পথে যেতে যেতে কত সমস্যার দেখা পাই। কখনো ছোটখাটো প্রতিবাদ করি কখনো করি না। কিন্তু মন যে খারাপ হয় না তাতো নয়। ভিষন বিরক্ত হই। এত সুন্দর মায়াময় একটা দেশ আমাদের। স্বাধীন দেশের মানুষরা এতটাই স্বাধীন হয়ে গেছে যে নিজেরাই বিভিন্ন ধরণের আইন তৈরী করে একেবারে বাস্তবায়ন করে ফেলে।
অফিস হতে বাসা এবং বাসা থেকে ব্যাংক কলোনী মতিঝিল হেঁটে যেতে যেতে কতবার যে মনে মনে মানুষকে গালি দেই তার ইয়ত্তা নেই । গালি বলতে বলি হায় রে মানুষ তোরার ভিতর অনুভূতি জিনিসটাই হারিয়ে গেছে। মানুষ হবি কবে তোরা। কবে বুঝতে পারবি অন্যদের সুখ সুবিধা ।
এতটুকুন একটা ফুটপাত, তার উপর ছোটখাটো চায়ের টঙ। হেঁটে যেতে যেতে থেমে যেতে হয়। মানুষগুলো চা আর সিগারেট খেতে খেতে চায়ের টঙের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। দূর হতে মানুষ আসতেছে দেখেও কেউ জায়গা থেকে এক চুল নড়াচড়া করে না। ছেলেরা যে যার মত গায়ে ঠেলে অথবা ফুটপাত থেকে নেমে হেঁটে চলে যায়। অথচ কাউকে এক দিনও আমি প্রতিবাদ করতে দেখিনি। কাউকে বলতে শুনিনি যে ফুটপাতের মাঝে দাঁড়িয়েছেন একটু সাইড হয়ে দাঁড়ান। আমি যখন হেঁটে যাই রাগের চোটে পথ থেকে নামি না। দাঁড়িয়ে থেকে থেকে কিছুক্ষণ দেখি। কেউ আমাকে দেখে একটু নড়ে উঠে কিন্তু তার পাশ দিয়ে যেতে হলে আমাকে তার গায়ের সাথে ধাক্কা খেতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই বলি একটু সাইডে যান অথবা সরেন একটু। তখন গিয়ে হালকা সরে।
আমাদের ব্যাংকের পিছনে একটা ফুটপাত আছে, সে ফুটপাতটা গুপিবাগ গিয়েছে। সেখানে দেখলাম পুরোটাই দখল করে হোটেল খুলেছে আর মানুষ সবাই রিস্ক নিয়ে পিচ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আসছে। ছবি তুলেছি। ছবিতেই দেখতে পাবেন কতটা স্বৈরচারিতায় ভরা আমাদের দেশটা। কেউ প্রতিবাদ করে না। কেউ বলে না এ ফুটপাত আমাদের হাঁটার পথ এ আমাদের নাগরিক অধিকার। যারা চা পান করে তারা ফুটপাতে এমনভাবে পা বাড়িয়ে বসে যে তাদের পা আমাদের গায়ে লেগে যাবে। কিন্তু আমাদের দেখেও পা সরায় না। কি আশ্চর্য্য!
অফিস হতে যখন বাসায় হেঁটে ফিরে যাওয়ার জন্য জসীম উদ্দিনের রোডে যাই তখন রাস্তার উপরেই দেখি বিভিন্ন সবজির দোকান। আমি সবজিও কিনি প্রতিদিন। কয়দিন যাবত দেখছি ওদেরকে বসতে দেয় না। গাট্টি বোচকা নিয়ে এখানে সেখানে বসে আছে ওরা। আমি বললাম আপনারা বসছেন না কেনো? ওরা বললো ৩০০ টাকা দিছি তবুও আপা বসতে দিচ্ছে না। আমি বললাম কত টাকা দিতে হয়। প্রতিদিন তিনশ টাকা দিতে হয়। বুঝেন ঠেলা, পুলিশকে কিভাবে আমরা ভালোবাসবো সম্মান করবো। ।
যখন রাস্তা শেষে ফুটপাতের রাস্তায় উঠবো তখন প্রতিদিনই দেখি ম্যাক্সিগাড়িগুলো ফুটপাতের একেবারে সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তাতে ফুটপাতে উঠতে সমস্যা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় মধ্য দিয়ে গিয়ে উঠতে হয়। প্রায়ই পুলিশের কাছে বিচার দেই। একদিন নিয়ে যেতে চাই পুলিশকে , পুলিশ বলে আপা ওদের উপরে হাত আছে। আপনারাই বলে তাকে কী বলা উচিত তখন। আরে বদ বেটা পুলিশ ওদের উপরে তো তোরাই মানে তোদের আইন। ওদের উপরের হাত তো তোরাই ভেঙ্গে দিতে পারিস। কেনো তা করিস না। টাকায় পকেট ভরিস তাই না। তারপর ঠেলে ঠুলে নিয়ে গেছি। পুলিশ ভাই ড্রাইভার রে ডাক দিছে এমনি সরি স্যার সরি স্যার বলে গাড়িটা সরিয়ে নে (এ নিয়ে আবারও লিখছিলাম কিন্তু মনের দু:খ যায় না)।
চায়ের টঙ এর কথা একদিন বিচার দিছি। তখন পুলিশ চা খাচ্ছিল। বললাম দেখেন আমরা কত কষ্ট করে ফুটপাত দিয়া হাঁটি । আপনাদের কী কিছু বলার নাই? উনি জবাবে বললেন। আপা ওদের যে কত শাস্তি দেই আমরা । কয়দিন পরপরই মোবাইল কোর্ট ধরে নিয়ে যায় আবার ছাড়া পেয়ে এসে এখানে টঙ বসিয়ে দেয়। তখন আমার সামনেই ধমকধামক দিতে শুরু করে। অথচ পুলিশ ভাই চা সিগারেট খাচ্ছিলো। মনের দু:খ কারে কইতাম, কেউ নাই জনগণের এসব কষ্টের কথা শুনতে।
আমাদের ব্যাংকের অপজিটে আল ছালাদিয়া ঢাকা একটা ভাতের হোটেল ছিলো ভাসমান। কোট টাই পরিহিত ভদ্রলোকরাও এখানে বসে ভাত খায়। হোটেলটা ড্রেনের উপরে। যেখানে তারা ভাত খাচ্ছে, ছালা ঘেঁষেই বেটারা মুত্তে বসে। কেউ কিছু বলে না। হায়রে মানুষ এতটাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন তোমরা । যেখানে খাও হেইখানেই হাগো। এরার নাকে গন্ধ লাগে না । অথচ আমি হেঁটে গেলেই দুর্গন্ধে নাক টিপে হাঁটি।
যে টঙ গুলায় দিনমজুর, পুলিশ বসে চা পান খায়, সেখানে বসে ওরা ঘিয়ের মত কাশ ছেব থুথু ফালায় আর চায়ের কাপ অথবা হাত মুখ ধুয়। কী বলবো জঘন্য হয়ে যায় পথ নোংরা অপরিচ্ছন্ন। এক বেটা এই বড় থুথু ফালাইল আমার সামনে। আমি থমকে দাঁড়িয়ে বললাম। কেনো এখানে থুথু ফেললেন? এই যে আমরা মেয়েরা অনেকেই লম্বা বোরখা লম্বা জামা পড়ে হেঁটে যাই পথে । এই থুথু তাদের গায়ে লাগবে। তাতে নামাজও হবে না। কেনো এমন নোংরা করেন পথকে? সে বললো সরি ভুলে হয়ে গেছে। আমি বললাম প্লিজ একটু সচেতন হউন। পানি যাতে না ফেলে তার জন্য টঙের মালিককে বললাম ভাই আমাদের হেঁটে যেতে অসুবিধা হয় । টঙ যখন দিয়েই দিছেন আমাদের কথা তো আর উঠবেন না। অন্তত এইটুক কাজ করেন, যাতে কেউ পথ নোংরা না করে সে দিকটা একটু খেয়াল রাখবেন। এখন কয়দিন যাবত দেখছি রাস্তায় পানি ফেলে না। যাক এইটুকু কথায় তো কাজ হয়েছে তাই না? তবে কেনো আপনারা পুরুষরা ছোটখাটো প্রতিবাদ করেন না ? কেনো করেন না। দেশটা কার ? যারা জোর দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে তাদের? এসব নিয়ে আরও লিখেছি। কিন্তু মনের কষ্ট ফুরায় না।
ভালো থাকুন সবাই। নিজেরাই একটু একটু সচেতন হতে শিখুন। যেখানে সেখানে থুথু, কিংবা সিগারেটের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, কোকের বোতল ফেলবেন না। হোক না অল্প কষ্ট, যথাস্থানে ময়লা ফেলুন। একজন একজন করেই দেশটা বদলে যেতে পারে। সুন্দর হতে পারে আমাদের দেশ।
হেঁটে যেতে যেতে তোলা ছবিগুলো। মাইনসের সামনে তো আর ছবি তুলন যায় না। তাই সব ছবিই আজ ঝাপসা অথবা অস্পষ্ট। কেবল সমস্যা তুলে ধরার জন্যই তুলেছি। অকে ...বুঝাইবার পারছি
ফি আমানিল্লাহ
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৬