somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লাস পার্টি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কি শুরু হলো ?
আমার একমাত্র মেয়ে স্কুলে যায় , যায় না এই অবস্থা !!
গতবছর ও প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা করে বেতন দিয়ে পার করেছিলাম। এর আগের বছর অন্য একটা স্কুলে দিয়েছিলাম। কি সোনা সোনা বাচ্ছাদের সকাল ৮ টা থেকে নাকি ক্লাস। তাও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু একদিন এই দুধে বাচ্ছাদের ক্লাসে এক শিশু কান্না করছে দেখে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ওই বাচ্চাকে এবং বাচ্ছার অভিবাবক কে খুব ধমক দিয়ে তিরস্কার করেছিল। তা দেখে আমার সোনামণি আর ওই স্কুলের গেট দিয়ে যায় নি প্রায় ৬ মাস, স্কুলটি বাসার কাছেই ছিল তাই এত বিড়ম্বনা। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলো !! আসলে স্কুলে যাওয়ার বয়স ও হয় নি আমার রাজকন্যার। কিন্তু এখন যেই অবস্থা ৩ বছরে বাচ্ছা ভাল স্কুলে ভর্তি না করানো বিশাল সামাজিক মানহানিকর ব্যাপার এবং আমার সোনামণির ডাক্তারের পরামর্শ ছিল স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া কারন আমার রাজকন্যা একটু দেরীতে কথা বলেছে এবং তখনো কথা বোলা স্বাভাবিক হওয়ার পর্যায়ে হলেও আমার মেয়ের দেরি হচ্ছিল এবং তা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক বিড়ম্বনা

যাই হউক ঐ স্কুল বাদ, পরের বছর কাছেই অন্য একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম। মাশা-আল্লাহ, মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় যত তথ্য স্কুল কতৃপক্ষ জানতে চায় অত তথ্য খোদ ইনকাম ট্যাক্স কতৃপক্ষ বা পাসপোর্ট অফিস ও জানতে চায় না। মুল উদ্যেশ্য স্টুডেন্ট এর বাবার ইনকাম কি বা কত ?? যাই হউক , স্কুল থেমে থেমে চলছিল টানাটানিতে। ভোর ৮ টায় ক্লাস শুরুকরা আসলেই বিশাল জুলুম এই কোমলমতি দেবশিশুদের জন্য।অই অবস্থায় যা অভিজ্ঞতা হল তা বিশাল, বিশেষ করে বাচ্ছার মা দের সে কি প্রতিযোগিতা। কে কি শিখল কি পারে , কে কি পারে না , বা আমার সন্তান কেন পারে না তা নিয়ে রীতিমত শিক্ষকদের সাথে পর্যন্ত তুলকলাম কান্ড। বছর গেল , মাশা-আল্লাহ, যাই হয়েছে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, আমার মেয়ে বন্ধু বান্ধব পাচ্ছে, বিশেষ করে কিছু সম্মানিত শিক্ষকের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক হয়েছে। স্কুলে যেতে আগ্রহী এবং নিয়মিত যাচ্ছিল কিন্তু আমার নিষেধের কারনে অন্যান্ন বাচ্ছাদের মত কোন পরীক্ষায় অংশ নেয় নি তাই কোন প্রতিযোগিতাও হয় নি আমার কন্যা বা কন্যার মা’র সাথে। বছর শেষের দিকে কি একটা ক্লাস পার্টি নামক প্রোগ্রামের জন্য টাকা চাইল, দিয়ে দিলাম কিন্তু আমার রাজকন্যা যায় নি !! তা নিয়ে অনেক অভিবাবক ফোন করে আমার স্ত্রিকে বিভিন্ন কথা শোনাল।

এখন সামাজিক সকল স্টাটাস মনে হয় বাচ্ছা কোন স্কুলে পড়ে তার উপরে ভিত্তি করে হয়।কোন বাচ্চার মাকে যদি প্রশ্ন করা হয় –
আপনার বাচ্চা কোন স্কুলে পড়ে ?
উত্তর আসবে - আর বলনা, এত পড়ার চাপ.।।
এতগুলা বই .।।।
এত টাকা বেতন .।।
সারাদিন ওর পিছনে লেগে থাকতে হয়.।।
স্কুলের নাম জানতে কমপক্ষে তিনবার জিজ্ঞাসা করতে হবে।।
বাচ্চার পড়াশোনা এখন অভিবাবকের স্টাটাস এর ব্যাপার হয়ে গেছে বিশেষ করে মায়ের !!
এসব নিয়ে আমার এক শিক্ষিকা বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল, তো সে লিখে পাঠাল ট্যাক্স করে –
‘ দুদিন আগে ছেলে প্রশ্ন করে,মা..তোমাদের ছোটবেলায় আমাদের মতো এতো পড়তে হতো!!!
মিথ্যা বলে কি লাভ?
নারে বাবা এতো পড়িনি।
রাত নটা,দশটা হলে সব সুনসান নিরব হয়ে পড়তো,খেয়েদেয়ে ঘুম।বুঝিয়ে বললাম, এখনতো প্রতিযোগিতা বেশি। না পড়ে উপায় নেই।
৪র্থ শ্রেণি গেল ভর্তি যুদ্ধ নিয়ে,৫ম শ্রেণি সমাপনী যুদ্ধ!!!
ছেলেমেয়েগুলো এই বয়সেই যন্ত্র হয়ে গেছে।পড়....পড়....পড়...!!!
প্রতিযোগিতা শুধু তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই,এই প্রতিযোগিতা এখন ঘরে ঘরে,পাড়ায় পাড়ায়,সম্মানে সম্মানে.......।
পেতেই হবে,টিকতেই হবে, মানসম্মান বাঁচাতে হবে!!!
আরো কতো কিছু।পাশের বাড়ির ছেলেটা সব বিষয়ে নব্বই পেলো।আমারটা পেলোনা।ব্যাস,শুরু হয়ে যাবে হিংসা,দ্বেশ.....শুরু ঘরের ভেতর অশান্তি...বাবা দূষবে মাকে,মা দোষ দেবে বাবার.....
মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পরি।কি হবে,কি করবো???
সবার ভেতর অন্যের ভালো না চাওয়ার প্রবনতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।কারো ক্ষতি হলে,কারো ছেলে গোল্লায় গেলে উপরে হাহুতাশ করলেও ভেতরে ভেতরে বলি খুব হয়েছে।এটাই হওয়া ঠিক ছিল!!!
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়েই করছি আমরা এসব।
মঙ্গল হোক সব ছেলেমেয়েগুলোর।প্রত্যাশানুযায়ী ফলাফল হোক সবার।অনেক কষ্ট করেছো সবাই।এবার ঘুরে আসো যেখানে মন চায়!!!!”

যাই হউক, আসল কথায় আসি- এই বছর আবার ভর্তি করানো হল - বছর গেল বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পার করে বছর শেষ হতে লাগল । একদিন আমার কন্যার মা’র বয়ানে শুনেছি এক মা নাকি ক্লাস টুর এক শিশুকে কি একটা পরীক্ষায় অন্য মেয়ের ছেয়ে কম মার্ক্স পেয়েছে তাই স্কুলের বারান্দায় সে কি মারধোর করল। ব্যাপারটা খুবই বিশ্রী এবং সাথে সাথে ঐ বাচ্ছা মেয়েকে শাসাচ্ছিল তোর জন্য মাসে কত খরচ করি জানিস ?? একি একটা অবস্থা !!



যাই হউক বেতন ভাতা সব দেওয়া হচ্ছে নিয়ম মত , স্কুল কতৃপক্ষ খুশি, তো কয়েকদিন আগে সেই ক্লাস পার্টির নামে আবার টাকা চাইল, দিলাম এবং গতকাল সেই ক্লাস ক্লাস পার্টি হোয়ে গেল !! আমার মেয়ের মা তাদের সপমুর্ন প্রোগ্রাম ভিড়িও করে এনেছে আমি দেখব বলে ! তো ওদের নাচানাচির ভিডিও এনে আমাকে দেখালো। একটা ছেলে মেয়ে ও কোন শালীন গানের সাথে পারফর্ম করে নাই। কেউ সাকি সাকি, কেউ দিলবার দিলবার, কেউ আবার এ ধরণের উগ্র টাইপের হিন্দি গানের সাথে নাচছিলো, আর Expression?? ...
দারুণ সব নাচানাচি দেখে আমিও কিছুটা বিশ্বয় প্রকাশ করলাম এবং কিছু ভাবি মহলের নৃত্যের আকর্শনে একটু আধটু সুনাম করতেই আমার স্ত্রীর তিরস্কার শুনতে হলো। যাই হউক কয়েকজন ভাবি নাকি আবার ফরমায়েশ দিয়েছে এইসব ভিড়িও তাদেরকে যেন দেওয়া হয়। আজকে সকালে একজন ভাবি বাসায় আসলেন ভিডিও নেওয়ার জন্য, আর আমি তখন তিভিতে ক্যাবল কানেকশনের মাধ্যমে মেমোরি থেকে অই নাচানাচি দেখছিলাম। ভাবির নাচের প্রশংশা করছিলাম আর আমার স্ত্রির বড় বড় চোখ দেখছিলাম লুকিয়ে। এক পর্যায়ে ভাবিকে বলছিলাম এগুলি বাচ্চাদের কে মানায় না, ওদের কে ছড়া গান শেখান, ওইগুলি ওদের কে মানায়। রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত অনেক সুন্দর সুন্দর গান আছে আমাদের দেশে, ওইগুলি শেখান.. আমার কথা উনার ভাল্লাগে নাই, উল্টো বিরক্তই হয়েছে। তাতে আমি কিছুই মনে করি নি, কারন এই ব্যাপারটা এখন অহরহ চলছে। স্কুল কলেজের কোন ফাংশনে এখন আন্ডা বাচ্চা পোলাপান থেকে শুরু করে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা সবাই এখন এসব নোংরা গানের সাথে নোংরা অশালীন নাচের প্র্যাকটিস করে, টিচাররাও দেখে, বাহবা দেয়, তাদের কাছে ব্যাপারটা নরমাল। এই যে আমি এর বিপক্ষে পোস্ট দিলাম, এইডা এবনরমাল! এই পোস্টে এসে ও অনেকে হাহা রিএক্ট দিবে, উল্টা থিউরি দিবে... আমার তাতে কিছু যায় আসে না!! বিয়ে বা যে কোন অনুষ্ঠানে এখন এসব নোংরামির চর্চা হয়, সেখানে আপনি যদি খাঁটি বাংলা গানের সাথে পারফরম করেন আপনি হয়ে যাবেন ক্ষ্যাত, ব্যাকডেটেড!! তাও ভালো, যেই আধুনিকতায় নোংরামি আছে, সেই আধুনিকতার চেয়ে ব্যাক ডেটেড হওয়া অনেক মানসম্মত।

“ তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো " - নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে পৃথিবী যে এতটা বদলে যাবে এটা নেপোলিয়ান বুঝতে পারেননি। বুঝতে পারলে বলতেন, তুমি আমাকে একটি "সুশিক্ষিত" মা দাও.....
এখনকার শিক্ষিত মা’দের প্রতিযোগিতা দেখে সত্যিই অতংকে থাকি ! আমরা বাচ্চাদের সবসময় বলে যাচ্ছি তোমাকে ১ম হতে হবে আর জি পি এ ৫ পেতে হবে। এর মাঝে একবারও বলে থাকি তোমাকে ভালো মানুয হতে হবে। না আমরা কেউ বলি না, আমরা শুধু তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়ে টাকার মেশিন বানানোর চেস্টা করি। আগে ভালো মানুয তারপর অন্য কিছু। আর এভাবেই আমরা আমাদের বাচ্চাদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছি এবং এসব দেখে দেখে তারাও বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। পরিশেষে আবার আমার ঐ শিক্ষক বন্ধুর বলা কথা দিয়েই শেষ করছি –
সবার ভেতর অন্যের ভালো না চাওয়ার প্রবনতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।কারো ক্ষতি হলে,কারো ছেলে গোল্লায় গেলে উপরে হাহুতাশ করলেও ভেতরে ভেতরে বলি খুব হয়েছে।এটাই হওয়া ঠিক ছিল!!!
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়েই করছি আমরা এসব।
মঙ্গল হোক সব ছেলেমেয়েগুলোর।প্রত্যাশানুযায়ী ফলাফল হোক সবার।অনেক কষ্ট করেছো সবাই।এবার ঘুরে আসো যেখানে মন চায়!!!!



সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×