠি-সোঠা দেখিয়ে দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
.
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভোট-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা পাড়ার ছোট ভাইয়েরা
কত রকম আমোদে ভোট দিয়েছে,
.
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও ভোট দিবো…
.
বাবা এখন বাকরুদ্ধ, আমাদের ভোট দেওয়া হয়নি কখনো,
সেই পিস্তল গুলি, সেই লাঠি-সোঠা, সেই ভোট-উৎসব
আমাদের কেউ কখনো ভোট দিতে দিবেনা!
.
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও ব্যালটের গন্ধ হবে!
.
ভোট দেওয়ার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি পরিত্যাক্ত ১০৮টা ব্যালট বাক্স!
.
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই ক্ষমতার গন্ধ, এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, ভোট দিতে পারবে বলে, কেউ কথা রাখে না!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৯