somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুডুর পার্টনার হারিয়ে গেছে

৩০ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুই মহিলার ঝগড়া শুরু হওয়ার দুই মিনিটের মাথায় দর্শক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে,
.
শুয়ে ছিলাম ৷ 'খানকির ঘরের খানকি' শুনার পর উঠতে গিয়ে দেখি লুঙ্গীর গিট্টু লুজ হয়ে আছে, বিনোদন চলে যাইতেছে সেটা নতুন করে গিট্টু মারার টাইম নাই, হাত দিয়ে পেটের সাথে চেপে ধরে আমিও দৌড়াচ্ছি ৷
.
প্রতিপক্ষের মহিলার মাথা থেকে শাড়ির আঁচল পরে গেছে, সেটা কোমরে বেঁধে নিয়েছে টাইট করে তবে সামান্য পেটিকোট দেখা যাচ্ছে ৷ এখন তাকে প্রকৃত খেলোয়ার মনে হচ্ছে ৷
.
অপরপক্ষও কম যায় না, সে লম্বা লিকলিকে হওয়ায় পেঙ্গুইনের মতো লাফাচ্ছে ৷ ওর গালিতে আর্ট আছে ৷ চুমুদির ভাই চুমুদি, তোর মতো বেইশ্যা আমারে খাংকি বলোস্!
.
ও কদুর আব্বা ৷ কই তুমি ৷ রাখো তোমার ঘাস কাটা ৷ দৌড়ায় আহো ৷ তোমার বেডীরে হাআআংকি বলছে, রাখি মনুর ভাব ৷ কাছাকাছি চলে আসছে হেতী...!
.
মোবাইলটা ব্লাউজের ভিতরে গুঁজে রেখে, ঘরের ভিতরে ঢুকে আর আসে ৷ পরে অাবিষ্কার করলাম চুলায় তরকারি দিয়ে ঝগড়া করতে নামছে ৷ একবার মশল্লা দিয়ে এসে দুটো গালি দিয়ে আবার গেছে লবণ দিতে, আরেকবার আগুনের তাপ কমিয়ে এসেছে ৷
.
মেয়েটা গালির ফাঁকে মুখে পাউডার মেখে এসে মা সীমানা ক্রস করলে তারে এক প্রকার আড়কোলে করে এসে বাসায় রাখার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে ৷ আর কপালের উপর চলে আসা চুল ঠিক করতেছে বার বার ৷ তাকে হেব্বী লাগছে ৷
.
আমরাও জানি কখন এগিয়ে গিয়ে আগুনে পানি ঢালতে হবে ৷ আপাতত দেখতে থাকি পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি, হাংকি পাংকি ৷
.
সোনামনিদের জন্য এগুলো এক প্রকার বালঅ্ শিক্ষা ৷ এগুলো তারা মুখস্ত করে গজলের মতো করে গেয়ে থাকে ৷
.
ইতিমধ্যে কদুর বাপ চলে আসছে ৷ তার মুরোদ জেগে উঠেছে ৷ সে ঘাস কাটার কাচি নিয়ে নেমে পড়েছে কিন্তু সাহস করে নিজের বাউন্ডারি ক্রস করতে পারতেছে না, যখন ই তাকে কেউ পিছন থেকে টেনে ধরলো সে বাউন্ডারি ক্রস করবেই এমন আপ্রাণ গতিতে কসরত করতে থাকলো, এমন সময় চুপিসারে মে বি মেয়েকে বলছে, টাইট করে টেনে ধর্, ছুটে গেলেও বাউন্ডারিতে গিয়ে পরমু ৷
.
জামাইয়ের কাছ থেকে সাহস পেয়ে বউ ঠিকি বাউন্ডারি ক্রস করার এক পর্যায়ে বহুল কাঙ্খিত চুলাচুলি শুরু হয়ে গেছে ৷ হেঁচকা টানের এক পর্যায়ে দুই মহিলা ই মাটিতে পরে গড়াগড়ি খেতে লাগলো এমন সময় আমরাও বুঝেছি আমাদের এগিয়ে যাওয়া এখন সামাজিক দায়িত্ব ৷
.
সবকিছু তো বলা যায় না ৷ ধরে নেন্ ঘন্টাব্যাপী ঝগড়া চলেছে ৷ প্রায় সময় চলে ৷ তারপর শুরু হবে সালিশ নালিশ ৷
.
সালিশে মুরুব্বি মাতব্বররা এসেছে সবাই ৷ সেই মহিলাও যে সকালে শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে নেমেছিলো, এখন ইয়া বড় গোমটা টেনে ঠিক্ দরজার কোণে এসে দাঁড়িয়েছে ৷
.
ঘোমটা আরেকটু টেনে ছোট ছোট আওয়াজে মিন্ মিন্ করে সবাইকে সালাম দিলো, সবাই জোরেশোরে তার জগড়ার মতো করে উত্তর নিলো ৷ তার স্বামী কাচির বদলে লম্বা টর্চ লাইট নিয়ে এসেছে, সালিশ শেষে বাজারে যাবে ৷
.
বিচারে কে জিতলো না জিতলো কিংবা মীমাংসা হলো কি না, সেটা আরেক দিন বলবো, ঘোমটা টানা মহিলাটি আজ সর্দি কাশির উপসর্গ নিয়ে মারা গেলো ৷
.
ভয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না ৷ তার মিথর দেহ পরে আছে ৷ এলাকাবাসীও আগের মতো, কখন এগিয়ে আসতে হবে তারাই ভালো জানে ৷
.
পাশের ঘর থেকে ওম্মারে মা! আমার ভাবি, কত ঝগড়া করতাম বলে এগিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পরলো ৷ তারপর প্রায় একহাতে লাশের সৎকার করলো ৷ এক পর্যায়ে সবাই এগিয়ে এলো ৷
.
কিন্তু মারা যাওয়া মহিলাটির জন্য প্রতিপক্ষের কান্না যেনো থামছেই না ৷ আমি একটু এগিয়ে গিয়ে তার চোখ পরীক্ষা করলাম, টুপ টুপ করে জল পরছে ৷ এটা কেমনে সম্ভব ৷ কয়েকদিন আগে এরা ঝগড়া করে এক বেহাল দশা করতো,
.
মনে হলো তার লুডু খেলার পার্টনার হারিয়ে গেছে ৷
.
তার কান্নার পাশে দাঁড়িয়ে আমি লিটমাস্ টেস্ট করতেছি, এটা সত্যিকারের কান্না ৷ হৃদয় নিংড়ানো ৷ চোখের জলে শাড়ির আঁচল ভিজে ছোপছোপ হয়ে আছে, সেটা দিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে সে আবার কাঁদতে বসেছে ৷
.
একজন খেলার সঙ্গী হারিয়ে যাওয়ার বেদনা কত নির্মম হতে পারে তাকে না দেখলে হয়তো কখনো জানা হতো না ৷
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৪৭
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×